পিটি-6, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর উড়ন্ত কফিন।

পিটি-6, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর উড়ন্ত কফিন।
MostPlay

বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে PT-6 প্রাইমারী ট্রেইনারের যাত্রা আজ থেকে প্রায় ৪০ বছর আগে। একচুয়েলী ১৯৭৭ সাল হতে বিমান বাহিনীতে পাইলট তৈরীতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে বিমানগুলো। এই বিমান গুলোর বেশ বড় একটা কালো অধ্যায় আছে নতুন পাইলটদের তৈরী করতে গিয়ে। এই পর্যন্ত প্রায় ২০টি PT-6 দুর্ঘঠনার কবলে পড়েছে। যার মধ্যে ৬৫% human error এবং ৩৫% material error। অথবা ১৩টি দুর্ঘঠনার জন্য পাইলট দায়ী এবং ৭টি দুর্ঘটনার জন্য দায়ী এর ইন্জিন। যার কারণে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন পাইলট। এর মধ্যে একটি ক্র্যাশে পাইলটরা জীবিত বের হয়ে আসলেও আগুনে তাদের শরীর মাত্রাতিরিক্ত ঝলসিত হওয়ার কারণে ২০ দিন পর মারা যান। এই ১৫ জন পাইলটের মধ্যে ৪ জন স্কোয়াড্রন লিডার, ৩জন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট, ১ জন ফ্লাইং অফিসার, ১জন উইং কমান্ডার, ১ জন পাইলট অফিসার, এবং ৫ জন ফ্লাইট ক্যাডেট।

প্রত্যেক পাইলটের কাছেই কিন্তু প্যারাসুট ছিল, কিন্তু আজ পর্যন্ত বিমান বাহিনীর ইতিহাসে কোন পাইলটই PT-6 থেকে প্যারাসুট ওপেন করে নিজেকে বাঁচাতে পারেননি।আবার অনেক সময় ট্রেইনাররা নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা না করে তার পাশের সিটে বসা নবীন পাইলটদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন। এতে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ট্রেইনার এবং ট্রেইনি দুজনই। নিহত পাইলটদের মধ্যে ৩ জনের বয়স ছিল ৩০ এর উপরে, নবীন ক্যাডেটরা সবাই ছিলেন টিনেএজার এবং বাকি ইনস্ট্রাক্টররা ছিলেন গড়ে ২৫ বছর বয়সী।  প্রতি দশ বছর অন্তর PT-06 এর দুর্ঘটনার- ক্র্যাশ ল্যান্ডিং/ক্র্যাশ এর তালিকা।

১৯৭৭-১৯৮৬ এই দশ বছরে ক্র্যাশ করে ৪টি বিমান যার মধ্যে ২টি বিমান ক্ষতিগ্রস্হ হয়। ১৯৮৭-১৯৯৬ এই দশ বছরে ক্র্যাশ হয় ৬টি PT-6 যার মধ্যে ৫টি বিমানই ক্ষতিগ্রস্হ হয়। ১৯৯৭-২০০৬ এই দশ বছরে ক্র্যাশ করে ৫টি PT-6 যার মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয় মাত্র ১টি বিমান। ২০০৭ থেকে ২০১৬ এই দশ বছরে ক্র্যাশ করে ৫টি PT-6 যার মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৩টি বিমান।

দুর্ঘঠনা প্রতিরোধে গৃহীত পদক্ষেপঃ দুর্ঘঠনা এড়াতে PT-6 বিমানে বর্তমানে আরো দক্ষ এবং বেশী বয়সের ইন্সট্রাক্টর পাইলট নিয়োগ দেয়া হয়েছে নবীন পাইলট তৈরীতে। উপরের তালিকা অনুসারে দুর্ঘঠনায় পড়া ইনস্ট্রাক্টর পাইলটদের বয়স বেশীরভাগই ২৫ বছরের আশে পাশে এবং তাদের সার্ভিস লাইফ ও মাত্র ৪ বছর ছিল।বর্তমানে ৩১ বছরের ইনস্ট্রাক্টর পাইলট এবং ১১ বছরের সার্ভিস লাইফের পাইলটদেরই PT-06 এর ট্রেইনার হিসেবে নিযুক্ত করা হচ্ছে। আর যে ৭টি দুর্ঘটনায় বিমানটি নিজে দায়ী তার মধ্যে ৬টি দুর্ঘটনাই হল ইন্জিন ফেইলিয়র। মাঝ আকাশে হঠাৎই PT-6 এর ইন্জিন ফেইলিয়র হয়। তার উপর PT-6 সিঙ্গেল ইন্জিনের বিমান হওয়ার কারণে অলটারনেটিভ ইন্জিনের উপর ভরসা করার মত কোন সুযোগ থাকেনা। যার ফলে PT-6 এর ইন্জিন ফেইলিয়র মানেই ক্র্যাশ। কিন্তু এতসব বাধাবিপত্তি থাকা সত্বেও প্রতিদিনই ইনস্ট্রাক্টররা নবীন পাইলটদের দেশের আকাশ সীমা রক্ষায় সক্ষম করে তুলার উদ্দেশ্যে উড়াল দেয়।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password