সব বন্দরে কড়াকড়ির পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

সব বন্দরে কড়াকড়ির পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের
MostPlay

যুক্তরাজ্যে ছড়িয়ে পড়া নতুন ধরনের করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ যেন বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য দেশের সব বিমান-জল ও স্থল বন্দরে কড়াকড়ি আরোপের পরামর্শ দিয়েছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা। প্রয়োজনে এ জন্য সেনাবাহিনীর সহায়তা নেওয়ার কথাও বলেছেন তারা।

করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় সরকারের গৃহীত স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পর্যালোচনা ও সমন্বয়ের লক্ষ্যে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষজ্ঞ ডা. আবু জামিল মো. ফয়সাল। তিনি বলেন, করোনার সংক্রমণ দীর্ঘ সময় ধরে চলছে। আগস্ট-সেপ্টেম্বরে দেশে সংক্রমণ কিছুটা কমলেও এখন আবার বাড়তে শুরু করেছে। এখনতো আবার ব্রিটেনে মিউটেশনের পর ভাইরাসটির নতুন স্ট্রেইন পাওয়া গেছে, যার সংক্রমণ ক্ষমতা অনেক বেশি। এই ভাইরাসটি আগের প্রজাতিটির চেয়ে ৭০ গুণ বেশি সংক্রামক। এই ঝুঁকিতে আমরাও আছি। কারণ যুক্তরাজ্য থেকে প্রতিদিনই মানুষ আসছেন। তাদের কারও মাধ্যমে এটি বাংলাদেশেও আসতে পারে।

পাবলিক হেলথ এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি ডা. ফয়সাল বলেন, ব্রিটেনে করোনা ভাইরাসের যে স্ট্রেইন পাওয়া গেছে সেটি আমাদের জন্য ভয়ের কারণ। এটি থেকে রক্ষা পেতে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে আমাদের সরাসরি ফ্লাইট বন্ধ করে দেওয়া উচিত। এছাড়া যুক্তরাজ্য থেকে অন্য দেশ হয়ে আসা ফ্লাইটগুলোও উচিত বন্ধ করা। দক্ষিণ আফ্রিকাতেও একই ধরনের করোনা ভাইরাসের স্ট্রেইন পাওয়া গেছে। সে দেশ থেকেও লোকজন আসছে। তাই তাদের সঙ্গেও ফ্লাইট বন্ধ করতে হবে। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার করোনা প্রতিরোধের প্রথম যে খুঁটি সেটি হচ্ছে পয়েন্ট অব এন্ট্রি।

আমাদের দেশকে রক্ষা করতে হলে স্থল, বিমান ও নৌবন্দরের এন্ট্রি পয়েন্ট খুবই কড়াকড়িভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। দরকার হলে এসব জায়গাতে সেনাবাহিনী দিয়ে ম্যানেজ করা উচিত। সিভিলিয়ান যারা দায়িত্বে থাকেন, অনেক সময় বিদেশ থেকে আসা প্রভাবশালীরা তাদের ওপর প্রভাব খাটিয়ে চলে যেতে পারেন, আবার আর্থিক বিষয়ও থাকে। তাই আমার মতে এসব পয়েন্ট অব এন্ট্রির দায়িত্ব সেনাবাহিনীকে দেওয়া উচিত।

তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আমাদের কাছে বিভিন্ন বিষয়ে মতামত চায়, আমরাও মতামত দেই। কিন্তু এসব মতামত কেউ শুনে না। এখন স্বাস্থ্যবিষয়ক অনেক সিদ্ধান্তই অন্যখানে হয়। সে জন্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে বলে লাভ নেই। উনারা সিদ্ধান্তের জন্য চেয়ে থাকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বা কেবিনেট ডিভিশনের দিকে। আমরা করোনার নতুন সংক্রমণ ঠেকাতে দেশের এন্ট্রি পয়েন্টে কড়াকড়ি আরোপে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আহ্বান জানাই।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, মিউটেশন পরবর্তী করোনা ভাইরাসের নতুন স্ট্রেইন বা টাইপ একসঙ্গে ৭০ জনকে সংক্রমিত করতে পারবে। এটি খুবই দ্রুত সংক্রমণ ছড়াবে। এখন এটি থেকে রক্ষা পেতে হলে বাংলাদেশের সঙ্গে সেসব দেশের ফ্লাইট বন্ধ করে দিতে হবে। তারপর ব্রিটেন থেকে কেউ বের হয়ে অন্যদেশ হয়ে আসলে তাদেরকেও বন্দরে ঢোকার পরই পিসিআর টেস্ট করতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত পিসিআর টেস্টে নেগেটিভ না আসবে ততক্ষণ পর্যন্ত রাখতে হবে কোয়ারেন্টিনে। এই কোয়ানেন্টিনে থাকা অবস্থায় যারা পজিটিভ হবে তাদের আইসোলেশনে নিয়ে চিকিৎসা দিতে হবে এবং যেখানে চিকিৎসা দেওয়া সেখানকার ডাক্তার-নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর বলেন, করোনা ভাইরাসের নতুন মিউটেশন গত সেপ্টেম্বরে হয়েছে। এটি এখন যুক্তরাজ্যসহ ৬-৭টি দেশে পাওয়া গেছে। মিউটেশনকৃত ভাইরাসের স্ট্রেইনটার সংক্রমণ ক্ষমতা বেশি হলেও সিভিয়ারিটি একই থাকবে। এটি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। এই নতুন স্ট্রেইনটা যেন বাংলাদেশে আসতে না পারে, সেজন্য গত এক সপ্তাহ ধরে এয়ারপোর্টে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। নেগেটিভ সনদ ছাড়া কেউ আসলে তাদের প্রতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হচ্ছে। এখন থেকে যারা যুক্তরাজ্যসহ সংক্রমিত দেশ থেকে আসবে তাদের কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে ৭ দিন। এরপর তাদের পিসিআর টেস্ট করে নেগেটিভ পাওয়া গেলে ছাড়া হবে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password