লকডাউনে একটি মুরগী পালনের উদ্যোগ বদলে দিয়েছে সারথী রানীর অর্থনৈতিক অবস্থা

লকডাউনে একটি মুরগী পালনের উদ্যোগ বদলে দিয়েছে সারথী রানীর অর্থনৈতিক অবস্থা

গ্রামীন কুসংস্কার আর প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে নিজেকে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন নওগাঁ জেলার পত্নীতলা উপজেলার আকবরপুর ইউনিয়নের বুনি গ্রামের সারথী রানী।

কেবল সফল স্ত্রী বা মা নন, তীব্র ইচ্ছাশক্তি, কঠোর পরিশ্রম আর একাগ্র নিষ্ঠায় নিজ পরিচয়ে সারথী রানী এখন লকডাউনেও দেশী মুরগী পালন করে অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জনের চেষ্টা করেছেন এবং সফল হয়েছেন।

নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার বুনি গ্রামের আদিবাসী পাড়ায় বাড়ি সারথী রানীর। পেশায় একজন গৃহিনী ও কৃষি দিনমজুর। দুই ছেলে ও স্বামীকে নিয়ে তার সংসার। স্বামী-স্ত্রীর দু জনের দিনমজুরির টাকা দিয়ে চলে তাদের সংসার। বড় ছেলে ডিগ্রী পড়ছে ও ছোট ছেলে এইচএসসিতে পড়াশোনা করছে। ছেলেদের পড়াশোনা আর সংসারের খরচে তাদের দৈনিক রোজগারের সব টাকা শেষ হয়ে যায়। কৃষি দিন মজুরি করে দিন আনে দিন খায় তারা।

ব্রতী সমাজ কল্যাণ সংস্থা হতে লকডাউনের মধ্যেও কিছু খাদ্য সামগ্রী পেয়েছিলেন। কিন্তু তা আর কতো দিনইবা যাবে। ব্রতী সমাজ কল্যাণ সংস্থার ভিএমপিআরএমসি প্রকল্প হতে আইজিএ প্রশিক্ষণ নেন সারথী রানী। প্রশিক্ষণে তারা কৃষি কাজ ছাড়াও কি ভাবে বাড়তি আয় করা যায় সে বিষয়ে প্রশিক্ষণটিতে জানতে পারেন। প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের পর সে সিদ্ধান্ত নেন যে শুধু কৃষি কাজ করে নিজেকে সাবলম্বী করা যাবে না। নিজে অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জন করতে হলে কৃষি কাজের পাশাপাশি অন্য কিছু করতে হবে। প্রশিক্ষণ পেয়ে সারথী রানী সিদ্ধান্ত নেন সে দেশী মুরগী পালন করবেন। অল্প পুজিতে এছাড়া আর কোন আইডিয়া তার মাথায় না আশায় গত বছর মার্চ ২০২০ মাসে করোনাকালীণ সময়ে সে ২৫০টাকা দিয়ে একটি দেশী মুরগী ক্রয় করেন এবং খুব দায়িত্বের সাথে মুরগীটি পালন করতে থাকেন।

সারথী রানীর ১টি দেশী মুরগী থেকে এখন তার বাড়িতে প্রায় ৬০টিরও বেশি মুরগী, যার মূ্ল্য প্রায় ১০ থেকে ১১ হাজার টাকার বেশি হবে বলে জানিয়েছেন। যা একটি খামারের মতো। সারথী রানী আরো জানান যে, এটা আমার কাছে সত্যিই অবিশ্বাস্য লাগে যে মাত্র একটি মুরগী থেকে আমার এতোগুলো মুরগী হয়েছে। আমার মুরগীগুলো অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত হয়ে খুব কমই মারা গেছে। বাজারে দেশি মুরগী এবং ডিমের চাহিদা বেশি থাকায় সারথী রানী লকডাউনে কোন কাজ না থাকা সত্ত্বেও মুরগী পালন করে মুরগী এবং ডিম বিক্রি করে তার সংসার পরিচালনা করতে পেরেছেন। ছেলেদের পড়ার খরচ (প্রাইভেট) জোগাতে পারেন মুরগী পালনের আয় থেকে। তাছাড়া পরিবারের মুরগীর ডিম ও মাংসের চাহিদাও মিটাতে পারছেন।

সারথী রানী ব্রতী সমাজ কল্যাণ সংস্থা ভিএমপিআরএমসি প্রকল্প সহ মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনকে ধন্যবাদ জানায়। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন যে মুরগী পালনের আইডিয়াটা এই প্রশিক্ষণ থেকে পেয়েছেন বলে তার সংসারে করোনাকালীন সময়ে লকডাউনেও খাদ্য সংকটে পড়তে হয়নি। তাছাড়াও এখন তার হাতে সবসময়ই কিছু টাকা থাকে যা তিনি তার নিজের ইচ্ছেমত খরচ করতে পারছেন এবং উপকারভোগী দলে সঞ্চয় করছেন।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password