কাঁকড়া চাষির দুর্দিন রপ্তানি বন্ধ থাকায়

কাঁকড়া চাষির দুর্দিন রপ্তানি বন্ধ থাকায়

করোনার লইগ্গা গতবছর থেইক্কা কাঁকড়া বিক্রি করতে পারি নাই। গত বছর সব কাঁকড়া ঘেরেই (কাঁকড়া চাষের পুকুর) মরছে। এ বছর আবার এনজিও, ব্যাংক থেকে ঋণ, দাদন নিয়া কাঁকড়া চাষ করছি কিন্তু এবারও তো একই অবস্থা। একদিকে ঘরে চাউল নাই, আর একদিকে কাঁকড়া বিক্রি বন্ধ।

এভাবে নিজের অসহায় অবস্থার কথা বলছিলেন বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার চরদোয়ানি ইউনিয়নের হোগলপাশা গ্রামের কাঁকড়া চাষি পরিতোষ মণ্ডল। বরগুনার পাথরঘাটা ও তালতলী উপজেলায় বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা ও সরকারি উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে কাঁকড়া চাষের খামার। এ সব খামার করে অনেক চাষি স্বাবলম্বী হয়েছেন। কর্মসংস্থান হয়েছে শত শত লোকের। তবে করোনা মহামারিতে এই সকল কাঁকড়া চাষি লোকসানে পড়েছেন। 

জেলা মৎস্য অফিস ও বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, পাথরঘাটা ও তালতলী উপজেলায় ৪৭০টি ঘেরে ৫ শতাধিক চাষি কাঁকড়া চাষ করেন। স্বল্প সময়ে উৎপাদন, চীনে ভালো চাহিদা ও দাম থাকায় কয়েক বছর ধরে অনেকে কাঁকড়া চাষে ঝুঁকেছেন। কিন্তু গত বছর কাঁকড়া রপ্তানি বন্ধ হওয়ায় পরিপক্ক ও ডিমওয়ালা কাঁকড়া ঘেরেই মরে গেছে। দেশের বাজারে কাঁকড়ার চাহিদা তেমন না থাকায় দাম কমে গেছে। যেখানে কেজিপ্রতি কাঁকড়া ২২০০ থেকে ২৮০০  টাকায় বিক্রি হতো, সেই একই কাঁকড়া এখন ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হতে চলেছেন কাঁকড়া চাষিরা। তাদের কাঁধে এখন ঋণের বোঝা। তালতলী উপজেলার কাঁকড়া চাষি ত্রে মং বলেন, ‘২ থেকে ২৫ লাখ টাকা ব্যয় হয় একটি কাঁকড়া খামার করতে। গত বছর খরচের টাকাও ওঠেনি। এ বছর আবার চাষ করছি কিন্তু মনে হয় এ বছরও লোকসান গুনতে হবে।

একই উপজেলার আরেক চাষি সরজিত বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি মাসে কাঁকড়া বিক্রি শুরু হয়। মার্চ মাস শেষে সবার দেনা-পাওনা পরিশোধ করা যায়। এ বছরও রপ্তানি বন্ধ, কী করবো বুঝে উঠতে পারছি না।’কাঁকড়া চাষিদের লাখ লাখ টাকা দাদন দেওয়া আড়ৎদার, বাকিতে কাঁকড়ার খাবার দেওয়া ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টদেরও এখন করুন অবস্থা। লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে না পারছে চাষিদের কাছে টাকা চাইতে, না পারছে লোকসান পোষাতে।

কাঁকড়া ব্যবসায়ী মোস্তাফিজ বলেন, ‘পাথরঘাটা থেকে কাঁকড়া সংগ্রহ করে ঢাকার বড় বড় হোটেল দেয় এবং চীনসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করি। কিন্তু এবারও বিপাকে পড়েছি। চাষিদের লাখ লাখ টাকা দাদন দিয়েছি কিন্তু এখন যে তাদের কাছ থেকে কাঁকড়া নেবো সেই উপায় নেই। কারণ রপ্তানি বন্ধ।

‘কাঁকড়া চাষ প্রযুক্তি সম্প্রসারণ ও বাজারজাত করণের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের আয় বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি’- শীর্ষক ভ্যালু চেইন উন্নয়ন প্রকল্পের সহকারী ভ্যালু চেইন ফ্যাসিলেটর গোলাম মোর্শেদ রাহাত বলেন, কাঁকড়া চাষিদের যে দুর্দিন তা অসহনীয়। সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ থাকবে,  যাতে কাঁকড়া চাষিরা নিরাপদে থাকতে পারে, সেই বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার।

সহকারী ভ্যালু চেইন ফ্যাসিলেটর গোলাম মোর্শেদ রাহাত বলেন, গত বছর প্রায় ৯ হাজার কেজি কাঁকড়া উৎপাদন হয়। চলতি বছরে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১১ হাজার কেজি। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রভাবে এখন পুরোটাই ধ্বংস হতে বসেছে।

পাথরঘাটা উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু বলেন, এই মুহূর্তে কাঁকড়া চাষিদের আর্থিক সহায়তা না করা গেলেও যাতে কাঁকড়াগুলো না মারা যায়, সেই বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। গত বছর যে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিল কাঁকড়া চাষিরা, এবারও সেই অবস্থা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এই কর্মকর্তা।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password