আমার কানে এখনও বাজে কারও পানি লাগবে?

আমার কানে এখনও বাজে কারও পানি লাগবে?

কোটা সংস্কার আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বৃহত্তর চলচ্চিত্র, আলোকচিত্র, থিয়েটার, গণমাধ্যমসহ দৃশ্যমাধ্যমের নানা শাখার মানুষেরা। ‘দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজ’-এর ব্যানারে দেশে হত্যা-সহিংসতা-গণগ্রেপ্তার-হয়রানির প্রতিবাদ জানিয়েছেন তাঁরা।

বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) রাজধানীর ফার্মগেটে বৃষ্টি উপেক্ষা করে বেশ কিছু দাবি নিয়ে রাস্তায় নামেন শিল্পীরা। ‘ভয়হীন-ন্যায্য-মানবিক মর্যাদার বাংলাদেশ চাই’, ‘সব হত্যাকাণ্ডের বিচার করো’, ‘হত্যা-সহিংসতা-গণগ্রেপ্তার-হয়রানি বন্ধ কর’ স্লোগান দেন তাঁরা। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।

শিল্পীদের সমাবেশে গণমাধ্যমকে অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন বলেন, ‌‘আমার যদি একটু বিবেক থেকে থাকে, মানসিকভাবে সুস্থ থাকার অবকাশ আমি দেখি না। যে দিনগুলো চলেছে সেদিন থেকে আমি শান্তিতে দুচোখের পাতা এক করতে পারিনি। কারণ এই শিশুগুলোর মধ্যে আমার সন্তান থাকতে পারত; আমি ও আপনিও থাকতে পারতাম।’

অভিনেতা সিয়াম বলেন, ‘আমার পক্ষ থেকে আলাদা করে কোনো কিছু বলার নেই। পুরো দেশের মানুষই একই কথা বলছেন। এবং দেশের মানুষ যখন একসঙ্গে কোনো ন্যায্য দাবি রাখে তখন সেটা একটু হলেও মাথায় আনা দরকার যে, সেটা ফেলে দেওয়ার মতো না। আমাদের যে ভাইরা, যে বন্ধুরা মারা যাচ্ছে, মারা গেল—যদি আপনি সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ হন, আপনি রাতের বেলা ঘুমাতে পারবেন না। আমার কানে এখনও বাজে যে ‘কারও পারি লাগবে?’ তো এইটা যতদিন মাথায় থাকবে ততদিন আমরা শান্তি ঘুমাতে পারব না।’

তিনি আরও বলেন, ‘‘আমরা যারা এন্টারটেইনমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করি, আমরা তো মানুষের জন্যই কাজ করি। কোনো ব্যক্তিগত কাউকে দেখানোর জন্য কাজ করি না, দেশের মানুষের জন্য কাজ করি। যে ছাত্র-তরুণরা, যাঁরা আমাদের দর্শক, আমরা যদি তাদের পাশেই না দাঁড়াতে পারি, তাহলে কেন কাজ করি? এর চাইতে অন্যকিছু করা ভালো।

আমার নিজেরও বাচ্চা আছে, আজ থেকে ১০ বছর পর ও এই জানবে, তখন প্রশ্ন করবে—‘তুমি কী করছ?’’’ এদিকে, হুটহাট কাউকে ‌‘রাজাকার’ বলার প্রসঙ্গে মোশাররফ করিম বলেন, ‌‌‘সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ছাড়া কাউকে কোনো কিছু বলা ঠিক নয়।’

দৃশ্যমাধ্যম শিল্পীসমাজের এই সমাবেশে মামুনুর রশীদ, আকরাম খান, নূরুল আলম আতিক, আজাদ আবুল কালাম, হাসান, আজমেরী হক বাঁধন, পিপলু আর খান, অমিতাভ রেজা চৌধুরী, মুনেম ওয়াসিফ, ঋতু সাত্তার, তাসলিমা আকতার লিমা, তানিম নূর, সৈয়দ আহমেদ শাওকী, ওয়াহিদ তারেক, রেদওয়ান রনি, আমিরুল রাজিব, নুসরাত ইমরোজ তিশা, তানজিম ওয়াহাব, জাহিন ফারুক আমিন, তানভীর আহসান, ইয়াছির আল হক, নাজিয়া হক অর্ষা, শঙ্খ দাশগুপ্ত, সাবিলা নূর, নাসিফ আমিন, তাসনিয়া ফারিন, হুমাইরা বিলকিস, শিবু কুমার শীলসহ অনেকে সংহতি প্রকাশ করেন।

বক্তাদের ভাষ্য, ‘সব হত্যাকাণ্ডের হিসাব ও বিচার করা, গুলি ও সহিংসতা বন্ধ, গণগ্রেপ্তার ও হয়রানি বন্ধ, আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবিতে দাঁড়াতে এখানে এসেছি। অবিলম্বে হত্যাকাণ্ডের বিচার ও হত্যা-সহিংসতা-গণগ্রেপ্তার-হয়রানি বন্ধ করতে হবে। যেই ন্যায্যতা, সমতা ও মানবিক মর্যাদার অঙ্গীকার নিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ঘটেছিল স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়, সেই বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার আমাদের সাংবিধানিক অধিকার।’

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password