বাংলাদেশের অর্থনীতিতে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে জানতে চেয়েছে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ)। একইসঙ্গে তারা ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
এ খাতে সুশাসন নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছে সংস্থাটি। ঢাকা সফররত আইএমএফ প্রতিনিধি দলটি রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে এসব কথা বলেছে। প্রতিনিধি দল বা মিশনটি আগামীকাল (সোমবার) অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সরকারের দেওয়া ভর্তুকির বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করার কথা রয়েছে। দেশে চলমান বৈদেশিক মুদ্রার সংকট মোকাবিলা করতে সরকার আইএমএফের কাছে বাজেট সহায়তা হিসেবে ৪৫০ কোটি ডলার চেয়েছে।
ওই সহায়তা দেওয়ার ব্যাপারে আলোচনা করতে প্রতিনিধি দলের প্রধান রাহুল আনন্দ অংশ গত ১২ জুলাই ঢাকায় এসেছেন। ১৪ জুলাই প্রতিনিধি দলের আরও কিছু সদস্য ঢাকায় আসেন। দলটি ১৩ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক, ১৪ জুলাই অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করেছে। রোববার থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক শুরু হয়েছে। চলবে ২১ জুলাই পর্যন্ত। আগামী ২২ জুলাই প্রতিনিধি দলটি ঢাকা ত্যাগ করবে।
ওই সময়ে তারা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গেও বৈঠক করবে। সূত্র জানায়, রোববার প্রতিনিধি দলটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে তিনটি বৈঠক করেছে। বাণিজ্যি মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক করেছে ও বাংলাদেশ ব্যাংকে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে প্রতিনিধি দলটি রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশের অর্থনীতিতে সৃষ্ট সংকট কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, সে বিষয়ে জানতে চেয়েছে। এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপগুলো তুলে ধরা হয়েছে। একই কারণে ইউরোপ ও আমেরিকাতে রপ্তানি কমার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এতে বৈদেশিক মুদ্রার যে সংকট হবে- তা কীভাবে মোকাবিলা করার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে- সে বিষয়েও জানতে চেয়েছে প্রতিনিধি দলটি। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রপ্তানির বাজার ধরে রাখতে নেওয়া পদক্ষেপগুলো তুলে ধরা হয়েছে। সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় ভারসাম্য রাখার বিষয়েও আইএমএফ সরকারের কাছে জানতে চেয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বাড়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রতিনিধি দল বলেছে, এ খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার বিষয়টি সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।
এ খাতে সংস্কারের বিষয়গুলো নিয়েও অগ্রগতি জানতে চেয়ে তারা।বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রভাব মোকাবিলার প্রস্তুতি নিয়ে কথা বলেছে দলটি। সোমবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকে ভর্তুকি নিয়ে আলোচনা শুরু হবে। সরকার বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি বাড়াতে চায়। কিন্তু তাতে আইএমএফের আপত্তি রয়েছে।
এ বিষয়ে দুই পক্ষই নিজ নিজ অবস্থান তুলে ধরবে সোমবারের বৈঠকে। রোববার বিকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যায় প্রতিনিধি দলের একটি অংশ। তারা সেখানে কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে বিভিন্ন তথ্য জানতে চেয়েছে। বিশেষ সামষ্টিক অর্থনৈতিক গতি প্রকৃতি সম্পর্কে তারা আলোচনা করেছে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন