বড়োসড়ো মাপের একটি asteroid ধেয়ে আসছে পৃথিবীর দিকে এমন খবর প্রায়শই আমরা শুনে থাকি। যদিও সবসময়ই কোনো না কোনোভাবে বিপদ কেটে গিয়ে আমাদের পৃথিবী এখনও পর্যন্ত সুরক্ষিতই রয়েছে। তবে ইদানিংকালে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসা গ্রহাণুর সংখ্যা যেন বাড়ছে, আর ফলস্বরুপ একটা চিন্তা কেটে গেলে আমাদের মনে আর একটা চিন্তার উদ্রেক হচ্ছে। তাই দীর্ঘদিন ধরেই এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে এক দৈত্যাকার গ্রহাণু পৃথিবীর শেষ পরিণতির কারণ হতে চলেছে। অর্থাৎ এমন এক বড়োসড়ো গ্রহাণুর সাথে আগামী দিনে পৃথিবীর সংঘর্ষ হতে পারে যার পরে পৃথিবীর আর কোনো অস্তিত্ব থাকবে না।
তাই পৃথিবীকে বাঁচাতে সম্প্রতি বিজ্ঞানীরাও একটু নড়েচড়ে বসেছেন। ঘটনাটি ঘটবে নাকি ঘটবে না সে বিষয়ে বিশদে না গিয়ে বিজ্ঞানীরা কীভাবে সংঘর্ষটি আটকানো যায়, তার একটি কৌশল আবিষ্কার করে ফেলেছেন এবং তারা দাবি করেছেন যে এই কৌশলটি প্রকৃতপক্ষেই কাজে আসতে পারে। Acta Astronautica জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে Lawrence Livermore National Laboratory-র গবেষকরা জানিয়েছেন যে, একটি পারমাণবিক বিস্ফোরণ (nuclear explosion) বা গতিগত প্রভাবক (kinetic impactor) পৃথিবীর সাথে সংঘর্ষের জন্য এগিয়ে আসা গ্রহাণুটিকে তার মূল গতিপথ থেকে বিচ্যুত করতে পারে।
অর্থাৎ, গ্রহাণুটি যখন পৃথিবীর দিকে এগিয়ে আসবে তখন তার গতিপথে একটি পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটিয়ে গ্রহাণুর গতিপথটি পরিবর্তন করে দেওয়া হবে, এবং এইভাবেই পৃথিবীর সঙ্গে সেটির সংঘর্ষ আটকানো সম্ভব। কিন্তু কোনোভাবে যদি এই ভাবনা ফলপ্রসূ না হয়? অর্থাৎ পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটিয়েও যদি দেখা যায় যে গ্রহাণুটির গতিপথ পরিবর্তন করা গেল না, তখন কী হবে? না, চিন্তার কোনো কারণ নেই। সেক্ষেত্রেও বিজ্ঞানীরা অপর একটি উপায় ভেবে ফেলেছেন। তারা এমন একটি পর্যাপ্ত শক্তিসম্পন্ন পারমাণবিক ডিভাইস তৈরি করার কথা চিন্তা করেছেন, যা পৃথিবীর দিকে এগিয়ে আসা গ্রহাণুটিকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র টুকরোয় ভেঙে ফেলতে পারে। ফলে সেক্ষেত্রে আর বড়োসড়ো সংঘর্ষের কোনো সম্ভাবনাই থাকবে না।
বিজ্ঞানীদের মতে, কোনো গ্রহাণুর সাথে অন্য কোনো কিছুর সংঘর্ষের কিছুক্ষণ আগেই গ্রহাণুটি ভেঙে যায়। পদার্থবিজ্ঞানী প্যাট্রিক কিং (Patrick King), Science Alert-কে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেছেন, সাধারণত সংঘর্ষের আগে যখন কিছুটা সময় বাকি থাকে, তখন এই পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে কার্যসিদ্ধি করা যায়। প্রসঙ্গত, বিজ্ঞানীরা পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন গ্রহাণুকক্ষকে (asteroid orbits) পর্যবেক্ষণ করেছেন, যেখানে সংঘর্ষের এক সপ্তাহ থেকে ছয় মাস আগে পর্যন্ত যে কোনো জায়গায় বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। এবং ফলস্বরূপ তারা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, গ্রহাণুটি যদি পাথরের একটি বড়ো স্তূপ হয় তবে সংঘর্ষের জন্য নির্ধারিত তারিখের ছয় মাসের মধ্যে আঘাত পেলে এর প্রভাব ১% হ্রাস করার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই প্ল্যান তো প্রস্তুত করা আছে, কিন্তু কাজে ও কথায় কতটা মিলবে তা সময় বলবে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন