ঋণের টাকা তুলতে গিয়েই খুন হন এনজিও কর্মী রাইচরণ

ঋণের টাকা তুলতে গিয়েই খুন হন এনজিও কর্মী রাইচরণ

গোপালগঞ্জে নিখোঁজের ১৪ মাস পর রাইচরণ বিশ্বাস (৪০) নামে এক এনজিও-কর্মীর হত্যারহস্য উদঘাটন করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।

 

গেলো মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটার দিকে জেলার মুকসুদপুর উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের ডাঙ্গা-দুর্গাপুর গ্রামের মাহমুদ হাসান সেন্টুর কলাক্ষেতে মাটি খুঁড়ে রাইচরণের হাত-পা রশি বাঁধা মরদেহের অবশিষ্টাংশ উদ্ধার করেছে সিআইডি।

সিআইডি জানিয়েছে, কিস্তির টাকা তুলতে গিয়ে মাহমুদ হাসান সেন্টুর ক্রোধানলের শিকার হন এনজিও আশা’র ফিল্ড-অফিসার রাইচরণ বিশ্বাস।

সেন্টু তাকে খুন করে মাটির নিচে পুঁতে লাশ গুম করে সেখানে কলাগাছের আবাদ করে।

রাইচরণ জেলার টুঙ্গিপাড়া উপজেলার ভৈরব নগর এলাকার বিশ্বনাথ বিশ্বাসে ছেলে।

এনজিও আশা’র মুকসুদপুর উপজেলা ব্রাঞ্চের ম্যানেজার মো. বাবুল আক্তার জানিয়েছেন, ফিল্ড অফিসার রাইচরণ বিশ্বাস অত্যন্ত বিশ্বস্ততার সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের ক্রেডিট প্রোগ্রামে কাজ করছিলেন। বিগত ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর বিকেল থেকে তিনি নিখোঁজ হয়। বিভিন্ন উপায়ে চেষ্টা করেও তার কোনও খোঁজ না পেয়ে পরদিন ২৪ ডিসেম্বর তিনি এ ব্যাপারে মুকসুদপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

এরপর পেরিয়ে যায় আরও তিন সপ্তাহ। রাইচরণের কোনও খবর মেলে না। একপর্যায়ে ১২ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে রাইচরণের শাশুড়ি শেফালী সরকার মুকসুদপুর থানায় অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি’র সাব-ইন্সপেক্টর গাজী রবিউল ইসলাম জানিয়েছেন, প্রায় ছয় মাস তদন্ত করেও মুকসুদপুর থানা পুলিশ কোনও কূলকিনারা করতে পারেননি। ফলে সাত জুলাই পুলিশ হেডকোয়ার্টারের মাধ্যমে মামলাটি চলে যায় সিআইডিতে। ওইদিনই সিআইডিকে এ মামলার তদন্তভার দেয়া হয়। এর ঠিক তিনদিন পর ১০ জুলাই খুনির বাড়িসংলগ্ন পেছনে ইমারতের পুকুর থেকে রাইচরণের ব্যবহৃত মোটরবাইকটি উদ্ধার করে সিআইডি। দুই দিন পর সিআইডি গ্রেপ্তার করে মাহমুদ হাসান সেন্টুকে (২৮)। সেইসঙ্গে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তার রিমান্ড চাইলে আদালত তা নামঞ্জুর করে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। এরপর  এক মাস ২৮ দিন জেল খেটে জামিনে বেরিয়ে গিয়ে গা-ঢাকা দেয় সেন্টু।

তিনি আরও জানান, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সিআইডি’র এলআইসি শাখা থেকে ভিকটিমের মোবাইল ফোনের আইএমই নম্বর ট্রেস করে জানতে পারে মোবাইল ফোনটি সেন্টুর স্ত্রীর বড় বোন নার্গিস বেগম ব্যবহার করছেন। পরদিনই সিআইডি সেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে সেন্টুর মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলে একপর্যায়ে সেন্টু সবকিছু স্বীকার করে এবং জানায় লোনের কিস্তির টাকা পরিশোধ করা নিয়ে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে সে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে রাইচরণকে হত্যা করে এবং মরদেহ গুম করে। পরে মঙ্গলবার বিকেলে মুকসুদপুর আমলি আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অমিত কুমার বিশ্বাসের নির্দেশে ডাঙ্গা-দুর্গাপুর গ্রামে মাহমুদ হাসান সেন্টু’র কলাক্ষেতে মাটি খুঁড়ে হাত-পায়ে রশিবাঁধা রাইচরণের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ সময় গোপালগঞ্জের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহম্মদ ইউসুফ ও মুকসুদপুর থানার ওসি আবুল কালাম আজাদসহ সিআইসি’র কর্মকর্তারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

তদন্ত কর্মকর্তা গাজী রবিউল ইসলাম আরও জানিয়েছেন, মাহমুদ হাসান সেন্টু’র ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। ঘটনায় ব্যবহৃত হাতুড়ি, কোদাল, ব্যাগের পোড়া অংশ, মোবাইল সেট ও মোটর-বাইকসহ অন্যান্য আলামত উদ্ধার করা হয়েছে। মামলায় সেন্টু জামিনে রয়েছে বিধায় এলাকার চেয়ারম্যানসহ অন্যান্যদের জিম্মায় দেয়া হয়েছে। আগামী ৩১ মার্চ এ মামলার শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। ইতোমধ্যে তার জামিন বাতিলের জন্য সিআইডি’র পক্ষ থেকে আদালতে আবেদন জানানো হয়েছে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password