মুলাদী উপজেলার বিধবা শানু বেগমকে পুনরায় জীবিত করার উদ্যোগ !

মুলাদী উপজেলার বিধবা শানু বেগমকে পুনরায় জীবিত করার উদ্যোগ !

বরিশালের মুলাদী উপজেলার বিধবা শানু বেগমকে (৬৫) জাতীয় পরিচয়পত্রের ডাটাবেজে ‘জীবিত দেখানোর’ উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পাশাপাশি ভোটার তালিকার হালনাগাদে তাকে মৃত দেখানো তথ্য সংগ্রহকারী ও তদারকির দায়িত্বে থাকা দুই শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে মুলাদী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে তদন্ত করে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

রোববার (১০ এপ্রিল) দুপুরে বরিশাল আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দীন এ নির্দেশ দেন। কিন্তু গতকাল সরকারি বন্ধ ছিল। এজন্য কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। আজ সকালে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শওকত আলীকে ওই বিধবা শানু বেগমের সঙ্গে দেখা করে পুরো বিষয়টি জনতে বলি। শওকত আলী দুপুরে ঘটনার বিস্তারিত আমাকে বর্ণনা করেন।

ঘটনার প্রাথমিক অনুসন্ধানে ভোটার তালিকা হালনাগাদে তাকে মৃত দেখানো তথ্য সংগ্রহকারী উপজেলার চরকমিশনার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. নিজাম উদ্দীন ও তখন ওই কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা সুপারভাইজার উপজেলার প্যাদারহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. কবির হোসেনের গাফিলতি-অবহেলা ও উদাসীনতা পরিলক্ষিত হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই দুজন শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ এবং ঘটনা তদন্ত করে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শওকত আলীকে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

তিনি আরও জানান, কেউ জেনে করুক বা না জেনে করুক বিষয়টি দুঃখজনক। জীবিত শানু বেগমকে এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে এটা কারোরই কাম্য নয়। এরইমধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্রের ডাটাবেজে তাকে জীবিত দেখানোর জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ের জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগে শানু বেগমের লিখিত আবেদন পাঠানো হয়েছে। দ্রুত সংশোধনের জন্য বরিশাল আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয় থেকে সব ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে।হয়রানির শিকার শানু বেগম মুলাদী উপজেলার কাজিরচর ইউনিয়নের মৃত মন্নান ফরাজির স্ত্রী।

২২ বছর আগে শানু বেগমের স্বামী মারা যান। তিন ছেলেই বেকার। মেয়েদের অনেক কষ্টে বিয়ে দিয়েছেন। চেয়ারম্যান ও মেম্বারের পেছনে ঘুরে ঘুরে বিধবা ভাতার তালিকায় নাম ওঠে। এরপর ১০-১১ বছর ধরে ভাতার টাকা পাচ্ছিলেন। তবে গত একবছর ধরে বিধবা ভাতার টাকা আর পাচ্ছিলেন না। মনে করেছিলেন সরকার বিধবাদের টাকা দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। দুই সপ্তাহ আগে গ্রামের এক বিধবা নারীর সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, ওই নারী নিয়মিত বিধবা ভাতার টাকা পাচ্ছেন। এরপর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, ২০১৯ সালে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার সময় তাকে মৃত দেখানো হয়েছে।

ভোটার তালিকা হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহকারী চরকমিশনার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. নিজাম উদ্দীন মোবাইল ফোনে বলেন, ‘যতদূর মনে পড়ে হালনাগাদ কার্যক্রমের আগেই শানু বেগম ভোটার তালিকায় মৃত ছিলেন। হালনাগাদের সময় সেটাই উল্লেখ করা হয়েছে। এর বেশি আর কিছু আমার মনে নেই।

ভোটার তালিকা হালনাগাদ তদারকির দায়িত্বে থাকা সুপারভাইজার উপজেলার প্যাদারহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. কবির হোসেন জানান, বিষয়টি অনেক আগের। তাই এখন কিছুই মনে পড়ছে না।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শওকত আলী জানান, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দীন স্যারের নির্দেশে ভোটার তালিকা হালনাগাদে তাকে মৃত দেখানো তথ্য শিক্ষক ও তখন ওই কাজের তদারকির দায়িত্বে সুপারভাইজার শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিধবা শানু বেগমের একটি লিখিত আবেদন ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। নিউজটি প্রকাশের পর শানু বেগমের সঙ্গে ঘটে যাওয়া এমন কাণ্ডে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password