ডিবিতে আরিফকে দেখেই সাবরিনার কা’ণ্ড

ডিবিতে আরিফকে দেখেই সাবরিনার কা’ণ্ড

নমুনা পরীক্ষার নামে জা’লজালিয়াতির অ’ভিযোগ ত’দন্তে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) এবার সাবরিনা আরিফ চৌধুরী ও তার স্বামী আরিফুল হক চৌধুরীকে মুখোমুখি করেছে।

এ সময় আরিফকে দেখেই সাবরিনা চিৎকার করে ওঠেন। তার দিকে খেপে গিয়ে গালিগালাজ করতে থাকেন। আরিফকে উদ্দেশ করে বলেন- ‘তোর জন্যই আজ আমার এই অবস্থা।

তুই আমাকে শেষ করে দিয়েছিস। সবকিছু করে এখন আমাকে ফাঁ’সিয়েছিস।’ আরিফও পাল্টা জবাবে বলেন, ‘সব দোষ কি আমার? তুমি তো এ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ছিলে। তুমিও জানতে সবকিছু।’

গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে এভাবেই দুজনের মধ্যে কিছুক্ষণ চলে বা’কবিতন্ডা। গ্রে’ফতারের পর থেকে নিজেকে জেকেজির চেয়ারম্যান

হিসেবে অ’স্বীকার করতে থাকলেও আরিফের মুখোমুখি হয়ে সে বিষয়ে গতকাল চু’পসে যান সাবরিনা। আরিফ তাকে অ’ভিযুক্ত করে জেকেজির নানা কর্মকান্ডে

স’ম্পৃক্ততা ফাঁ’স করতে থাকলে ডা. সাবরিনার আর কিছুই বলার থাকে না। এক পর্যায়ে ত’দন্ত কর্মকর্তাদের সামনে মাথা নিচু করে বসে থাকেন।

জেকেজি বাসা থেকে সংগ্রহ করা করোনা পরীক্ষার নমুনা স্বাস্থ্য অধিদফতরে পাঠাত না। সংগ্রহ করা নমুনা ড্রেনে ও ওয়াশ রুমে ফেলে তা ন’ষ্ট করে ফেলা হতো। আদালতে প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারীর দেওয়া জ’বানবন্দিতে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

এদিকে জোবেদা খাতুন হেলথ কেয়ারের (জেকেজি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আরিফ চৌধুরীকে গতকাল আবারও চার দিনের রি’মান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য অনুমতি দিয়েছে আদালত। ঢাকার মহানগর হাকিম আবু সুফিয়ান মো. নোমান এই আদেশ দেন। এর আগে গত ১৩ জুলাই জেকেজির চেয়ারম্যান ও আরিফ চৌধুরীর স্ত্রী ডা. সাবরিনার তিন দিনের রি’মান্ড মঞ্জুর করে আদালত। গতকালই দুজনকে মুখোমুখি করা হয়।

ত’দন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রেফতারের পর আরিফ চৌধুরী দোষ চাপিয়েছেন স্ত্রী সাবরিনাসহ প্রতিষ্ঠানের চারজনের বি’রুদ্ধে। অন্যদিকে সাবরিনা বলেছেন, যা কিছু ঘটেছে তার দায় স্বামীর। তিনি জালজালিয়াতির বিষয়গুলো বুঝতে পারেননি। জেকেজিতে অপরাধ হয়েছে, এ ব্যাপারে তারা নিশ্চিত। কার দায় কতটুকু তা নির্ধারণে দুজনকে মুখোমুখি করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গে চুক্তির শর্ত ভে’ঙে প্রথমে টাকার বিনিময়ে নমুনা পরীক্ষা করা ও পরে ভু’য়া সনদ দেওয়ার অভিযোগে গত ২৩ জুন তেজগাঁও থানা পুলিশ জেকেজির সিইও আরিফুল হক চৌধুরীসহ ছয়জনকে গ্রে’ফতার করে। জেকেজির চেয়ারম্যান সাবরিনা শারমিন হুসেইন ওরফে সাবরিনা আরিফ চৌধুরী গ্রে’ফতার হন ১২ জুলাই। পরদিন মামলাটি ডিবিতে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত হয়।

ডিবি পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) গোলাম মোস্তফা রাসেল জানান, আরিফ চৌধুরীকেও রি’মান্ডে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। তারা কিছু বিষয় যাচাই-বাছাই করার জন্য জি”জ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে এসেছেন।

এদিকে গত ২৪ জুন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে জেকেজির কর্মচারী হুমায়ূন কবীর ১৬৪ ধারায় জ’বানবন্দি দেন। আদালত সূত্র জানায়, জ’বানবন্দিতে তিনি জানিয়েছেন, ওভাল গ্রুপের মালিক ও সিইও আরিফ চৌধুরী গত ২৬ মার্চ রাতে তাকে অফিসে ডেকে নেন এবং তাকে পিপিই ডিজাইন করতে বলেন। আরিফের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাসায় গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করা হয় এবং বাংলাদেশিদের জন্য ৫ হাজার টাকা ও বিদেশিদের জন্য ১০০ ডলার নেওয়া হয়। নমুনা সংগ্রহ করার পর তা স্বাস্থ্য অধিদফতরে না পাঠিয়ে নিজেরাই ড্রেনে বা ওয়াশ রুমে ফেলে ন’ষ্ট করে ফেলতেন।

হুমায়ূন কবীর নিজে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। সুস্থ হওয়ার পর আরিফ তাকে বাসায় বসে ভুয়া রিপোর্ট তৈরি করে পাঠাতে বলেন। হুমায়ূন কবীরের স্ত্রী তানজিনা পাটোয়ারীও জেকেজিতে কাজ করতেন। তিনিও আদালতে জ’বানবন্দি দিয়েছেন এবং ভুয়া করোনা রিপোর্ট তৈরির কথা স্বীকার করেছেন। তানজিনা পাটোয়ারী সেন্ট্রাল হসপিটাল নার্সিং ইনস্টিটিউটের নার্সিং ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে কাজ করতেন। তানজিনা গত ৪ জুন জেকেজি থেকে পদত্যাগ করেন এবং ১৪ জুন থেকে ১৯ জুন পর্যন্ত বাসায় বসে ভুয়া রিপোর্ট তৈরি করেন বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন। করোনা নমুনা সংগ্রহ ও রিপোর্ট তৈরির কাজে সমন্বয় করতেন মাসুম বিল্লাহ, তানিয়া ও রিদিতা নামের তিন জন। হুমায়ূন কবীর ও তানজিনা পাটোয়ারীকে গত ২৩ জুন গ্রে’ফতার করা হয়। বর্তমানে তারা কা’রাগারে আ’টক আছেন।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password