সন্তানকে স্বীকৃতি দিতে ১০ কোটি টাকা চান জয়নাল

সন্তানকে স্বীকৃতি দিতে ১০ কোটি টাকা চান জয়নাল

স্বামীর বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ এনে তাঁতি বাজারের এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর স্ত্রী আফরিনা সুলতানা মুক্তা দাবি করেছেন, তার স্বামী একমাত্র কন্যা সন্তানকে অস্বীকার করে বিভিন্ন কুৎসা রটাচ্ছেন। তবে মুক্তার স্বামী জয়নাল আবেদীন খোকন বলছেন, আমি মেয়েকে অস্বীকার করছি না, মেয়ে আমার। মেয়ের জন্যে আমি সবকিছু করতে রাজি আছি। পরে স্বামী জয়নাল আবেদীন খোকনের সঙ্গে পক্ষ থেকে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি স্ত্রীর অভিযোগ অস্বীকার করেন।

শনিবার (২ মার্চ) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তন সংবাদ সম্মেলন করেন মুক্তা। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী জয়নাল আবেদীন খোকন বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির জয়েন্ট সেক্রেটারি। কিন্তু আজ ধর্মের লেবাসধারী প্রতারক স্বামীর চরম প্রতারণার শিকার হয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমার পরিবার, মান-সম্মান, টাকা, ব্যবসা সব হাতিয়ে নিয়েছে। সর্বশেষ আমাদের একমাত্র কন্যা সন্তানকে অস্বীকার করে বিভিন্ন কুৎসা রটাচ্ছে।’

‘সন্তানকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য আমার কাছে ১০ কোটি টাকা দাবি করা হচ্ছে। তা না হলে সন্তানের স্বীকৃতি তো দেবেই না উল্টো আমাকে ও আমার শিশু সন্তানকেও প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হচ্ছে। তাই আমি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি,’ বলেন আফরিনা সুলতান মুক্তা।

তিনি বলেন, ‘আমি একজন আধুনিকা সচ্ছল স্বর্ণের ব্যবসায়ী ছিলাম। পৈত্রিক সূত্রে এই ব্যবসা শুরু করি এবং সেই সুবাদে খোকনের সঙ্গে পরিচয়। তিনি জামাতের (তাবলিগ জামাত) একজন আমির এবং সুন্নতের লেবাসধারী ছিলেন। বিভিন্ন সময়ে ধর্মীয় ফতুয়া এবং ব্যবসায়িক ও পারিবারিক জীবন সম্পর্কে ধর্মীয় বিভিন্ন পরামর্শ ও আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তার সঙ্গে একটা বিশ্বাস ও ভালো লাগার সম্পর্ক তৈরি হয়। একপর্যায়ে আমরা দু’জন বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিষয়টি আমার বাবাকে জানালে বাবা তার সঙ্গে ১৫-২০ মিনিটের একটি বৈঠক করেন। এর পরই বাবা খোকনকে বিয়ে না করার জোর বিরোধিতা করেন।’

‘কিন্তু আমি খোকনের ওপর এতটাই অন্ধবিশ্বাসী ছিলাম যে কোনো আদ্যোপান্ত চিন্তা না করে সকল বাঁধা উপেক্ষা করে তাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিই। খোকনের ভাষ্যমতে, তাদের জয়েন্ট বিজনেস। কিন্তু তার কাছে কোনো টাকা নাই। তাই বিয়ের পরবর্তী বাসস্থানের জন্য আমি তাকে এক কোটি টাকা যৌতুক দিয়ে মাত্র ১০১ টাকা কাবিনে বিয়ে করি। বিয়েতে কবুল বলতে খোকন এক লাখ টাকা নেয়’, বলেন মুক্তা।

বিয়ের পর গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে যায় মুক্তার। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিয়ের কিছুদিন পর আমি গর্ভবর্তী হয়ে পড়লে খোকনের নিষ্ঠুর রূপ আমার সামনে বেরিয়ে পড়ে। তার প্রথম স্ত্রী ও পরিবারের লোকদের পরামর্শে পরিকল্পিতভাবে অসুস্থ অবস্থায় আমাকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে আমার সৎ ভাই-বোনদের সঙ্গে মিলে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে। একপর্যায়ে আমার পেটের সন্তান নষ্ট হয়ে যায়।’

বিয়ের ৬ মাস পর খোকনকে তালাক দেন মুক্তা। খোকনকে তালাক দেয়া প্রসঙ্গে আফরিনা সুলতানা মুক্তা বলেন, ‘আমি খোকনের এমন আচরণে অতিষ্ট হয়ে বিয়ের ৬ মাসের মাথায় তাকে তালাক প্রদান করি। কিন্তু খোকন বলে, তার পরিবারের লোকদের ষড়যন্ত্র ও তাবিজ-কবজের জন্য তিনি এমন নিষ্ঠুর ব্যবহার করেছেন। ধর্মের দোহাই দিয়ে আমার কাছে ক্ষমা চেয়ে ২ মাস পর আমাকে আবার বিয়ে করেন।’

দ্বিতীয়বার বিয়ের পরও খোকনের নির্যাতন অব্যাহত থাকে জানিয়ে ভুক্তভোগী এই নারী জানান, বিয়ের (দ্বিতীয় বিয়ে) ৬-৭ মাস পর তিনি গর্ভবতী হয়ে পড়েন। এরপর খোকন তার প্রথম স্ত্রীর গাড়িচালককে তাকে দেখাশোনার জন্য নিয়োগ করেন। কিছুদিন পরেই তিনি পুনরায় গর্ভপাত করলে খোকন তার সঙ্গে অমানবিক ও অশোভন আচরণ শুরু করেন। এতে তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েন।

‘তখন জিন আছে, তদবির করতে হবে-এমন কথা বলে আমার স্বামী ওই গাড়িচালক দিয়ে একজন হুজুরকে বাসায় পাঠান। তার তদবিরে খোনের আচারণে পরিবর্তন আসতে শুরু করে। আসলে সে একটা নাটক তৈরি করেছিল আমাকে ফাঁদে ফেলার জন্য। পরে তদবিরের একপর্যায়ে ওই গাড়িচালক ও হুজুর আমার বাসা থেকে ৭৮ ভরি স্বণালঙ্কার লুট করে নিয়ে যায়’, বলেন মুক্তা।

আফরিনা সুলতানা মুক্তা বলেন, ‘এ ঘটনা আমার স্বামীকে জানালে তিনি ওদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি এবং র‌্যাব আসামিদের গ্রেফতার করতে গেলে আমার স্বামী তাদের টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করেন। সেই সঙ্গে আমাকে মামলা বা কোনো ব্যবস্থা না নেয়ার জন্য হুমকি দেন। আমি স্বর্ণ ডাকাতদের গ্রেফতারে পুরস্কার ঘোষণা করলে ডিবির এডিসি নাজমুল তাকে (ডাকাত মোতালেব) গ্রেফতার করে থানায় পাঠিয়ে মামলার ব্যবস্থা করে দেন। মামলা চলাকালীন আসামির কল রেকর্ডে দেখা যায়, খোকনের প্রথম স্ত্রীর যোগসাজশে তারা এসব কাজ করেছেন।’

‘খোকনের এমন অনৈতিক কার্মকাণ্ড দেখে তাকে দ্বিতীয়বার তাকে স্থানীয় কাউন্সিলর অফিসে তালাক দিলে তিনি কোরআনের শপথ করে নিজেকে শুধরে নিতে ২ মাস সময় চেয়ে পরের দিনই তালাক স্থগিত করান। পুনরায় আমি তাকে বিশ্বাস করে শেষ সুযোগ হিসেবে সংসারে ফিরে আসি এবং গর্ভধারণ করি। হঠাৎ একদিন তার প্রথম স্ত্রী তার যোগসাজশে আমার বাসায় এসে প্রায় ৭-৮ ঘণ্টা খোকনের উপস্থিতিতে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে। ২০১৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আমার কন্যা সন্তানের জন্মের পর থেকে খোকনের পৈশাচিক রূপ প্রকাণ্ডরুপে প্রকাশ পায়। আমাকে শারীরিক, মানসিক ও আর্থিকভাবে অত্যাচার শুরু করেন। এখন সমাজে আমার বাচ্চাকে অস্বীকার করছেন’-যোগ করেন মুক্তা।

মুক্তার অভিযোগের বিষয়ে জানতে তার স্বামী জয়নাল আবেদীন খোকনের সঙ্গে  পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘মেয়ে আমার। মেয়েকে অস্বীকার করার প্রশ্নও আসে না। মেয়ার জন্য যা কিছু করার দরকার আমি করব।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু ও (মুক্তা) আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছে, তাই ওর সঙ্গে আমি আর সংসার করব না।’

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password