মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বানাজার এত দাপট!

মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বানাজার এত দাপট!
MostPlay

চট্টগ্রাম কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বানাজা বেগম। বহু সমালোচিত একটি নাম। নানা বিশেষণ তার নামের আগে পরে। এই মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের হুমকি-ধমকিতে প্রতিনিয়ত পরাস্ত কর্ণফুলী উপজেলা অফিসের কর্মচারী থেকে শুরু করে অফিসের কর্মকর্তা।

জানা যায়, জনপ্রতিনিধি হয়েও এই মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান একজন প্রভাবশালী ঠিকাদার। তার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম মেসার্স নিসাম কন্সট্রাকশন। কোন সড়কের কাজে তার মতের বিরুদ্ধে কিছু ঘটলেই অফিস থেকে বের করে দেওয়া কিংবা প্রাণহানিরও হুমকি দেন। তিনি একা নন, তার পিছনে পরিষদের চেয়ারম্যান খুঁটি হিসেবে কাজ করলেও মূলত এই বির্তকিত মহিলার স্বামী বহিরাগত কিছু বকাটে নিয়ে প্রায় সময় উপজেলায় ঘুরতে দেখা যায়।

অফিসারদের প্রায় সময় বানাজা বেগম ভূমিমন্ত্রীর ভয়
দেখিয়ে ক্রমাগত হুমকিতে রেখেছেন। ফলে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অফিসে আসতেও রাজি হচ্ছেন না অনেকে। দিনদুপুরে উপজেলায় মদ পান করে হট্টগোল করলেও বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা মিটিং ও আসছে না। সব জনপ্রতিনিধিরাও নীরব।

ফলে, এতে সরকার দলীয় নেতাকর্মী ও সংশ্লিষ্ট এলাকার সংসদ সদস্য ও ভূমিমন্ত্রীর সুনাম চরমভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ তুলেছেন। কেননা প্রয়াত আখতারুজ্জামান চৌধুরীর স্বর্ন ছিল কর্ণফুলী মডেল উপজেলা। অথচ এসব কারণে উপজেলায় কোন ভাল কর্মকর্তা আসতে চান না। আসলেও এসব দেখে বদলি নিয়ে চলে যান বলে পুরো উপজেলায় প্রচলন রয়েছে।
 
এদিকে, কর্মচারীরা কর্মকর্তাদের কাছে কোনোকিছু নিয়ে নালিশ করলেও ক্ষিপ্ত হন তিনি। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন বানাজা বেগম। কর্মকর্তাদের লাথি দিয়ে অফিস থেকে বের করে দেবেন। অফিসে এলে মারবেন বলে হুমকি ও দেন।

এসব কারণে নবনিযুক্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও আসতে না আসতে অতিষ্ট বলে জানা যায়। তার ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের মাত্রা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে এবং বিষয়টি অফিসের নিয়মিত কার্যক্রমের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। তিনি বিভিন্ন সময়ে মন্ত্রী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের প্রভাব দেখিয়ে অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভয় দেখান। বেশ উচ্ছশৃঙ্খল মহিলা হওয়ায় কেউ কথাও বলেন না।

এসব ঘটনার ফলে কর্মচারী ও সেবাগ্রহীতাদের কাছে কর্ণফুলী তথা অফিসের মর্যাদা বিশেষভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে। যা একটি সরকারি অফিসের জন্য মোটেই কাম্য নয়। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও নির্বাচন অফিসার এ ধরনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের প্রতিবাদ ও তার শাস্তির কথা জানান।
           
এই মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি চরলক্ষ্যা ইউনিয়নের হতদরিদ্র মহিলাদের রাস্তায় মাটি কাটার কাজ দিবে বলে ১৮ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এনিয়ে ভুক্তভোগি মহিলা জেসমিন আক্তার ও বুলু আক্তার ইউএনও'র কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর ২৫০০ টাকার উপহারে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তার প্রবাসী বোন ও ভাইয়ের নাম তালিকায় তুলে সুবিধা নিয়েছেন।

এলাকাবাসীরা জানায়, বানাজা বেগম এক সময় বিয়ে বাড়ির প্যাকেজ অনুষ্ঠানে নাচ গান করতেন। করেছেন বিউটি পার্লারের কাজও। সেখান থেকে আজ কোটিপতি হলেন কি করে তাও এক মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন! কেননা স্বামী আবুল কাসেম ভুইয়া প্রকাশ মামুনুর রশিদ একজন বেকার পুরুষ। বেকার স্বামীর এক স্ত্রীর রাতারাতি এত টাকা কোথা থেকে আসল তা দুদকের খতিয়ে দেখা দরকার।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বানাজা বেগম বলেন, আমার জনপ্রিয়তায় ক্ষিপ্ত হয়ে কিছু কুচক্রীমহল এসব প্রচার করছেন। আমি কোন ঠিকাদার কাজ করিনা।ওটা আমার ভাইয়ের প্রতিষ্ঠান।

উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী'র কাছে এসব বিষয়ে জানতে তাইলে তিনি বলেন, আমি এই মহিলার বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি নই। অন্য কোন বিষয় থাকলে জানাতে পারেন বলে ফোন লাইন কেটে দেন'।

প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুলাই দুপুরে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তার স্বামীসহ এলজিইডি অফিসে উপস্থিত হয়ে নিজ প্রতিষ্ঠানের ফাইল ছাড়াতে গিয়ে অফিসের হিসাবরক্ষক মো. রফিক উল্যাহকে লাঞ্ছিত করে মারধর করেন। এঘটনায় তার পরের দিন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বানাজা বেগম (৪০) ও তার স্বামী মামুনুর রশিদ (৪৫) সহ আরো ৭/৮ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে কর্ণফুলী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password