শিবপুরে পরকীয়ার বলি প্রবাস ফেরত স্বামী , এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে আসামীরা

শিবপুরে পরকীয়ার বলি প্রবাস ফেরত স্বামী , এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে আসামীরা

নরসিংদী : প্রবাসের কষ্টার্জিত টাকায় স্ত্রী সন্তানদের মুখে হাসি ফুটিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করার স্বপ্ন পুরণ হলোনা। পরকিয়া প্রেমের বলি হয়েছেন প্রবাস ফেরত আনোয়ার হোসেন। খুনের ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে স্বামী পরিবারের লোকজনের উপর মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করছে স্ত্রী সুমি বেগম। উচ্চ বিলাসী স্ত্রী ও তার পরকিয়ার প্রেমিকদের হাতে খুন হয়েছে আনোয়ার এমন অভিযোগ তার পরিবারের সদস্য ও পাড়া প্রতিবেশীদের।

এলাকাবাসী ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায় প্রায় ১৩বছর পূর্বে সৈয়দনগর গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলী ভূইয়ার পুত্র আনোয়ার হোসেন এর সাথে একই উপজেলার মিয়ারগাঁও গ্রামের মৃত আনোয়ার হোসেন ওরফে টুকু মিয়ার মেয়ে মোসাঃ সুমি বেগম (৩০) এর বিয়ে হয়। আনোয়ার সৌদী প্রবাসী হলে অধিকাংশ সময় ফোনে সুমি বেগম অজ্ঞাত নামা লোকজনের সাথে কথাবার্তা বলতো । কাউকে কিছু না বলে যেখানে সেখানে ইচ্ছে মতো চলাফেরা করতো। এক পর্যায়ে সুমি বেগম তার দুই সন্তান ও যাবতীয় মালামাল নিয়ে শ্বশুর বাড়ী থেকে তার পিত্রালয়ে চলে যায়। পরে পিত্রালয় থেকে শিবপুর উপজেলা শহরের বিভিন্ন স্থানে ভাড়া বাসায় অবস্থান করতে থাকে। সর্বশেষে তার ইচ্ছামতো শিবপুর থানাধীন বানিয়াদিস্থ সালাউদ্দিন গংদের মালিকানাধীন “স্বপ্নের আবাসন” নামক ৬ তলা বাড়ীর ৩য় তলায় ফ্লাট বাসা ভাড়া নিয়ে সেখানে বসবাস করতে থাকেন। এ বাসায় একাধিক যুবক পুরুষ নিয়মিত আসা যাওয়া করতেন। স্থানীয় প্রভাব থাকায় তাদের অবাদ মিলামিশার বিষয়ে কেউ জিজ্ঞাসা করার সাহস পেতো না।

এদিকে ১২/১৩ বছরের প্রবাস জীবনে আনোয়ার একাধিকবার ছুটিতে স্বল্প সময়ের জন্য দেশে আসলেও স্ত্রীর পরকীয়ার বিষয়টি জানতে পারেনি। প্রবাসে থাকা অবস্থায় স্ত্রী সুমি বেগমের আপত্তিকর ও বে-পরোয়া চলাফেরার বিষয়ে লোকমুখে জানতে পারে আনোয়ারের পরিবারের লোকজন। তাদের পারিবারিক শান্তির কথা ভেবে আনোয়ারকে কেউ তার স্ত্রীর অসামজিক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে জানায়নি।

গত ২৪মে/২০২১ পরিবারের কাউকে না জানিয়ে আনোয়ার সৌদী আরব থেকে দেশে ফিরে শিবপুরে স্ত্রীর ভাড়া করা ফ্লাট বাসায় উঠে। ২৭মে আনোয়ার তার সৈয়দ নগরের বাড়ীতে এসে পরিবারের লোকজনের সাথে দেখা করেন। এদিন আনোয়ার তার স্ত্রী সুমি বেগমের পরকীয়ার বিষয়টি টের পেয়ে ভাইদের সাথে আলাপ করেন এবং বাড়ীতে ৪তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে বিল্ডিং নির্মাণ করে সেখানে বসবাসের কথা জানান। পরে সে স্ত্রী সন্তানদের কাছে শিবপুর চলে যায়।

এদিন রাতেই আনোয়ার মারা যায় বলে স্ত্রী সুমি বেগম তার ভাইদের ফোনে খবর দেয়। বড় ভাই রুহুল আমিন খবর পেয়ে শিবপুর গিয়ে আনোয়ারকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার আনোয়ারকে মৃত ঘোষণা করে। ভাইয়ের মৃত্যুর বিষয়টি সন্দেহ হলে রুহুল আমিন আইনগত বিষয়ে জানতে থানায় গেলে এ সুযোগে স্ত্রী সুমি বেগম তার লোকজন নিয়ে তাড়ঘরি করে মৃত আনোয়ার এর লাশ তার পৈতৃক বাড়ী সৈয়দ নগরে নিয়ে গিয়ে দাফন করে ফেলে।

রুহুল আমিনের মৃত্যুর বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেনি তার পরিবারের লোকজন। পরিবারের লোকজন সুমি বেগমের পরকীয়া ও তার ভাইয়ের সাথে মৃত্যুর পূর্বরাতে সুমি বেগমের আচরণ সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে গণ্যমান্য ব্যক্তি বর্গের সাথে আলোচনা করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়।

এ খবর পেয়ে সুমি বেগম মৃত্যুর ঘটনা ধামাচাপা দিতে স্বামীর শোক ভূলে গিয়ে আদালতে স্বামীর অপর দুই ভাই ও পরিবারের লোজনকে আসামী করে নরসিংদী আদালতে আচমকা মামলা দায়ের করেন।

একদিকে ভাই হারানোর বেদনা অপর দিকে মামলার খবর পেয়ে মৃত আনোয়ারের বড় ভাই রুহুল আমিন তার পরিবাররের সদস্যরা দিশেহারা হয়ে দু:খের সাগরে ভাসতে থাকে। পরে রুহুল আমিন বাদি হয়ে ছোট ভাইয়ের মৃত্যু রহস্য উদঘাটন করতে সুমি বেগম ও তার পরকীয়া প্রেমিক এবং ভাইয়ের হত্যাকারীদের সম্ভাব্য আসামি করে আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটিকে আমলে নিয়ে শিবপুর থানাকে এফআইআর করার নির্দেশ দেন। রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা একাধিক সংবাদপত্র ও অনলাইন মিডিয়া প্রকাশিত হয়। কিন্তু আসামী এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে।

মৃত আনোয়ারের প্রতিবেশী ও তার পরিবারের সদস্যরা বলেন, সুমি বেগম পরকীয়ায় আসক্ত ছিলেন। সে দিন রাত তার ইচ্ছেমতো চলাফেরা করতো। একাধিক পুরুষের সাথে তার অবাধ মেলামেশা ছিলো। আনোয়ার এবার বিদেশ থেকে এসে স্ত্রীর কাছে তার পাঠানো টাকার হিসাব চায়। এ নিয়ে তাদের মাঝে ঝগড়া হয়েছে। তার স্ত্রীর পরকীয়ার বিষয়টি পরিবারের লোকজনকে সে জানিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে আনোয়ারের কাছে এবার অনেক টাকা ছিলো । সেই টাকা দিয়ে সে তার পৈতৃক ভিটায় ৪তলা ভবন নির্মাণের কথা বলেছিলো। পরকীয়ার বিষয়টি জেনে ফেলায় ও মৃত্যুর পূর্বে আনোয়ারের কষ্টার্জিত টাকা হাতিয়ে নিয়ে স্ত্রী সুমি বেগম আনোয়ারকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনপূর্বক হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করছি। সুমি বেগম উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে শ্বশুরবাড়ীর লোকজনকে হয়রানি করার জন্য কুচক্রী মহলের পরামর্শে মিথ্যা মামলাটি দায়ের করেছে। এলাকাবাসী মিথ্যে মামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password