শাকিব খান ইস্যুতে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করলেন বুবলী

শাকিব খান ইস্যুতে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করলেন বুবলী
MostPlay

বিনোদন জগতে এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ঢাকাই সিনেমার তারকা শবনম বুবলী-শাকিব খান-অপু বিশ্বাস ইস্যু। ব্যক্তিজীবন নিয়ে বুবলী-অপু পৃথক সময়ে একেকজন একেক সময় নানা মন্তব্য করছেন। তাদের ইঙ্গিতমূলক মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে অনেকটা বাধ্য হয়েই সংবাদমাধ্যমে কথা বলেন ঢালিউড সুপারস্টার শাকিব খান।

চিত্রনায়ক শাকিব খানের সঙ্গে তৈরি হওয়া তার দ্বন্দ্ব ও দাম্পত্য জীবনের টানাপোড়েন নিয়ে বিস্তারিত জানাতে সংবাদ সম্মেলন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন শবনম বুবলী। কিন্তু সেই সংবাদ সম্মেলন তিনি আর করেননি। নায়িকা কেন এমনটা করলেন তা নিয়ে ভক্তদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছিল। তবে রোববার সন্ধ্যায় একটি দীর্ঘ ভিডিও বার্তায় নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেন বুবলী। সেখানে তিনি শাকিব খানের সঙ্গে নিজের, নায়িকা অপু বিশ্বাসের সম্পর্ক ও সন্তানসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন।

এদিন সব বিষয়ে এক এক করে কথা বলেন তিনি। বুবলী বলেন, ‘আমি ২০১৬ থেকে কাজ করছি। শাকিব খান, যিনি আমার সন্তানের বাবা, আমার স্বামী, তার সঙ্গে আমি কাজ শুরু করি বা সুযোগ পাই। উনি আমাকে মেন্টর হিসেবে গাইড করতেন। ওনার মাধ্যমেই আমার ফিল্মে আসা। ওই সময়ে আমি কেন, পুরো বাংলাদেশের কেউ কি জানতেন ওনার আগের কোনও সম্পর্ক নিয়ে? এটা কিন্তু আমরা কেউই জানতাম না।’

বুবলী জানান, শাকিব খান নিজেকে তার কাছে সিঙ্গেল হিসেবেই উপস্থাপন করেছিলেন। সেই সুবাদেই তাদের মধ্যে ভালোলাগা তৈরি হয়। কিন্তু পরবর্তীতে যখন অপু বিশ্বাস টেলিভিশন লাইভে এসে বোমা ফাটালেন, অভিযোগের তীর ছুটে আসে বুবলীর দিকেই। অপুর সেসময়ের আচরণে কষ্ট পেয়েছেন জানিয়ে বুবলী বলেন, ‘২০১৭-তে যখন বিষয়গুলো (অপু বিশ্বাসের সন্তান নিয়ে প্রকাশ্যে আসা) সামনে আসলো, তখন শাকিব খান নিজেও অবাক হয়েছিলেন। ওনার সঙ্গে যিনি সম্পর্কে ছিলেন, অপু বিশ্বাস, উনি অনেক সিনিয়র আমার থেকে।

অনেক বছর ধরে কাজ করেছেন। তাকে অবশ্যই আমি কাজের জায়গা থেকে সম্মান করি। তার সঙ্গে কখনই আমার সামনাসামনি দেখা হয়নি। ২০১৭ সালে তিনি লাইভে আসার আগে হঠাত আমাকে ফোন করেছিলেন এবং অনেক বাজে ব্যবহার করেছিলেন। আমি বুঝতে পারিনি কেন! ওই ব্যবহারের জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। ওই বাজে ব্যবহারের কথা তিনি নিজেও পরবর্তীতে স্বীকার করেছিলেন।’

বুবলী বলেন, আমার কষ্টের জায়গা ছিলো, আমি তো কিছুই জানি না। আমাকে যেভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছিলো, সেটা তো না। কেন আমাকে জড়িয়ে এভাবে বলা হচ্ছিলো! সে কারণেই আমি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম। এ বিষয়ে শাকিবের সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলেছিলেন দাবি করে বুবলী বলেন, ‘আমি শাকিব খানের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, পরে তিনি অনেক ইমোশনালি আমাকে বলেন যে, ‘অনেক দিন ধরেই কথাগুলো তোমাকে বলতে চাচ্ছিলাম। আমার কাছে মনে হয়েছে যে, তুমি তো এটাতে জড়িত নও।

অপু বিশ্বাসের সঙ্গে এক বছর ধরে আমার যোগাযোগ নেই। এটা অপুদি নিজেও লাইভ প্রোগ্রামে বলেছিলেন। আপনারা অনেকেই জানেন, শাকিব খানের কথা অনুযায়ী অপু বিশ্বাসকে তিনবার অ্যাবর্শন করতে হয়েছিলো। চতুর্থবার বাধ্য হয়েই তিনি সন্তান নিয়েছিলেন। এইসব ঘটনায় তো আমি নেই। তখন সিনেমাতেই আমার অস্তিত্ব নেই। কেন আমাকে দোষারোপ করা হলো যে, আমার কারণে কারও সংসার ভেঙেছে? আমার কারণে কারও সংসার, সম্পর্ক ভাঙেনি। আমি স্পষ্ট করে দর্শকের উদ্দেশে বলতে চাই।’

স্পষ্ট করে বুবলী বলেন, তাদের ডিভোর্স হয়ে যাওয়াটা, সেটাও তো সম্পন্ন তাদের ব্যক্তি স্বাধীনতা। তারা তো ম্যাচিওর মানুষ। এটা সম্ভব যে, কারো দ্বারা প্ররোচিত! কোনো সম্পর্কে সমস্যা হওয়ার পর একজন যখন আরেকটি সম্পর্কে যুক্ত হন, সেটার জন্য কি ওই নতুন মানুষ দোষী হয়ে যায়? আমাদের সমাজে অনেকেই নতুন সম্পর্কে যুক্ত হচ্ছেন না? তাদের যদি ভুল বোঝাবুঝি হয়, কোনো সমস্যা তৈরি হয়, তারা যদি সেই সম্পর্ক থেকে বের হয়ে যেতে চায়, এটার জন্য কি নতুন মানুষটি দায়ী?

শাকিব খান নিজেই আমাকে বলেছেন, তিনি এই সম্পর্কে (অপু বিশ্বাসের সঙ্গে) সুখী নন। তিনি তার জায়গা থেকে আমাকে অনেক কিছুই বলেছেন। যেটা আমি তার সম্মানার্থে আগেও বলিনি, আজও বলবো না। এটুকু বলি, আমি তো অনেক পরে এসেছি, তাদের সমস্যাগুলো তো অনেক আগে থেকেই। এক পর্যায়ে ছেলে শেহজাদ খান বীরের প্রসঙ্গে কথা বলেন বুবলী। বলতে বলতে তার চোখ ভিজে আসে। কান্না জড়ানো কণ্ঠে বলেন, ‘আমি চেয়েছিলাম ওর বিষয়টা একসঙ্গে সুন্দরভাবে সামনে আনতে। কিন্তু কোনওভাবে হচ্ছিলো না।

আমি তো প্রায় তিন বছর অপেক্ষা করেছি। ওর বিষয়টা সামনে আনার পর থেকে আমি কারও বিষয়ে কোনও অভিযোগ করিনি। এবং আজও করছি না।’ ছেলে শেহজাদের উদ্দেশে কাঁদতে কাঁদতে বুবলী বললেন, ‘বাবা শেহজাদ, মা হয়ত সারাজীবন তোমার পাশে থাকবো না। কিন্তু অন্যান্য মায়ের মতো আমিও তোমার জন্য অনেক কষ্ট করেছি বা করছি। তোমাকে পৃথিবীতে আনা, বড় করা। আমি সবসময় তোমার পাশে ছিলাম, আছি, থাকবো। তুমি মানুষের মতো মানুষ হবা। একটি কথা মনে রেখো, তোমার মা-বাবা তোমাকে খুব ভালোবাসে।

আমি হয়ত আমার জায়গা থেকে তোমার জন্য সেরাটা দিতে পারি না। কিন্তু আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি বাবা।’ ভিডিওর শেষের অংশে বুবলী বলেন, কিছু জিনিস শেয়ার করেছি আমার সন্তানের জন্য। ও তো বড় হচ্ছে এবং আপনারা অনেক সময় ওকেও বিভিন্ন বিষয়ে ইনভলব করে ফেলেন। ওর কোনো দোষ নেই, ও তো ছোট মানুষ। ওর তো তিন বছর প্রায়। আমরা চেয়েছিলাম যে, আমরা একসঙ্গে খুব সুন্দরভাবে ওকে সামনে আনার, হয়তো হচ্ছিল না কোনোভাবে। আমি তো অলরেডি তিন বছর ওয়েট করেছি।

ওর বিষয়টা সামনে আনার পরেও কিন্তু আমি কারো বিষয়ে কোনো অভিযোগ করিনি, আজকেও করছি না। না হলে ও হয়তো কখনো কোনো সময় প্রশ্ন করবে, মা তুমি তো কোনো কথা বলোনি কখনো। সন্তানকে নিয়ে আমেরিকায় থাকাকালীন অনেক টাকা খরচ হয়েছিলো বলে জানান বুবলী।

ওই সময়ে ১৫ হাজার ডলারের মতো দিয়েছিলেন শাকিব। বাকি অর্থ নিজে খরচ করেন নায়িকা। বুবলীর ভাষ্য, ‘সন্তানকে নিয়ে আমেরিকায় থাকার সময়টাতে অনেক বড় অংকের খরচ হয়েছে। প্রায় এক বছরের মতো থাকতে হয়েছিলো। তখন তিনি (শাকিব) ১৫ হাজার ডলারের মতো হেল্প করেছিলেন। বাকি প্রায় ৩০ হাজার ডলারের মতো আমি নিজে বহন করেছিলাম। টাকার অংকটাও বললাম, কারণ এটা নিয়ে অনেক ভুল নিউজ হয়েছে। গিফট বা উপহারের বিষয়গুলো আলাদা। তবে আর্থিক সহায়তা কখনও নিইনি।’

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password