পদ্মার ভাঙ্গনে হাজার হাজার গৃহহীন পরিবারকে রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন

পদ্মার ভাঙ্গনে হাজার হাজার গৃহহীন পরিবারকে রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন
MostPlay

রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ ও রাজবাড়ী সদরে বালুদস্যুদের অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে পদ্মার ভাঙ্গনে গৃহহীন হয়ে পড়া হাজার হাজার পরিবারকে রক্ষা ও তাৎক্ষণিকভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করে বালুদস্যুদের আইনের আওতায় আনার দাবিতে আজ ১৪ অক্টোবর ২০২১ বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ ভূমিহীন আন্দোলন।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, “রাজবাড়ী জেলায় পদ্মা নদী থেকে অপরিকল্পিত ভাবে ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে জেলার হাজার হাজার একর জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ফলে জেলায় দিন দিন কমছে ভূমি আর বাড়ছে ভূমিহীনের সংখ্যা। সরকারের উদ্যোগ দেশে ভূমিহীন হ্রাস করা, আর রাজবাড়ীর বালু খেকোদের কর্মসূচী ভূমিহীন বৃদ্ধি করা। সিন্ডিকেট ও টেন্ডারবাজীর মাধ্যমে প্রতিবছর একই ব্যক্তি নামমাত্র মূল্যে মাই ম্যান দ্বারা বালুমহল ইজারা নিয়ে ইজারার নিয়ম—কানুন ভঙ্গ করে বিগত ১১/১২ বছর ধরে বালু লুটপাট করে দেশের বিভিন্ন জেলায় বালু বিক্রি করে শত শত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন এক বালুদস্যু। নদীর পাড় ভাঙ্গা ও গড়াতে উভয় ভাবেই শাখের করাতের মত টাকা যায় তার পকেটে।

একদিকে পদ্মার বালু লুটপাট করে হাতিয়ে নিচ্ছে বছরে শত শত কোটি টাকা, আরেকদিকে নদী ভাঙ্গন রোধ প্রকল্পর সরকারি প্রজেক্ট গুলোও টেন্ডারবাজীর মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। স্থানীয়দের কাছে তিনি বালু খেকো হিসাবে পরিচিত।” তারা বলেন, “লুটের এ সব টাকা যার পকেটে যায়, তার নাম সবাই জানে, কিন্তু তার নাম প্রকাশ করার সাহস কেউ করে না। করলেও তার পরিনতি হয় ভয়াবহ, তার পালিত ক্যাডার বাহিনীর হাতে হতে হয় লাঞ্চিত, মারপিট এমনকি হত্যার শিকার পর্যন্ত হতে হয়।

আবার কখনো মিথ্যা মামলা দিয়েও ফাঁসায়। তার কথায় সবাই ওঠে বসে, তার নেতৃত্বর বাইরে গেলে দলীয় কর্মিদের হতে হয় নির্যাতনের শিকার। সে রাজবাড়ী ও গোয়ালন্দবাসীর আতঙ্ক। যে লুটেরার কথা বলছি তিনি হলেন রাজবাড়ী জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইরাদত আলী। তার পা চাটা দিপক কুন্ডু ও শরিফ নামের দুই ব্যক্তি হলো বালু মহলের ইজারাদার। আর তিনি থাকেন ধরা ছোয়ার বাইরে।”

তারা আরো বলেন, “এখানেই শেষ নয়, গত সংসদ নির্বাচনের সময় কাজী ইরাদত তার আপন বড় ভাই এমপি কাজী কেরাম আলীর থেকে পদ ছিনিয়ে নিয়েছেন, এমনকি বসতবাড়ি থেকে তাকে বের করেও দিয়েছেন। লুটপাটের এসব কালো টাকা সাদা করতেই শহরের নতুন বাজার এলাকায় গত ১০/১১ বছর আগে করেছে তেলের পাম্প (কাজী ফিলিং স্টেশন)। আর পদ্মার বালু লুটপাটের হাজার হাজার কোটি টাকা দিয়ে ২/১ বছর আগে গড়ে তুলেছে “গোল্ডেশিয়া” নামের জুট মিল।

ঢাকায় বাড়ি—গাড়ি সহ প্রচুর সম্পদ। একযুগ আগেও কাজী ইরাদত আলীর চোখে পড়ার মত তেমন কোন সম্পদ ছিল না, বর্তমানে সে কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছে। যেন এসব দেখার কেউ নেই।” ভূমিহীন আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ বলেন, “এই বালু উত্তোলনের কারণে রাজবাড়ী জেলা সদরের চন্দনি ইউনিয়নের ৪০ ভাগ, মিজান পুর ইউনিয়নের ৬০ ভাগ, বরাট ইউনিয়নের ২০ ভাগ, গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের ৭০ ভাগ, দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ৭৫ ভাগ ও উজানচর ইউনিয়নের প্রায় ৪০ ভাগ এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

ফলে এসব অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ ভিটেমাটি হারিয়ে ভূমিহীন হয়ে বিভিন্ন রাস্তার ধারে, বেড়িবাঁধের ধারে ও রেল লাইনের ধারে নিদারুন কষ্টের মধ্য বসবাস করছে। নদীর পাড় রক্ষায় ও ভূমিহীনদের পূনর্বাসনের টাকা গচ্ছা যাচ্ছে সরকারের। বালু মহল ইজারা দিয়ে সরকারের বাৎসরিক আয় হচ্ছে ১/২ কোটি টাকা, আর নদীর পার রক্ষায় সরকারের ব্যায় হচ্ছে শত শত কোটি টাকা। ফলে রাষ্ট্রের প্রকৃত উন্নয়ন বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে।”

তারা আরো বলেন, “নদী গবেষণাকেন্দ্র চালুসহ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগকে দায়িত্ব দিয়ে নদী শাসন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। বেড়িবাঁধ দিয়ে প্লাবন রক্ষা হয় কিন্তু নদীর ভাঙ্গন রোধ করা যায় না। নদী শাসনই নদী ভাঙ্গন রোধ করার একমাত্র ব্যবস্থা।” তারা বলেন, “রাজবাড়ী পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে দেশ থেকে হারিয়ে যাবে রাজবাড়ী জেলার মানচিত্র। ব্যক্তি স্বার্থে নয়, দেশের ও দশের স্বার্থ রক্ষার্থে সরকারের কাছে আমাদের দাবি, রাজবাড়ী জেলাকে মানচিত্রে বাঁচাতে রাজবাড়ী সদর উপজেলার বালুমহলগুলোর টেন্ডার অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।”

বাংলাদেশ ভূমিহীন আন্দোলনের প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল আমিনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শেখ নাসির উদ্দিনের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন সাংগঠনিক উপদেষ্টা নয়ন আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক স্বপন ভূঁইয়া, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন আব্দুল জলিলসহ রাজবাড়ীর ভুক্তভোগী জনগন।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password