শোকরের অর্থ উপকার স্বীকার করা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে সর্বাবস্থায় আনুগত্যের চেষ্টা করা এবং অবাধ্যতা বা নাফরমানী থেকে বিরত থাকাকে শোকর বলে। আপনার যা আছে, যতটুকু আছে সেজন্যে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করলেই মন প্রশান্ত হবে। ঠান্ডা মাথায় মস্তিষ্ককে কাজে লাগিয়ে বর্তমান সামর্থ্য ও উপায়-উপকরণ নিয়েই যাত্রা শুরু করার নাম শোকর। হেলেন কেলার-এর জীবন দেখুন। শিশুবয়সে রোগ তার শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নেয়।
তিনি কলেজ থেকে ডিগ্রি লাভ করেন। লেখক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। সফল বক্তা হিসেবে সারা দুনিয়ায় ঘুরে বেরিয়েছেন। তার এই অসাধারণ সাফল্যের পেছনে ছিল তার শোকরগোজার দৃষ্টিভঙ্গি।
তিনি লিখেছেনও আমাকে এতকিছু দেয়া হয়েছে যে, কি দেয়া হয় নি তা নিয়ে ভাবার কোনো সময় আমার নেই।’ একজন শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তিহীন নারী যদি এত শোকরগুজার হতে পারেন, তাহলে আপনি কেন পারবেন না। শোকরগুজার হোন! নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে জীবনের আনন্দসম্ভারকে উপভোগ করুন।
শুকরিয়া-না করার ক্ষতি:
ক্রমাগত না-শুকরিয়া দেহে এসিডিক অবস্থা সৃষ্টি করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে ফেলে।
বিরক্তি ক্ষোভ দুশ্চিন্তা আশঙ্কা সন্দেহ সংশয় বাড়িয়ে সমস্যাকে সংকটে রূপান্তরিত করে, সম্ভাবনা নষ্ট করে।
সবসময় শূন্যতা হাহাকার বিষণ্নতা, অহেতুক কষ্ট পাওয়া, নিজেকে অসহায় ও বঞ্চিত মনে করার জন্যে দায়ী না-শুকরিয়া।
সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগায়, দীর্ঘসূত্রিতা বাড়ায়। অলীক কল্পনা বিলাসিতায় ভাসিয়ে নিষ্ক্রিয় করে রাখে।
অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত থেকে সীমালঙ্ঘন করায়।
দারিদ্র্য অশান্তি আতঙ্ক ত্রাস অস্থিরতা অনিশ্চয়তা এবং ভয় সৃষ্টি করে
সারাক্ষণ শুকরিয়া আদায় করুন।
ঘুম ভাঙতে ও ঘুমানোর আগে বলুন, শোকর আলহামদুলিল্লাহ/প্রভু তোমাকে ধন্যবাদ/ থ্যাঙ্কস গড, একটি সুন্দর দিনের জন্যে।
প্রতিটি কাজ ও অর্জনের পর মনে মনে বা মুখে শুকরিয়া আদায় করুন।
কুশল বিনিময়ের সময় বলুন, শোকর আলহামদুলিল্লাহ! বেশ ভালো আছি।
শোকরগোজার মানুষদের সংস্পর্শে থাকুন। সবসময় অনুপ্রাণিত হবেন।
কথায় না-শুকরিয়া চলে এলেও বা তওবা বা বাতিল বাতিল বলে শুকরিয়া জ্ঞাপক শব্দ দিয়ে বাক্য শেষ করুন।
কেউ উপকার করলে ধন্যবাদ দিন। থ্যাঙ্কস বা ধন্যবাদের জবাবে বলুন, শোকর আলহামদুলিল্লাহ বা থ্যাঙ্কস গড বা প্রভুকে ধন্যবাদ। শোকর আদায় যে শুধু একটি কাঙ্ক্ষিত বিষয় এমন নয়। শোকর আদায় না করলে কুরআন মাজীদে শাস্তির ধমকি এসেছে। ইরশাদ হয়েছে, “ যদি তোমরা (নেয়ামত পেয়ে) শোকর আদায় কর তাহলে আমি আমি অবশ্যই অবশ্যই নেয়ামত বাড়িয়ে দেব। আর যদি অকৃতজ্ঞ হও তাহলে জেনে রেখ আমার শাস্তি বড় কঠিন। (সূরা ইবরাহীম : ৭)।
জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত একজন মানুষ কত নেয়ামত উপভোগ করে থাকে তা গুণে শেষ করা অসম্ভব। ইরশাদ হয়েছে- যদি তোমরা আল্লাহর নেয়ামত গণনা করতে থাক তাহলে তা গণনা করে কখনো শেষ করতে পারবে না। ( সূরা ইবরাহীম: ৩৪) এই যে সুস্থতা কত বড় নেয়ামত। একটু অসুস্থ হলেই তার মূল্য বুঝে আসে। সুরুচির সাথে তৃপ্তি সহকারে খেতে পারা কত বড় নেয়ামত তা একজন অরুচিতে ভোগা খেতে না পারা লোককে জিজ্ঞেস করে দেখুন। এই যে আপনি আরামে সারারাত দিব্যি ঘুমে কাটিয়ে দিলেন তা যে কতটা আনন্দের তা একজন অনিদ্রায় ভোগা অসুস্থ ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করুন। দেখুন- ঘুমাতে না পারা কতটা কষ্টের। তাই তো আমাদের গর্বের ধন পবিত্র সুন্নাহর পরতে পরতে রয়েছে শোকরের অমলিন শিক্ষা ।
রাতভর আপনি তৃপ্তিসহকারে ঘুমালেন। ঘুম থেকে জেগে আপনি আপনার মালিক আল্লাহ তায়ালার শোকর আদায় করুন। পড়ূন- আলহামদুলিল্লাহিল্লাযী আহইয়ানা বা’দামা আমাতানা ওয়া ইলাইহিন নুশুর।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন