হাটহাজারীতে মহাসড়ক ছাড়েনি মাদ্রাসা ছাত্ররা

হাটহাজারীতে মহাসড়ক ছাড়েনি মাদ্রাসা ছাত্ররা

চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে চারজন নিহতের পর থেকে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়ক এখনো মাদ্রাসা ছাত্রদের দখলেই রয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় থানায় এখনও কোনো মামলা দায়ের হয়নি।

শুক্রবার রাত থেকেই এ মহাসড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ ছিল। তবে চট্টগ্রাম-নাজিরহাট রেললাইনে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও শনিবার সকালের দিকে হাটহাজারী স্টেশনে মাদ্রাসার ছাত্ররা অবস্থান নেয়ার পর থেকে রেললাইনে কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করে রেলওয়ে।

শনিবার সকাল থেকে গোটা হাটহাজারী উপজেলায় বিরাজ করছে থমথমে পরিস্থিতি। ঘটনার পর থেকে হাটহাজারী বাজারের সব প্রকার দোকানপাট বন্ধ ছিল। সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে একধরনের আতঙ্ক। 

এলাকায় অদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে উপজেলার নানা স্থানে অতিরিক্ত অর্ধ সহস্রাধিক র‌্যাব ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া বিজিবির ১০ প্লাটুন সদস্য মোতায়েন রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের রাস্তার বিভিন্ন স্থানে টহল দিতে দেখা যায়।

সরেজমিন দেখা গেছে, ওই ঘটনার প্রতিবাদে হাটহাজারী মাদ্রাসার বিক্ষুদ্ধ ছাত্ররা মহাসড়ক কেটে লণ্ডভণ্ড করে মাদ্রাসার সামনে ইট-সিমেন্টের দেয়াল তুলে ব্যারিকেড দিয়ে সেখানে বিক্ষোভ করছে। 

তাছাড়া মহাসড়কের ওপর বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে তারা এখনও সড়কে অবস্থান করছে। চট্টগ্রামের হাটহাজারী-খাগড়াছড়ি সড়কে যান চলাচল এখনও বন্ধ রয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন ওই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করা নাজিরহাট, ফটিকছড়ি, খাগড়াছড়ি ও রামগড়সহ প্রায় ৩০ রুটের যাত্রীরা।

শুক্রবার বিকাল থেকে সড়ক অবরোধ থাকায় খাগড়াছড়ি, নাজিরহাট, ফটিকছড়ির বাসিন্দাদের শহরে আসতে ভোগান্তি হয়। গাড়ি আটকে যাওয়ায় অনেকে পায়ে হেঁটে হাটহাজারী বাসস্ট্যান্ড এসে গাড়িতে ওঠেন। আবার অনেকে ভেতরের রাস্তা দিয়ে (পৌরসভার কামালপাড়া সড়ক) দিয়ে বাসস্ট্যান্ড আসেন।

রাত সাড়ে ১২টার দিকে নজিবুর রহমান নামে বেসরকারি এক কর্মকর্তাকে পরিবারসহ হেঁটে হাটহাজারী থানার সামনে দিয়ে যেতে দেখা যায়। 

তিনি সাংবাদিকদের জানান, শনিবার চাকরিতে যেতে হবে। পরিবার নিয়ে ছুটির দিন গ্রামের বাড়ি ফটিকছড়ি গেছেন। বিকালে হাটহাজারী সড়কের কাটিরহাটে আটকা পড়েন। কিছু হেঁটে আর কিছু গাড়িতে করে এতদূর এসেছেন।

পুলিশের সঙ্গে মাদ্রাসা ছাত্রদের সঙ্গে সংঘর্ষে চারজন নিহতের ঘটনায় কোনো মামলা দায়ের হয়নি বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাটহাজারী সার্কেল) মো. শাহাদাৎ হোসেন। 

এ ব্যাপারে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার এসএম রাশিদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, আমরা দফায় দফায় বৈঠকে করে যাচ্ছি। শুক্রবার দুপুর থেকে আমিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত। আমরা গতকালের সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে কাজ করছি।

এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় সাংসদ ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপির মধ্যস্থতায় হাটহাজারী মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ও চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে থানায় দ্বিপক্ষীয় বৈঠক দফায় দফায় চারবার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে হাটহাজারী মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ দাবি-দাওয়া নিয়ে তেমন কোন ফলপ্রসূ আলোচনা হয়নি বলে দাবি করেছে।  

সমঝোতার অংশ হিসেবে নিহত ছাত্রদের লাশ ময়না তদন্ত ছাড়া প্রশাসন দাফনের অনুমতি দিলেও বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের দাবি অনুয়ায়ী হাটহাজারী মাদ্রাসায় নিহতদের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে ঘটনার দিন শুক্রবার বিকালে মাদ্রাসা ছাত্রদের হাতে অবরুদ্ধ থাকা গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য মো. সোলায়মানকে শনিবার বিকালে কেন্দ্রীয় হেফাজতের নেতারা থানায় স্থানীয় সংসদ সদস্য, ডিআইজি, পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে হস্তান্তর করে। তবে থানা পুলিশের খোয়া যাওয়া অস্ত্রের বিষয়টি ওই বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়নি।

এ সময় ডিআইজি, পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে স্থানীয় সাংসদ ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের সাথে কথা হয়েছে নিহত মাদ্রাসা ছাত্রদের লাশ হাটহাজারীতে না এনে ময়নাতদন্ত ছাড়াই তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

মাদ্রাসা ছাত্রদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট হাটহাজারী মডেল থানার ওসি রফিকুল ইসলামকে প্রত্যাহারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি পুলিশের প্রশাসনিক বিষয়। ওরাই তদন্ত করে দেখবে এবং পরবর্তীতে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।

মহাসড়ক থেকে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা কবেনাগাদ সরে আসবে- জানতে চাইলে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইদরিস জানান, আজ (শনিবার) রাতের মধ্যে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা সরে যাবে। এরপর এ মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হবে।

শনিবার (২৭ মার্চ) সকালের দিকে হাটহাজারী স্টেশনে মাদ্রাসার ছাত্ররা অবস্থান নেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ অবস্থানকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম-নাজিরহাট রেললাইনে কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করেছে বলে জানান রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) চিফ ইন্সপেক্টর মো. সালামত উল্লাহ।

তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম, পাহাড়তলী, হাটহাজারীতে অতিরিক্ত আরএনবি সদস্য পাঠানো হয়েছে। একইভাবে ঝুঁকিপূর্ণ জোন বিবেচনায় বিভিন্ন স্টেশনে সতর্ক অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছে রেলওয়ে পুলিশকে। চট্টগ্রাম-নাজিরহাট রুটে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এছাড়াও ঝুঁকি বিবেচনায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বিভিন্ন রেলস্টেশনে।

প্রসঙ্গত, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমন কেন্দ্র করে শুক্রবার জুমার নামাজের পর ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের প্রতিবাদে দুপুরে বিক্ষোভে নামেন হাটহাজারী মাদ্রাসার ছাত্ররা। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ছাত্রসহ চারজন নিহত হন। পরে ছাত্ররা হাটহাজারী-নাজিরহাট সড়ক অবরোধ করেন।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password