অদৃশ্য সাপের আতঙ্কে যশোরের মানুষ

অদৃশ্য সাপের আতঙ্কে যশোরের মানুষ

একসপ্তাহ ধরে অদৃশ্য সাপ আতঙ্কে ভুগছেন গ্রামবাসী। মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষ কথিত জিনসাপে দশংন করেছে বলে জানিয়েছে গ্রামবাসি। যশোরের চৌগাছা উপজেলার পাশাপোল ইউনিয়নের রানিয়ালী গ্রামে জ্বীন সাপ আতঙ্ক বিরাজ করছে। সন্ধ্যার পর ঘরে উঠছে সেখানকার মানুষ।

জানা গেছে, গত ১ জুলাই গ্রামের আব্দুল হকের স্ত্রী রাবেয়া বেগম (৪০) কে রাতে ঘুমের মধ্যে বিষধর সাপে দংশন করে। সে সময় বাড়ির লোকজন তাকে প্রথমে পার্শ্ববর্তী কালিয়াকুন্ডি গ্রামের রনৌক কবিরাজের কাছে নেয়। তার অবস্থার অবনতি হলে পরের দিন সকালে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় কবিরাজের উপরে উত্তেজিত হয়ে পড়ে এলাকাবাসি।

এ সময় কবিরাজ জানান, রাবেয়াকে জিন সাপে দংশন করেছে। যে কারণে চিকিৎসা দেয়ার পরও তাকে বাঁচানো গেল না। এরপর গ্রামে কথিত অদৃশ্য জিনসাপ আতঙ্কে ছড়িয়ে পড়ে। এ পর্যন্ত গ্রামের স্কুল শিক্ষার্থীসহ অর্ধশতাধিক নারী পুরষকে অদৃশ্য জিনসাপ দংশনের চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

কথিত জিনসাপে দংশনে চিকিৎসা নেয়া বৃষ্টি খাতুন জানান, ‘৮ মার্চ দুপুরে রান্না ঘরে রান্না করছিলাম এসময় হঠাৎই শরীরে ঝিমঝিম করে মাথাঘোরার মতো হলো। এর পরে শরীর জলে যাচ্ছিলো’ বৃষ্টির স্বজনরা জানায় ঘটনা শুনে তাকে প্রথমে গ্রামের এক মহিলা কবিরাজের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। সে হাত চালান দিয়ে দেখতে পায় তার শরীরে বিষ রয়েছে। পরে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।সেখানে চিকিৎসা চলছে।

গৌরচন্দ্র মন্ডল জানায়, আমি মাঠ থেকে বাড়িতে ফিরছিলাম। এসময় হঠাৎই মনে হলো আমার পায়ে কিসে কামড় দিয়েছে। এর পরে আমার শরীরের মধ্যে জালা পোড়া শুরু হয়। আমি কালিয়াকুন্ডি গ্রামের কবিরাজ মুজিদ মেম্বরের কাছে যায়। হাত চালান দিয়ে দেখে আমার শরীরে বিষ রয়েছে। সেখান থেকেই চিকিৎসা নিয়ে বিষ মুক্ত হয়েছেন বলে জানান তিনি।

গ্রামে কথিত জিনসাপের দংশনে যারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছে খাইরুজ্জামানের স্ত্রী ফেরদৌসি বেগম (৪৫), তাহাজ্জুলের স্ত্রী রিতনা বেগম (৪০), ৯ম শ্রেণির ছাত্রী সুফল মন্ডলের মেয়ে পল্লবী মন্ডল (১৫), নারায়ণ চন্দ্র (৪৫), শরজেত মন্ডলের মেয়ে তমা মন্ডল (১৫), কোমর মন্ডলের মেয়ে অনিতা মন্ডল (২০), গৌতম মন্ডলের স্ত্রী রমা মন্ডল (২৫), প্রসেনজিত মন্ডলের মেয়ে মৌসুমি মন্ডল (২০), সুফল মন্ডলের মেয়ে কেয়া মন্ডল (১৬) সহ গ্রামের প্রায় অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষ কথিত জিনসাপের দংশনের পরে গ্রাম্য চিকিৎসকসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য গ্রাম্য চিকিৎসক রিজাউল ইসলাম বলেন, ‘জিনসাপের আতঙ্কে গ্রামের মানুষ রাতে ঘুমাতেও পারছেনা। কখন কার দংশন করে কে জানে! সবায় এখন এই আতঙ্কে রয়েছি। তিনি বলেন, আমার বাড়িতে তিন জনের এই সাপে দংশন করেছে। তাদের যশোর সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে’।

তিনি আরো বলেন, গ্রামের লোকজন মিলে উপজেলার আড়াদাহ গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক হুজুরের কাছে গিয়েছিলাম। তিনিও জানিয়েছেন এটা জিনের কাজ। গ্রাম বন্ধ করতে হবে। এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও কবিরাজ আব্দুল মজিদের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি তো কারো চিকিৎসা দিতে যাচ্ছি না। সবাই আমার কাছে আসছে। আমিই রোগীদের হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।

যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ জানান, সাপে কাটার নামে চৌগাছার ১১ জন নারী পুরুষ বর্তমানে ভর্তী রয়েছেন। তিনি বলেন, রোগীরা সকলেই সুস্থ আছেন। তাদের শরীরে সাপে কাটার কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তারা সকলেই সাপ আতঙ্কে অসুস্থ্য হয়ে পড়েছে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password