আজ কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন

আজ কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন

আজ মঙ্গবার ১১ জৈষ্ঠ্য বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অন্যতম প্রাণপুরুষ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২২তম জন্মদিন।

সৃষ্টিশীল অনন্য প্রতিভার নাম, কাজী নজরুল ইসলাম। একাধারে কবি, সাহিত্যিক, গীতিকার, নাট্যকার। চলচ্চিত্র অভিনেতা। শিল্পকলার নানান শাখায় ছিল তাঁর অবাধ বিচরণ।

ক্ষণজন্মা এই প্রতিভার জন্ম, ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জৈষ্ঠ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোলের চুরুলিয়া গ্রামে। শৈশব-কৈশোর-তারুণ্যে, জীবনে পরতে পরতে তার, সংগ্রাম। জড়িয়েছিলেন নানা পেশায়।

বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলের যখন আবির্ভাব, তখন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ এ দেশের সাহিত্যে এক বিশাল মহীরুহের মতো অবস্থান করছিলেন। সে সময় খুব কম কবিই রবীন্দ্র প্রভাব এড়িয়ে কাব্যচর্চায় সাফল্য পেয়েছিলেন।

কাজী নজরুল ছিলেন সেই বিরল প্রতিভার একজন, যিনি রবীন্দ্র বলয়ের বাইরে বাংলা কবিতায় এক নতুন যুগের সূচনা করেন। তখন ভারতসহ পৃথিবীর নানা দেশে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠিত ছিল। এমন অবস্থায় নজরুল প্রকৃতপক্ষে গোটা ঔপনিবেশিক ব্যবস্থাকেই চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। এদিক দিয়ে নজরুল একক এবং অনন্য। বিশ্বসাহিত্যে তার তুলনীয় কবি খুব কম। কেউ কেউ কাজী নজরুলের সঙ্গে মার্কিন কবি ওয়াল্ট হুইটম্যান, রুশ কবি মায়াকোভস্কি ও তুরস্কের কবি নাজিম হিকমতের কবিতায় মিল খুঁজে পান। সব মিলিয়ে নজরুল এক বহুমুখী অনন্য প্রতিভা।

নজরুল একদিকে ছিলেন বিদ্রোহী, অন্যদিকে প্রেমিক ও মানবতাবাদী। তার গান জাতিকে জাগরণের পথে প্রেরণা যুগিয়েছে। ইসলামী গানের পাশাপাশি তিনি শ্যামাসঙ্গীত রচনা করেছিলেন। কোথাও উদার মানবতাবাদকে বিসর্জন দেননি। নজরুল সারা জীবনই মানবতার সাধনা করেছেন। তার কবিতা, গান ও গদ্য উপমহাদেশের মানুষকে সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করেছে। একজন সাংবাদিক হিসেবেও নজরুল অনন্য ভূমিকা পালন করেছেন। তার সম্পাদিত ‘ধূমকেতু’ গণমানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করে। ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ কবিতা রচনার জন্য কবি রাজদ্রোহের অপরাধে কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন।

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম বিস্ময়কর প্রতিভা নজরুল কখনই ধন-সম্পদের প্রতি আগ্রহী ছিলেন না। বলা চলে দারিদ্র্য ও সংগ্রাম ছিল তার চিরকালের সঙ্গী। তিনি জগতের দরিদ্র ও বঞ্চিত মানুষের দুঃখ-কষ্ট গভীরভাবে অনুভব করেছিলেন। অসময়ে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার কারণে হঠাৎ করেই তার সাহিত্য সাধনা স্তব্ধ হয়ে যায়। এরপরও তিনি দীর্ঘকাল বেঁচেছিলেন। কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা ও গান ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম প্রেরণা। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কবিকে সসম্মানে ঢাকায় নিয়ে আসেন এবং তাকে বাংলাদেশের নাগরিকত্বসহ জাতীয় কবির সম্মান দেন।

বাংলাদেশে তার অনেক স্মৃতিবিজড়িত স্থান রয়েছে। তার সাহিত্যকর্মের উপজীব্য বিষয়গুলোও অনেকখানি এই বাংলাকেন্দ্রিক। বাংলাদেশে তার স্মৃতিবিজড়িত বেশ কয়েকটি স্থান রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানে সংরক্ষিত হয়েছে। ঢাকায় নজরুল ইনস্টিটিউট, ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে কবি নজরুলের স্মৃতি সংরক্ষণ করা হয়েছে। তারপরও বলতে হয়, নজরুলের স্মৃতিবিজড়িত দুই বাংলায় এখনও তার সঠিক পূর্ণাঙ্গ জীবনী রচিত হয়নি। দুই বাংলায় নজরুল বিষয়ক বহু গবেষক আছেন। তাকে নিয়ে অনেক গবেষণাও হয়েছে ও হচ্ছে। গবেষকরা নজরুলের পূর্ণাঙ্গ ও যথাযথ জীবনীর ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে পারেন। রাষ্ট্রীয়ভাবেও এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। এটা আমাদের দায়িত্ব। মনে রাখা দরকার, নজরুল শুধু বাংলাদেশের সম্পদ নন, তিনি বিশ্ব সম্প্রদায়সহ সমগ্র মানবজাতির সম্পদ। বাংলা সাহিত্যে কবি নজরুলের আবির্ভাব অনেকটা ধূমকেতুর মতো। বলা যায়, সৌর জগতের অতি বিখ্যাত ও সাড়া জাগানো হ্যালির ধূমকেতু। স্বল্পসময়ে মহাকালের কণ্ঠে বিশেষ করে কবিতা ও গানের যে অক্ষয় মালা তিনি পরিয়েছেন তা অমর, অম্লান, চিরভাস্বর, অবিস্মরণীয়।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password