মাকসুদার পাশে মেয়র-ইউএনও

মাকসুদার পাশে মেয়র-ইউএনও

চটপটে মাকসুদা। প্রতিদিন স্কুলে যেত। মক্তবে পড়ে। গ্রামের ধুলা-বালুতে সাথীদের সঙ্গে খেলা করে। বাড়ির পেছনে মগড়া নদীতে সাঁতার কাটে। সবেমাত্র প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছে। বয়স সাত বছর। কিন্তু এমন দুরন্তপনা শিশুটি নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে।

গত ১৫ দিন পূর্বে কুড়িয়ে পাওয়া খেলার পুতুলের শাড়ি দিয়াশলাই দিয়ে সুতা পুড়ানোর সময় শরীরে থাকা জামায় লেগে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হয় সে। মুহূর্তের মধ্যেই পুড়ে যায় সমস্ত শরীর। চিকিৎসা করার সামর্থ্য না থাকায় শরীরের সমস্ত জায়গায় পচন ধরেছে। এভাবেই মরতে বসেছিল শিশুটি।

এর মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উপজেলার করোনার গ্রুপ থেকে বিষয়টি জানতে পারে উপজেলা প্রশাসন। তাৎক্ষণিক মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ ওই শিশুটির চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন বলে জানিয়েছেন মাকসুদার পরিবার। একই সঙ্গে মদন পৌরসভার মেয়র সাইফুল ইসলাম সাইফও শিশুটির পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তির জন্য মাকসুদাকে নেয়া হয়েছে।

মদন পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের বাড়িভাদেরা গ্রামের দিনমজুর সিদ্দিক মিয়া ও জাফরিন আক্তারের তৃতীয় সন্তান মাকসুদা। মাকসুদা পৌরসভার বীর মুক্তিযোদ্ধা এ রহিম চৌধুরী অটিজম ও প্রতিবন্ধী স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে।

মাকসুদার মা জাফরিন আক্তার বলেন, আমার মেয়ে পুতুলের কাপড় আগুন দিয়ে পুড়ছিল। এ সময় তার জামায় আগুন লেগে যায়। আমি তার সামনে থেকেও রক্ষা করতে পারলাম না। আগুনের পুড়া নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। ডাক্তার বলেছে ঢাকায় নিয়ে যাইতে। আমরা এমনেই খাইতে পারি না। ডাক্তার দেখাব কেমনে? তাই ঘরেই রাখছিলাম। এহন তার শরীরে পচন ধরছে, গন্ধ বের হয়। মা হয়ে এসব আর দেখতে পারছি না। মদনের স্যার আমার বাচ্চারে ঢাকা পাঠাচ্ছেন।

বাবা সিদ্দিক মিয়া বলেন, আমি দিনমজুর। দিনে আনি দিনে খাই। আমার মাইয়াটারে কীভাবে ডাক্তার দেখাব? সরকার আর ধনী লোকেরা যদি সহযোগিতা করেন তাইলে আমার বাচ্চাটা বাঁচানো যাইবে। উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান তোফায়েল আহমেদ জানান, বিষয়টি খুবই মানবিক; এলাকার মানুষ সহযোগিতা করলে হয়তো শিশুটি আবার নতুন জীবন ফিরে পাবে।

মদন হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. মো. সোহেল রানা জানান, এমন সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে ইউএনওর সঙ্গে শিশুটির বাড়িতে গিয়েছিলাম। শিশুটির যে অবস্থা তাকে দ্রুত শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড সার্জারি ইনস্টিটিউট বিভাগে ভর্তির জন্য বলা হয়েছে। সেখানে চিকিৎসা পেলে তাকে ভালো করা সম্ভব হবে।

পৌর মেয়র সাইফুল ইসলাম সাইফ জানান, আমি নিজে বার্ন অ্যান্ড সার্জারি ইনস্টিটিউট বিভাগের পরিচালকের সঙ্গে কথা বলব। আমরা তার পাশে দাঁড়াব। সরকারি ও ব্যক্তিগত যত সহযোগিতা প্রয়োজন হয় তাই করব।

মদন উপজেলা নির্বাহী অফিসার বুলবুল আহমেদ বলেন, আমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম করোনার একটি গ্রুপের মাধ্যমে মাকসুদার অগ্নিদগ্ধের বিষয়টি জানতে পেরেছি। তার চিকিৎসার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে নগদ ৩০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। তাকে শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড সার্জারি ইনস্টিটিউট বিভাগে ভর্তির জন্য আজ নেয়া হচ্ছে। তার চিকিৎসার সব খরচ উপজেলা প্রশাসন বহন করবে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password