মেয়র-এমপিপুত্রের নামে পাল্টাপাল্টি মামলা

মেয়র-এমপিপুত্রের নামে পাল্টাপাল্টি মামলা

ময়মনসিংহের গৌরীপুরে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের অনুষ্ঠানে সংঘর্ষের ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা করেছে দুপক্ষ। এতে আসামি করা হয়েছে প্রায় শতাধিক ব্যক্তিকে। একটিতে পৌর মেয়র বাদী হয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্যের ছেলেকে এক নম্বর আসামি এবং অপরটিতে মেয়রকে এক নম্বর আসামি করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৯ মার্চ) মামলা দুটি নথিভুক্ত করা হয়েছে। এসব মামলায় বাবু, রাজিব, হায়দার ও শহীদ নামের চারজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ।

মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, ‘৭ মার্চ গৌরীপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলাম স্থানীয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ শেষে নিজ কার্যালয়ে ফেরার পথে স্থানীয় সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দিনের ছেলে তানজির আহমেদ রাজিবের নেতৃত্বে কয়েকজন তাকে গুলি করে।’

ওই দিন বিকালে নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলনে মেয়র রফিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন বলেন, এমপিপুত্র রাজিবের নির্দেশেই তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করা হয়।

পাল্টা অভিযোগ করে এমপিপুত্র রাজিব বলেন, ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে তিনি স্থানীয় শাহগঞ্জ বাজারের কাছে একটি প্রীতি ফুটবল ম্যাচ দেখেতে যাওয়ার সময় তার গাড়িবহরে হামলা ও ভাঙচুর চালায় মেয়রের লোকজন।

এদিকে মেয়রের অভিযোগের পর সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দিন আহমেদ ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে গিয়ে রাতে সংবাদ সম্মেলন করে পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, গৌরীপুরে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন মেয়র। নৌকার কথা বললেই হামলা হয়। দলীয় কর্মসূচিতে যাওয়ার পথে মেয়রের নেতৃত্বে আমার গাড়িবহরে হামলা হয়েছে। আমি প্রতিরোধ করতে পারতাম; কিন্তু তাতে প্রাণহানির শঙ্কা তৈরি হতো। আমি নিজে অপমানিত হয়ে সেখান থেকে চলে গিয়েছি।

পরদিন সোমবার (৮ মার্চ) সকাল ৬ টা থেকে বেলা ২ টা পর্যন্ত মেয়রের পক্ষে হরতাল পালন করে বাজার ব্যবসায়ী সমিতি। আধা বেলা হরতালে পৌর শহরের ব্যবসায়ীরা কোন দোকানপাট খুলেনি। উপজেলা থেকে কোন যানবাহন বাইরে বের হয়নি। শহরের ভেতরেও কোন রিকশা, অটোরিকশাসহ সিএনজি চলাচল করেনি।

জানা যায়, মেয়র বাদী হয়ে এমপিপুত্র রাজিব ছাড়াও ১২ জনের নামে এবং অজ্ঞাত আরও ৪০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। অপরদিকে এমপিপুত্র রাজিব মেয়রসহ আরও ৪১ জনকে আসামি করে মামলা করেন।

এ ব্যাপারে গৌরীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা  (ওসি) খান আব্দুল হালিম সিদ্দিকী মামলা হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ ঘটনায়  চারজনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারে পুলিশ তৎপর রয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত ৩০ জানুয়ারি পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে পরাজিত করে টানা তৃতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন সৈয়দ রফিকুল ইসলাম। এমপি ও তার ছেলেকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠে মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ওইদিনই থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন সংসদ সদস্য নিজেই।

সাধারণ ডায়েরিতে সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দিন আহমেদ উল্লেখ করেন, শনিবার (৩০ জানুয়ারি) বিকেল ৪টা ১৭ মিনিটে ফোন করেন পৌর মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলাম। এ সময় সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দিন আহমেদকে উদ্দেশ্য করে নবনির্বাচিত মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আপনার কারণে আমার জীবন শেষ হয়ে গেছে। আমি আপনাকে ক্ষমা করব না। রক্তের বন্যা বইয়ে দেব।’ একইসঙ্গে এমপির ছেলে তানজির আহমেদ রাজিবকেও দেখে নেয়ার হুমকি দেয়া হয়।

এছাড়া পৌর নির্বাচনের কয়েক মাস আগে একটি হত্যা মামলায় জেলে যান সৈয়দ রফিকুল ইসলাম। সেই হত্যা মামলাটিতে আসামি করার পেছনে এমপি নাজিম উদ্দিন আহমেদ ও তার ছেলে তানজির আহমেদ রাজিবকে দায়ী করে আসছিলেন মেয়র।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password