যশোরে স্ত্রীকে বিষ পানে হত্যা করার পর এখন শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন শহরের স্টেডিয়ামপাড়ার কুখ্যাত সন্ত্রাসী শেখ সাহাবুর রহমান সাবু (৪০)। এই হত্যাসহ ১০ মামলার আসামি এই সন্ত্রাসীর ভয়ে এখন দিশাহারা শ্বশুর মোবারক গোলদার। তিনি কাজের জন্য বাড়ির বাইরেও যেতে পারছেন না।
এমন সব অভিযোগ এনে শনিবার (৪ ডিসেম্বর) যশোর কোতয়ালি থানায় জিডি করেন মোবারক গোলদার। জিডি নম্বর-১৮০। জিডিতে সাবুসহ তিনজনের কথা উল্লেখ করা হয়েছেন।
তিনি যশোর শহরতলীর খোলাডাঙ্গা মধ্যপাড়ার বাসিন্দা। মোবারক গোলদারের অভিযোগে, তার মেয়ে শারমিন আক্তার প্রীতির (৩০) সাথে ১২ বছর আগে বিয়ে হয় খড়কী স্টেডিয়াম পাড়ার মৃত শামছুর রহমানের ছেলে শাহাবুর রহমান সাবুর।
বিয়ের পর তিনি জানতে পারেন সাবু একজন শীর্ষ সন্ত্রাসী। দাম্পত্য জীবনে তাদের দুইটি সন্তান আছে। বিয়ের পর থেকে সাবু যৌতুকের জন্য নানাভাবে প্রীতির ওপর নির্যাতন চালিয়ে আসছিলেন। মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে তিনি ৭/৮ লাখ টাকা দেন সাবুকে। কিছুদিন চুপ থাকার পর ফের ২ লাখ টাকার জন্য চাপপ্রয়োগ করতো।
বিষয়টি নিয়ে তারা পারিবারিকভাবে মিমাংশায় বসেন। ওই মিমাংশা সভায় শাশুড়িকেও মারপিট করেন সাবু। তবুও মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে টাকা দেয়ার আশ্বাস দেন। তাই গত ২৯ নভেম্বর তারা মেয়ে সাবুর বাড়িতে সংসারের কাজ করছিল। বিকেলে টাকার জন্য তাকে মারপিট করে সাবু।
তার শরীরের সমন্ত জায়গায় আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়। কালশীরা দাগ পড়ে যায় শরীরের বিভিন্ন স্থানে। মারপিটের এক পর্যায়ে সাবু ও তার বোন শুকরিয়া বেগম ওরফে দুধচিনির (৬০) সহযোগিতায় প্রীতির হাত-পা দড়ি দিয়ে বেঁধে মুখে বিষ ঢেলে দেয়। সে সময় মৃত্যুর যন্ত্রনায় চিৎকার দিলে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে এসে প্রীতি দ্রুত যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে।
পরদিন ৩০ নভেম্বর প্রীতি মারা যায়। বলা হয় প্রীতি বিষপানে আত্মহত্যা করেছে। এই ঘটনায় তিনি সাবু ও তার বোন দুধচিনি এবং এই এলাকার সুজনের (২৮) বিরুদ্ধে কোতয়ালি থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। এই মৃত্যুর ঘটনায় স্টেডিয়ামপাড়ার সর্বস্তরের মানুষ ক্ষিপ্ত হন। তারা এলাকায় এই ঘটনার প্রতিবাদে ঝাটা মিছিল করে। দ্রত সাবুকে আটকের জন্য দাবি জানায়। কিন্তু পুলিশ জানিয়ে দেয় লাশের ময়নাতদন্তের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
মোবারক গোলদার জানিয়েছেন, থানায় অভিযোগ দেয়ার পর থেকে সাবু সার্বক্ষণিক তার পরিবারের ওপর নজর রাখে। প্রতিদিন ১০/১২টি মোটরসাইকেলে করে ২০/২৫জন তার বাড়ির আশেপাশে মহড়া দেয়। প্রতিনিয়ত নানা হুমকি ধামকি দেয়া হচ্ছে। এলাকার লোকজনকে বলে বেড়াচ্ছে ‘খুন একটি করলেও যা একাধিক করলেও তাই। কেউ কোন কিছু করতে পারবে না তার। বর্তমানে তিনি জীবিকার প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে যেতে পারছেন না। পরিবারের লোকজন ভীতসন্ত্রস্থ হয়ে দিন কাটাচ্ছে। তিনি এবিষয়ে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছেন জিডিতে।
মোবারক গোলদারের দায়েরকরা অভিযোগটি তদন্ত করছেন কোতায়ালি থানার এসআই কামাল হোসেন। তিনি জানিয়েছেন, দুই পক্ষের পরস্পর বিরোধী অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রীতির লাশের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে না পাওয়া পর্যন্ত ব্যবস্থা নিতে পারছি না। তবে শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে হুমকির ঘটনায় জিডি হয়েছে বলে শুনেছি। এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন