শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা হ্যাকারদের পকেটে

শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা হ্যাকারদের পকেটে

ফেনীর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা বরাদ্দ হলেও পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। জেলার হ্যাকার চক্র সুকৌশলে অনেক শিক্ষার্থীর টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।জেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ৮৬ হাজার ৩৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫৬ জনের অভিভাবক হ্যাকিং বা প্রতারণার শিকার হয়ে উপবৃত্তির টাকা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এ যাবত ১২৯ জনের মোবাইলে সন্তানের উপবৃত্তির টাকা জমা হয়নি।প্রতারিতের সংখ্যা এত কম দেখে পুনরায় তথ্য যাচাইয়ে সব উপজেলা দপ্তরে নির্দেশনা দিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নূরুল ইসলাম।

সদর উপজেলার একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, উপবৃত্তি প্রাপ্তি যাচাইয়ে সঠিক তথ্য উপস্থাপন হয়নি। করোনাকালে অভিভাবকরা খবর দিলেও আসতে চান না। ফলে প্রদত্ত তথ্যে কিছু ত্রুটি থাকতে পারে। তবে ধারণা করা যেতে পারে, আনুমানিক ১৫ শতাংশ অভিভাবক হ্যাকারদের প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
 শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তির টাকা প্রাপ্তি প্রসঙ্গে বিরিঞ্চি সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফারাহ দিবা খানম জানান, ভর্তির সময় অভিভাবকের মোবাইল নম্বরটি নির্দিষ্ট ঘরে পূরণ করে দেই। কিন্তু হ্যাকাররা কীভাবে পিন নম্বর জানে বা অভিভাবকের নম্বর জেনে ফোন করে তা স্পষ্ট নয়।

উপবৃত্তির টাকা প্রতারণা প্রসঙ্গে শহরের জিএ একাডেমি প্রথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. গিয়াস উদ্দিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন- উপবৃত্তি সম্পর্কে কাউকে কোনো তথ্য দেবেন না। প্রয়োজনে প্রধান শিক্ষক বা অন্য শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। প্রতারক চক্র অভিভাবকদের উপবৃত্তির টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।সোনাগাজীর দারোগার হাট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শিহাব উদ্দিন লেখে- নগদের তথ্য ও উপবৃত্তির টাকা হাতিয়ে নিতে অভিভাবকদের মোবাইল নম্বরে প্রতারক চক্র ফোন দিয়ে তথ্য চাচ্ছে। কোনো তথ্য না দিয়ে প্রধান শিক্ষক অথবা শ্রেণি শিক্ষকদের কাছে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইল।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জানান, অভিযোগ রয়েছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পাঠানো কোনো কোনো শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির টাকা প্রতারক চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে। চট্টগ্রাম বিভাগীয় দপ্তরের নির্দেশনায় সব স্কুল প্রধানকে বলা হয়েছে অভিভাবকের বক্তব্য নিয়ে তথ্য দিতে। যে তথ্য হাতে এসেছে তা যাচাইয়ে পুনরায় তথ্য সংগ্রহ করে নিশ্চিত হতে বলা হয়েছে।তিনি বলেন, গ্রামাঞ্চলে অনেকে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টকে না বুঝে পিন নম্বর দিয়ে দেন। এতেও প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।জেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তা বলেন, প্রতারক চক্র রোধে নগদ মোবাইল ব্যাংকিং কর্তৃপক্ষের প্রচারণা সাধারণ মানুষের চোখে পড়ছে না।

নগদ মোবাইল ব্যাংকিংয়ে উপবৃত্তির প্রতারণা প্রসঙ্গে থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিস লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক মো. শাফায়েত আলম বলেন, প্রতারণার বিষয়টি নগদ কঠোরভাবে দেখছে। ইতোমধ্যে ফরিদপুর জেলা থেকে তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। গোয়েন্দা সংস্থা এ বিষয়ে কাজ করছে। তবে প্রতারণার এমন চিত্রের জন্য তিনি অভিভাবকদের অসচেতনতাকেও দায়ী করেছেন।জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের মনিটরিং কর্মকর্তা আনোয়ার পারভেজ জানান, চার কিস্তিতে উপবৃত্তির টাকা সরকার দিয়ে থাকে। ফেনীর ৫৭৬টি স্কুলে বছরের প্রথম তিন মাসে উপবৃত্তি বাবদ ২ কোটি ৮৯ লাখ ৪৩ হাজার ২৭২ টাকা ইতোমধ্যে বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা প্রতি তিন মাস অন্তর ৪৫০ টাকা এবং প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা ২২৫ টাকা করে উপবৃত্তি পেয়ে থাকে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password