একসঙ্গে ৩ সন্তান হারানো বাবা-মার আর্তনাদে সবার চোখে জল

একসঙ্গে ৩ সন্তান হারানো বাবা-মার আর্তনাদে সবার চোখে জল

রাতে খাওয়া-দাওয়ার পর ১৫ মাস বয়সী শিশুসন্তানকে নিয়ে বাড়ির একটি ঘরে ঘুমিয়ে পড়েন কাজলী আক্তার। পাশের ঘরে ঘুমায় অন্য তিন সন্তান। স্বামী জাকের হোসেন এ সময় বাড়িত ছিলেন না। রাত ১২টার দিকে শর্টসার্কিট থেকে হঠাৎ আগুন লাগে; নিমিষেই ছড়িয়ে পড়ে পুরো বাড়িতে। এ সময় ১৫ মাসের ছেলেকে নিয়ে নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন কাজলী। তবে আটকা পড়ে অন্য ঘরে থাকা তিন সন্তান জিহাদুল ইসলাম (১২), ফৌজিয়া জান্নাত মিম (১০) ও আফিয়া জান্নাত মিতু (৮)। তাদের আর বের করা যায়নি। পরে স্থানীয় লোকজন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর ঘরে তিন শিশুর মরদেহ পাওয়া যায়। পুড়ে অঙ্গার হয়ে যায় ঘুমন্ত তিন ভাইবোন। 

সোমবার রাতে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের সাবানঘাটা গ্রামে ঘটে মর্মান্তিক এ ঘটনা। তিন শিশুর এমন মৃত্যুতে পুরো গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। সন্তান হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন মা-বাবা। তাদের আর্তনাদে আশপাশের কেউই চোখের জল আটকে রাখতে পারেনি। এরই মাঝে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন মা কাজলী।

জানা গেছে, ট্রাক্টরের ইঞ্জিন মেরামতের কাজ করেন জাকের হোসেন। তার স্ত্রী কাজলী গৃহিণী। জাকেরের বৃদ্ধ মাও তাদের সঙ্গেই থাকেন। হতদরিদ্র পরিবারটির বসবাস সাবানঘাটা গ্রামে বন বিভাগের সংরক্ষিত জমিতে মাটির ঘরে। দাদির সঙ্গে একটি ঘরে ঘুমাত ওই তিন ভাইবোন। তবে সোমবার রাতে মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে যান দাদি। এ কারণে তিন ভাইবোনই ঘরটিতে ছিল। খাওয়া-দাওয়া শেষে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঘুমিয়ে পড়ে সবাই। রাতে আগুন লাগার পর প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলেও তৎক্ষণাৎ নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। পরে আগুনে পুড়ে যাওয়া বাড়ি থেকে এক এক করে বের করা হয় জাকের-কাজলী দম্পতির তিন সন্তানের মরদেহ।

এ সময় সন্তানহারা মা-বাবার আর্তনাদে এলাকায় সৃষ্টি হয় হৃদয়বিদারক দৃশ্য। মা কাজলী প্রলাপ বকতে বকতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন। তিনি প্রলাপ বকছিলেন, 'হয়তো সব ফিরে পাব; কিন্তু আমার নাড়িছেঁড়া তিন সন্তানকে কি ফিরে পাব?' ঘটনাস্থলে ছুটে আসা আশপাশের লোকজন শত চেষ্টা করেও সান্ত্বনা দিতে পারছিলেন তাদের।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, আগুন লাগার পরপরই ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে যায়নি। মাটির ঘরে আটকা পড়ে প্রাণ হারিয়েছে তিন শিশু। হারবাং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার সকালে তাদের লাশ দাফন করা হয়েছে।

সন্তান হারানো জাকের জানান, রাতে তিনি পাশের উপজেলা লোহাগাড়ায় একটি ওরস মাহফিলে গিয়েছিলেন। খবর পেয়ে রাতেই এসে তিন সন্তানের দগ্ধ মরদেহ দেখেন। সকালে ঘটনাস্থলে ছুটে যান চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সান্ত্বনা দেওয়ার পাশাপাশি প্রশাসনের পক্ষ থেকে অর্থ ও খাদ্য সহায়তা তুলে দেন তিনি।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password