ভয়ঙ্কর রূপ নিয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় রিমাল! বাংলাদেশের দিকে আরও এগিয়ে এসেছে ঘূর্ণিঝড় রিমাল। ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে বরগুনায় ডুবে গেছে রাস্তা-ঘাট। রেমালের প্রভাবে ভেঙে গেছে বাঁধ, প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল। প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় দমকা হাওয়া বাড়ছে। থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। সাগর উত্তাল রয়েছে।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে শনিবার সন্ধ্যার পর পরই বৃষ্টি শুরু হয়েছে পটুয়াখালীর কুয়াকাটায়। উত্তাল বঙ্গোপসাগর, জনসাধারণকে নিরাপদে থাকতে চলছে মাইকিং ও প্রচার প্রচারণা।
ঘূর্ণিঝড় রিমাল। ওমানের দেয়া এই নামের অর্থ বালি। বেশ কিছু দিনের শঙ্কা ও পূর্বাভাসের ইতিটেনে প্রভাব দেখাতে শুরু করেছে এরই মধ্যে। শুক্রবারই পরিনত হয়েছে গভীর নিম্নচাপে। শনিবার আরও ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে রুপ নিয়েছে। সাধারণত বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া বেশিরভাগ ঘূর্ণিঝড়ই দেখা যায় বাংলাদেশের মাটিতে আছড়ে পড়ে। তাই আতঙ্কও বেশি। ক্রমশ শক্তি বাড়িয়ে রেমাল পরিণত হয়েছে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে। এরই মধ্যে উপকূলীয় বিভিন্ন জায়গায় ঝড়ো হাওয়া ও থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে।
উপকূলের ১৩টিসহ ১৮ জেলায় ঘূর্ণিঝড় রেমাল তাণ্ডব চালাতে পারে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী। রোববার (২৬ মে) সকাল থেকে উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, পটুয়াখালীর খেপুপাড়ার দিকে প্রবল শক্তিমত্তায় আঘাত হানবে রেমাল। এটি অতিক্রমের সময় ৮ থেকে ১০ ফুট জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। এ অবস্থায় উপকূলের বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে মাইকিং করছে স্থানীয় প্রশাসন। উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটে সকাল থেকেই হালকা বৃষ্টি হচ্ছে। আকাশে মেঘ রয়েছে।
.ঘূর্ণিঝড় রূপ নেয়ায় ১০ নম্বর বিপদ সংকেত জারির পর বাগেরহাটে প্রস্তুত করা ৩৫৯টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে সাধারণ মানুষকে সরিয়ে নিতে কাজ করছে প্রায় ৫ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবক। এছাড়া পর্যাপ্ত শুকনা খাবার ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। এদিকে ১০ নম্বর বিপদ সংকেত জারির পর মোংলা বন্দরে সব ধরনের কাজ বন্ধ রেখেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে উত্তাল অবস্থায় রয়েছে সাগর। বড় বড় ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে উপকূলে। এতে উপকূলে থাকা ছোট ছোট দোকানপাট ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, ৪-৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে কুয়াকাটার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিগত ঘূর্ণিঝড়ে এতো বড় ঢেউ দেখা যায়নি এ অঞ্চলে। সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপকূলেও রেমালের প্রভাবে দমকা হাওয়া বইয়ে শুরু করেছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, মে মাস উপকূলবাসীর জন্য আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত একযুগে এ মে মাসে অন্তত ৮টি ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা করেছে এ উপকূলবাসী। আবারও মে মাসের শেষ দিকে চোখ রাঙাচ্ছে রেমাল। এরইমধ্যে রেমালের প্রভাবে দমকা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টি পড়তে শুরু করেছে। এ অবস্থায় আতঙ্কে রয়েছে উপকূলবাসী।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলা প্রায় ৬৩ কিলোমিটার বাঁধ রয়েছে। এরমধ্যে ৮টি স্থানে প্রায় ২ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ আছে। ফলে বাসিন্দাদের শঙ্কা এ বাঁধ ভেঙে যদি নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয় আবারও জানমালের ব্যাপক ক্ষতিতে পড়বেন বাসিন্দারা। এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরেও ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এবং বন্দরে অবস্থানরত ১৬টি জাহাজকে গভীর সমুদ্রে চলে যেতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সে নির্দেশ মেনে এখন পর্যন্ত ১৩টি জাহাজ গভীর সমুদ্রে চলে গেছে। বাকিরা পর্যায়ক্রমে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এছাড়া বর্হিনোঙ্গরে অবস্থিত ৪৯টি জাহাজ থেকে পণ্য খালাস বন্ধ আছে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান জানান, এরইমধ্যে ৮৮৫টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেয়া হয়েছে। উপকূলের বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়ার কাজ চলছে। বরগুনায় রাত থেকে থেমে থেমে হালকা ও মাঝারি বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। মাঝে মাঝেই বইছে দমকা হাওয়া। তবে নদীর পানি স্বাভাবিক রয়েছে। জেলায় দুর্যোগ মোকাবিলায় ৬৭৩টি আশ্রয় কেন্দ্র ও ৩টি মুজিব কেল্লা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। একই অবস্থা বরিশাল, পিরোজপুরসহ বিভিন্ন জেলায়। বরিশাল, চাঁদপুর থেকে সব রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ আছে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন