রেলক্রসিং গেট না নামানোয় প্রাণ গেল ১২ জনের

রেলক্রসিং গেট না নামানোয় প্রাণ গেল ১২ জনের

জয়পুরহাটে বাস-ট্রেন সংঘর্ষে বাসের ১২ নিহত, ৫ আহত যাত্রী হয়েছেন। শনিবার সকাল ৭টার দিকে সদরের পুরানাপৈল রেলগেটে গেট না নামানোর কারণে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।নিহত ও আহতদের উদ্ধার করে জয়পুরহাট আধুনিক হাসপাতালে নেওয়ার পর গুরুত্বর আহত ৫জনকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।

এদিকে উত্তরা লের রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকার ৮ ঘন্টার পরে রেল চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। জেলা প্রশাসক পক্ষে থেকে নিহতদের দাফন-কাফনের ব্যবস্থা ও আহতদের চিকিৎসার সহযোগিতা করা হচ্ছে।

ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, পার্বতীপুর থেকে ছেড়ে আসা উত্তরা ট্রেনটি রাজশাহীতে যাচ্ছিল। অপরদিকে জয়পুরহাট থেকে হিলি যাওয়ার পথে পুরানাপৈল রেলগেটে লাইনের উপর বাসটি ওঠা মাত্রই ট্রেনটির সাথে মুখোমুখি ধাক্কায় এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।

এসময় ঘটনাস্থল ও হাসপাতালে নেয়ার পথে ১২ জনের মৃত্যু হয়। আহত ৬জনকে উদ্ধার করে জয়পুরহাট আধুনিক হাসপাতালে নেওয়ার পর গুরুত্বর আহত ৫জনকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। পরে গাড়ী সুপারভাইজার জিয়া (৫৫) মৃত্যু হয়। সুপারভাইজার জিয়া হলেন জেলার পাঁচবিবির জিয়ার মোড়ের মৃত মিরাজের ছেলে।

এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ১১জনের পরিচয় পাওয়া গেছে, তারা হলেন শহরের চিত্রাপাড়ার মৃত মোন্ডা আলীর ছেলে রেজাউল করিম (৬০), জেলার পাঁচবিবির আটুল গ্রামের আলতাব হোসেনের দুই ছেলে সানোয়ার হোসেন বাবু (৩০), আরিফুর রহমান রাব্বি (১৮), আটাপাড়ার মৃত মোশারফ হোসেনের ছেলে মঞ্জুরুল ইসলাম নাসিম (২৮), সদরের হিচমী দক্ষিনপাড়ার মৃত মানিক হোসেনের ছেলে রমজান আলী (৩৬), কুঠিবাড়ীর শরিফুল ইসলামের ছেলে আঃ লতিফ (২৯), আক্কেলপুরের চকবিলা গ্রামের দুদু কাজির ছেলে সাজু মিয়া (২৬), ক্ষেতলালের ইটাখোলার মংলার ছেলে সুমন (৩৫), নওগাঁর রানীগগরের বিজয়কান্দির গ্রামের গোড়া মিয়ার ছেলে বাবু (৫৫), টাঙ্গাইলের ভ‚য়াপুরের মাটিকাটা গ্রামের মৃত শুকুর আলীর ছেলে জুলহাস (৬০)।

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সালাম কবির-পিপিএম বলেন, এ ব্যাপারে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। ফায়ার সার্ভিস ও সংশ্লিষ্টরা উদ্ধার কাজ করছে। রেলওয়ের জিআরপি পুলিশকে অবগত করা হয়েছে। তারাও ঘটনাস্থলে এসেছে। তারা প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিবেন।

জিআরপি সৈয়দপুরের এসআরপি সিদ্দিকী তানজিরুল রহমান বলেন, এ ব্যাপারে ঘটনাস্থলে এসেছি, উদ্ধার কাজ চলছে। জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টরা তদন্ত কমিটি করেছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকার পরে দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটে রেল চলাচল স্বাভাবিক করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মোঃ শরীফুল ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত ১২টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ বিষয়টি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। রেলওয়ের জিআরপি পুলিশকে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। স্থানীয় পুলিশ, প্রশাসন এবং ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছেন।

উল্লেখ্য যে, জয়পুরহাটে প্রায় ৫২ কিলোমিটার রেলপথ। এখনো প্রায় ২৫ টি অরক্ষিত রেলগেট মৃত্যুর ফাঁদ হয়ে আছে। এসব অরক্ষিত রেলগেট ও রেলক্রসিং এর গেটম্যানের দায়িত্ব অবহেলার কারণে ২০০৬ সালের ১১ জুলাই আক্কেলপুর বাস-ট্রেন সংঘর্ষে ৪০ জনের মৃত্যু হয়।

তারপরও জেলার বিভিন্ন রেলক্রসিং এ এরকম ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে। দ্রুত অরক্ষিত রেলগেট নির্মাণ করে দায়িত্ব অবহেলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি এলাকাবাসীর।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password