আলাদা ঘরে নারী রোগীকে অনৈতিক মেলামেশার বাধ্য করে বরিশালের এক কবিরাজ

আলাদা ঘরে নারী রোগীকে অনৈতিক মেলামেশার বাধ্য করে বরিশালের এক কবিরাজ

চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে বরিশালের মুলাদী উপজেলায় সোলেমান সরদার নামের এক কবিরাজের বিরুদ্ধে। উপজেলার সফিপুর ইউনিয়নের ব্রজমোহন গ্রামের মৃত নাজেম আলী সরদার তার বাবা। ব্রজমোহন গ্রামের একাধিক প্রবীণ ব্যক্তি জানান, সোলেমান সরদার স্কুল বা মাদরাসায় পড়েনি কখনো। তবুও কবিরাজি করছে চলছে সে। 

মিথ্যা কথার ফাঁদে ফেলে তাবিজ, ঝাড়ফুঁক ও পানিপড়া দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে গ্রামের সহজ সরল মানুষের।এছাড়া নারী রোগীদের চিকিৎসার নামে ফাঁদে ফেলে অনৈতিক কাজে বাধ্য করারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এসব কথা কাউকে জানালে রোগীকে জ্বিন দিয়ে ক্ষতি করার হুমকি দেয় এই নরপশু। এই অভিযোগই করেছে ভুক্তভোগীরা।

সোলেমান সরদার ৩০ বছর ধরে চিকিৎসার নামে এই অপচিকিৎসা চালিয়ে আসছেন।নারী রোগীদের চিকিৎসার জন্য তার ঘরের পাশে রয়েছে আলাদা একটি ঘর। ঝাড়ফুঁক দেয়ার কথা বলে সেখানেই নারী রোগীদের বাধ্য করা হয় অনৈতিক মেলামেশায়।

বাত, আমাশয়, মেহ, ডায়াবেটিস, অ্যাজমা, এইডস, হৃদরোগ, পেটের ব্যথা, গ্যাস্ট্রিক, আলসার, যৌনরোগসহ বিভিন্ন কঠিন রোগ নিরাময়ের সাথে জ্বিন তাড়ানো, মামলার রায় পক্ষে নেয়া, লটারি জয়, জমি বিরোধ দূর করা,স্বামীকে বশ করা, মনের মানুষকে কাছে পাওয়া, স্কুল-কলেজের পরীক্ষায় ভালো ফলাফল, চাকরি পাওয়ার মত বিভিন্ন কাজের শতভাগ সফলতার কথা বলে সোলেমান সরদার তদবির করে আসছে। বিভিন্ন গ্রামে সোলেমান সরদারের লোক আছে। তারা সোলেমান সরদারের কাছে রোগী পাঠায়। এর বদলে তাদের দেয়া হয় মোটা অংকের টাকা। গ্রামের মানুষ খুব সহজে সোলেমানের কথায় বিশ্বাস করে চিকিৎসা ও তদবির নিয়ে প্রতারিত হচ্ছেন আর খোয়াচ্ছেন হাজার হাজার টাকা।

জানা যায়, শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার নলমুরি ইউনিয়নের কোদালপুর গ্রামের কাসেম হাওলাদারের স্ত্রী মাজেদা বেগমের মেয়ে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে লোকমুখে শুনে সোলেমান সরদারের কাছে নিয়ে আসেন। মোটা অংকের টাকা দিয়ে দীর্ঘ চারমাস ধরে চিকিৎসার পরেও তার মেয়ে সুস্থ হয়ে ওঠেনি। এছাড়া উপজেলার সফিপুর ইউনিয়নের ভেদুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা জাকির হোসেন জানান, তিনি তার অসুস্থ স্ত্রী জান্নাত আরাকে নিয়ে সোলেমান ফকিরের কাছে গেলে তাকে জাদুটোনা করা হয়েছিল। ১০ হাজার টাকা নিয়ে দীর্ঘ আড়াই মাস চিকিৎসার পরেও সুস্থ না হওয়ায় ঢাকায় নিয়ে ডাক্তার দেখানোর পরে তার স্ত্রী সুস্থ হয়েছেন।

এসকল বিষয়ে কবিরাজ সোলেমান সরদার ভাষ্য- তিনি ৩০ বছর ধরে এভাবে প্রায় সব রোগের তদবির দিয়ে আসছে। অনেক মানুষ ভালো হয়েছে। কোনো রোগীকে তার এখানে আসতে জোর করা হয় না। তারা উপকার পেলে খুশি হয়ে টাকা দেয়। তাদের টাকা দিতে বাধ্য করা হয় না। আর নারী রোগীদের অনৈতিক মেলামেশায় বাধ্য করার অভিযোগ নিয়ে তিনি বলেন, জ্বিন-ভূতে ধরা বেশিরভাগ রোগীদের ঝাড়ফুঁকের সময় তারা চিৎকার-চেঁচামেচি করেন। হাতের কাছে যা পান তারা ভাঙচুর করেন। এজন্য তাদের আলাদা একটি ঘরে নিয়ে ঝাড়ফুঁক করা হয়। তবে নারী রোগীদের সঙ্গে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।

এসব নিয়ে জানতে চাইলে মুলাদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মাকসুদুর রহমান জানান, তিনি থানায় নতুন যোগ দিয়েছেন। কবিরাজের এসকল বিষয় তার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়ায় কথা বলেন তিনি।আর বরিশাল জেলার সিভিল সার্জন ডা. হোসেন মনোয়ার জানান, তাবিজ, ঝাড়ফুঁক ও পানি পড়ায় যদি সব রোগ ভালো হতো তাহলে হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের প্রয়োজন ছিল না। গ্রামের সহজ-সরল মানুষদের টাকা হাতিয়ে নেয়ার এটি একটি ব্যবসা ছাড়া আর কিছু নয়। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে পারে।’

এখন দেখার বিষয় এই যে জনসাধারণের স্বার্থে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এ ব্যাপারে কতটুকু তদন্ত করবে এবং কি পদক্ষেপ নিবে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password