শিক্ষকের কল্যাণে প্রাণে বাঁচলো লজ্জাবতী বানর

শিক্ষকের কল্যাণে প্রাণে বাঁচলো লজ্জাবতী বানর

এক গাছ থেকে আরেক গাছে লাফিয়ে যাওয়ার মাঝে বৈদ্যুতিক তারে স্পর্শ করতেই শক খেয়ে মাটিতে পড়লো বিলুপ্ত প্রজাতির লজ্জাবতী বানর। মধ্যরাত চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার এর মাঝেই আহত অবস্থায় অল্প অল্প করে মৃত্যুর প্রহর গুনছিলো বানরটি। 

তবে এই পথেই বাড়ি ফিরছিলেন এক শিক্ষক। হঠাৎ আবছা আলোয় প্রাণী থেকে দেখতে পেয়ে সামনে এগিয়ে যান। সামনে যেতেই চোখে পড়ে আহত অবস্থায় ব্যথার যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন প্রাণীটি। কোনো কিছু না ভেবেই ওই শিক্ষক প্রাণীটিকে দ্রুত উদ্ধার করে নিয়ে যান নিরাপদ আশ্রয়ে। 

এ ঘটনা নেত্রকোনার দুর্গাপুরের বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে। পৌর শহরের উপজেলা পরিষদ চত্বরে রাস্তার পাশ থেকে রাতে আহত অবস্থায় বিপন্ন প্রজাতির একটি লজ্জাবতী বানর উদ্ধার করেন স্থানীয় দি চাইল্ড প্রিপারেটরি কিন্টারগার্ডেন স্কুলের সহকারী শিক্ষক সাইকুল ইসলাম।

মূলত খাদ্যের সন্ধানেই ঘন অরণ্য ছেড়ে লোকালয় আসছে প্রাণীগুলো। শান্ত ও নিরীহ প্রজাতির এই বন্যপ্রাণী মানুষ সভ্যতায় থেকে দূরে থাকতেই গাছে গাছে চলাফেরা করেন। তবে অনেক সময় আহত ও হিংস্র প্রাণীর ফাঁদে পড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে মানুষের আবাসস্থলে আশ্রয় নেন। বৃহস্পতিবার রাতেও খাদ্যের খোঁজে বেরিয়ে বৈদ্যুতিক শটে আহত হয়ে আর নিজের আশ্রয়স্থলে ফিরতে না পেরে রাস্তায় পড়ে ছিল প্রাণীটি। 

পরে ওই শিক্ষক আহত প্রাণীটিকে উদ্ধার করে রাতেই উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার নাসির উদ্দিনের হাতে তুলে দেন। রাতে প্রাণীটি থাকার জন্য খাঁচা ও খাওয়ার জন্য ফলমূলের ব্যবস্থা করেন তারা। রাত শেষে সকাল থেকেই প্রাণীটি উদ্ধারের খবর প্রশাসনকে জানালে দ্রুতই প্রাণীটির চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। 

প্রাণীটির গায়ে আঘাতের চিহ্ন দেখে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকরা নিশ্চিত করেন বৈদ্যুতিক শট খেয়ে প্রাণীটি আহত হয়েছে। সকাল থেকে বেশ কয়েক ঘণ্টার পরিচর্যা শেষে বিকেলে প্রাণীটি সুস্থ বলে জানান চিকিৎসকরা। পরে বিকেলেই ইউএনও রাজিব উল আহসান প্রাণীটিকে অবমুক্ত করা উপজেলা প্রাণী সম্পদ দফতর ও উপজেলা বন বিভাগের হাতে হস্তান্তর করেন। 

সহকারী কমিশনার (ভূমি) রয়েল সংমার নেতৃত্বে সদর ইউপির ঘন জঙ্গলে প্রাণীটিকে অবমুক্ত করা হয়। 

গত এক সপ্তাহ আগে ৫ই মার্চ সোমেশ্বরী নদীর বালুচরে গাড়িচালক মিঠুন মিয়া আরেকটি লজ্জাবতী বানর উদ্ধার করে। পরে স্থানীয় প্রশাসন ও গণমাধ্যমকর্মীদের সহায়তায় এটিকেও একই স্থানে অবমুক্ত করা হয়। এ নিয়ে এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুটি বিলুপ্ত প্রজাতির লজ্জাবতী বানর বনে অবমুক্ত করা হলো। 

সহকারী শিক্ষক সাইকুল ইসলাম বলেন, ব্যক্তিগত কাজ শেষ করে একটু সময় লাগায় বেশি রাত করেই বাড়ি ফিরছিলাম। বাড়ি ফেরার পথে হঠাৎ উপজেলা পরিষদের চত্বরের রাস্তার মাঝে অন্ধকারে রোড লাইটের অল্প আলোতে কিছু একটা পড়ে থাকতে দেখি। কুকুর ভেবে প্রথমে এড়িয়ে গেলেও কিছুটা সামনে যেতেই প্রাণীটাকে অচেনা মনে হয়। প্রাণীটির সামনে গিয়ে মোবাইলের ফ্লাশ লাইট দিয়ে আহত অবস্থায় একটি প্রাণী পড়ে আছে। তবে গত ৫ মার্চ উপজেলা চত্বরে হুবহু এরকম আরেকটি প্রাণী আগে থেকে দেখায় বুঝতে পারি এটিও বিলুপ্ত প্রজাতির একটি লজ্জাবতী বানর। তাই রাতেই প্রাণীটিকে উদ্ধার করে উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজারকে মোবাইল ফোনে জানাই। পরের রাতেই তার হাতে প্রাণীটিকে তুলে দিয়ে বাসায় ফিরে আসি। যদি প্রাণীটিকে তখন উদ্ধার করা না হতো অন্য কোনো পশুপাখি এটিকে খেয়ে ফেলত কিংবা ব্যথার যন্ত্রণায় এখানেই হয়তো প্রাণীটির মৃত্যু হতো। 

উপজেলা প্রাণিসম্পদ দফতরের উপ-সহকারী কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার চৌধুরী বিডিটাইপকে বলেন, এক গাছ থেকে আরেক গাছে যাওয়ার সময় হয়তো বৈদ্যুতিক তারে শক লেগে এক পাশের আঘাতপ্রাপ্ত হয় প্রাণীটি। প্রাণীটিকে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা করেছি। প্রাণীটির গায়ে ব্যথানাশক ইনজেকশনসহ ক্ষতস্থানে ওষুধ প্রয়োগ করা হয়েছে। পরবর্তীতে প্রাণীটির অবস্থার উন্নতি হলে আগে থেকেই ছেড়ে রাখা লজ্জাবতী বানর মাঝেই এটিকেও অবমুক্ত করা হয়। 

ইউএনও রাজিব উল আহসান বিডিটাইপকে বলেন, প্রাণীটির উদ্ধারের সংবাদ পাওয়া মাত্রই তাৎক্ষণিক চিকিৎসা ব্যবস্থা করেছি। প্রাণীটির গায়ে বেশকিছু ক্ষত চিহ্ন ছিলো। তবে চিকিৎসকরা প্রাণীটিকে সুস্থ করে তোলায় প্রাণীটিকে বনে অবমুক্ত করেছি। এর আগে গত সপ্তাহেও সবার সহযোগিতায় আরো একটি লজ্জাবতী বানর অবমুক্ত করেছি। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রাণীগুলোকে আমার অবমুক্ত করতে পারছি। এভাবে মানুষ এগিয়ে আসলেই প্রাণীগুলোকে রক্ষা আমাদের জন্য আরো সহজ হয়ে যাবে। 

 

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password