ফরিদপুরের সালথা উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নে দুঃস্থ্য মহিলাদের পুষ্টি উন্নয়নে ভিজিডি প্রকল্পে নিম্নমানের চাল সরবরাহের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত বিকাশ এগ্রো ফুডের দুইজনকে আটক করেছে উপজেলা প্রশাসন। আটককৃতরা হলো, বিকাশ এগ্রো ফুডের ম্যানেজার সন্দীপ কুমার দাস (৩৪), সে সাতক্ষিরা সদর থানার ভোমরা গ্রামের অজিত দাসের ছেলে।
অপরজন হলো, বিকাশ এগ্রো ফুডের মিক্সার মিস্ত্রি মোঃ রোমান সরদার (৩৩), সে উপজেলার ইউসুফদিয়া গ্রামের সিদ্দিক সরদারের ছেলে। অসহায় দুঃস্থ্য মহিলাদের জন্য সরকার নির্ধারিত পুষ্টি চালের পরিবর্তে নিম্নমানের চাল বিতরণ করা হয়েছে এই অভিযোগের ভিত্তিতে সালথা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ তাছলিমা আকতার এবং উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রাজিব রায়, সমাজসেবা কর্মকর্তা ফজলে রাব্বি নোমান, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা ডলি, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেনসহ একটি টিম বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) রাতে ভিজিডির চাল বিতরণের জন্য সংরক্ষিত গোডাউন সোনাপুর ইউনিয়ন পরিষদে পরিদর্শন করতে যায়।
এসময় পুষ্টি মেশানো মিলার প্রতিষ্ঠান বিকাশ এগ্রো ফুড লিমিটেড এর সরবারাহকৃত চালের কিছু পরিবর্তন পাওয়ায় তাদেরকে আটক করে। জানা যায়, সালথা উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নে ২৮২ টি ভিজিডি কার্ডের মাধ্যমে দুস্থ নারীদের পুষ্টি উন্নয়নের বিপরীতে পুষ্টি মেশানো চাল বিতরণ করছিলেন ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃপক্ষ। তাতে নিন্মমানের চাল বিতরণ করা হচ্ছে বলে খবর আসে ইউএনও’র কাছে।
ইউএনও, উপজেলা খাদ্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ভিজিডি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে পরিষদে হাজির হন। সেখানে সরকারী গোডাউনের চাল ও বিকাশ এগ্রো ফুড লিমিটেড এর সরবারাহকৃত চালে কোন মিল না থাকায় এবং প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার ও এক কর্মচারী এর সদত্তোর না দিতে পারায় তাদেরকে আটক করা হয়।
সরকারি ভাবে নিযুক্ত প্রতিষ্ঠান পার্শ্ববর্তী উপজেলা বোয়ালমারীতে অবস্থিত বিকাশ এগ্রো ফুড লিমিটেড সরকারি চালে পুষ্টি মেশানোর ঠিকাদারী নেয় প্রতিষ্ঠানটি। সালথা উপজেলার আটটি ইউনিয়নের চাল প্রথমে গোডাউন থেকে নিয়ে যায় বিকাশ এগ্রো ফুড। পরে চুক্তি অনুযায়ী পরিমান মতো পুষ্টি মিশিয়ে প্রত্যেকটি ইউনিয়ন পরিষদে চাল পৌঁছে দেয়, এরপর দুস্থ নারীদের পুষ্টি উন্নয়নের লক্ষে বিতরণ করেন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ।
সোনাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খায়রুজ্জামান বাবু মোল্যা বলেন, চাল রিসিভ করার সময় আমি ছিলাম না। আমার সচিব চাল রিসিভ করেছে। আমি জরুরী কাজে বাইরে ছিলাম। বিকাশ এগ্রো ফুড লিমিটেডের ম্যানেজার জানান, এটা মিষ্টেক হয়েছে। ভুলে চলে এসেছে। এ ব্যাপারে উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বুলেট বৈরাগী বলেন, পুষ্টি মেশানোর জন্য বিকাশ এগ্রো ফুড লিমিটেডকে আমরা গুদাম থেকে যে চাল দিয়েছিলাম।
পুষ্টি মেশানোর পরে কিছু চালের পরিবর্তন পেয়েছি। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন বলেন, নিয়মনুযায়ী আমরা ভিজিডির চাল পুষ্টি মেশানোর প্রতিষ্ঠান বিকাশ এগ্রো ফুড লিমিডিট এর নামে ডিও দিয়ে থাকি। তারা আমাদের গোডাউন থেকে চাল নিয়ে পুষ্টি মিশিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে সরবারাহ করেন। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে উপকারীভোগীদের মাঝে বিতরণ করা হয়।
এই মাসে গোডাউন থেকে যে চাল মিলারকে দেওয়া হয়েছিলো, সেই চাল ইউনিয়ন পরিষদে সরবকারাহ করা হয়নি। সেখানে নিন্মমানের চাল পাওয়া গেছে। এজন্য প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার ও এক কর্মচারী কে আটক করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ তাছলিমা আকতার বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি, ঘটনার সতত্য পাওয়া গেছে। ওই প্রতিষ্ঠানের দুজনকে আটক করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সালথা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আসিকুজ্জামান বলেন, নিম্নমানের চাল সরবরাহের অভিযোগে দুজনকে আটক করে ফরিদপুর বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। এই বিষয়ে সোনাপুর ইউনিয়নের সচিব বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন