বগুড়ার শাজাহানপুরের ফুলতলা এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধকে কেন্দ্র করে বিরোধে ১০ বছরে ক্ষমতাসীন দলের সংস্পর্শে থাকা দুই গ্র“পের প্রধান দু’জন শাহীন ও মজনুসহ তাদের আট স্বজন নৃশংস হত্যার শিকার হয়েছেন। সর্বশেষ সোমবার বিকালে হামলার শিকার হন শাহীন গ্র“পের ফোরকান আলী। মঙ্গলবার ভোরে তিনি বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের আইসিইউতে মারা গেছেন।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, ফোরকান আলী শাজাহানপুর উপজেলার ফুলতলা বাজার এলাকার মৃত মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সাত্তারের ছেলে। তার বিরুদ্ধে দুটি হত্যা, একটি চাঁদাবাজিসহ বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। তিনি ওই এলাকায় নিহত সন্ত্রাসী শাহীন বাহিনীর অন্যতম সদস্য। সরাসরি রাজনীতি না করলেও ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ সংগঠনের মিছিল ও সভায় তাকে দেখা যায়। সোমবার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ফুলতলা বাজার এলাকায় ফোরকানের সঙ্গে পূর্বশত্র“তা ও বালু ব্যবসা নিয়ে নিহত সন্ত্রাসী রঞ্জু প্রামাণিকের ছেলে সুমন প্রামাণিক ও আত্মীয় মানিকের বাগবিতণ্ডা হয়। তখন ফোরকান ক্ষিপ্ত হয়ে মানিককে মারধর করেন।
পরে সুমন, মানিক ও তার লোকজন ফুলতলা বাজার এলাকায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে ফোরকানের মাথায় আঘাত করে পালিয়ে যায়। তাকে অচেতন অবস্থায় বগুড়ার শজিমেক হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার ভোর ৫টার দিকে ফোরকান মারা যান। মা শাহানা বেওয়ার দাবি, তার ছেলে ভালো হয়ে গিয়েছিল। দুপুরে ভাত খেয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। প্রতিপক্ষ মজনুর লোকজন তাকে রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে কুপিয়ে জখম করেছে। তিনি তার ছেলের ওপর হামলাকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
এদিকে ফোরকান খুন হওয়ার পর শাহীন গ্র“পের সদস্যরা উত্তেজিত হয়ে উঠেছে। তারা প্রতিশোধ নিতে যে কোনো সময় হত্যাকারীদের বাড়িঘরে হামলা বা খুনের বদলা নিতে পারে। পুলিশ মোতায়েন থাকলেও এলাকার পরিস্থিতি থমথমে। শাজাহানপুর থানার ওসি আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, ফোরকানের বিরুদ্ধে দুটি হত্যা, একটি চাঁদাবাজিসহ ৪-৫টি মামলা রয়েছে। পূর্বশত্র“তার জেরে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে কুপিয়েছিল। তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। এ ব্যাপারে মামলাও হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শাজাহানপুর উপজেলার ফুলতলা ও ফুলদীঘি এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের যুব সংগঠনের সাবেক নেতাকর্মী আমিনুর রহমান শাহীন ও মজনু প্রামাণিক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে শত্র“তা হলে দুজন আলাদা গ্র“প তৈরি করে। কোন্দলের জেরে ২০০০ সালের ফেব্র“য়ারিতে শাহীনের হাতে খুন হন মজনুর বাবার শুকুর আলী প্রামাণিক। এ খুনের বদলা নিতে ফুলদীঘি এলাকায় হর্টিকালচার সেন্টারে শাহীনকে নৃশংসভাবে হত্যা করে মজনু গ্র“প। পরে নিহত শাহীন গ্র“পের হাতে প্রথমে খুন হন মজনুর ভাতিজা শামীম আহম্মেদ বুশ।
একই বাহিনীর হাতে একটি বাড়ির ভেতরে খুন হন মজনু প্রামাণিক ও তার ভাতিজা নাহিদ প্রামাণিক। এর রেশ কাটতে না কাটতেই বাড়ির অদূরে খুন হন মজনুর ভাই রঞ্জু প্রামাণিক। এ হত্যাকাণ্ডের মধ্যে দুটি মামলার আসামি ফোরকান আলী। এছাড়া মজনু গ্র“পের হাতে খুন হন শাহীন গ্র“পের অন্যতম সদস্য এনামুল হক আকুল। এরপর শাহীন বাহিনী এলাকা থেকে বিতাড়িত হয়। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতে নিহত শাহীন গ্র“পের সদস্যরা এলাকায় ঢোকার চেষ্টা অব্যাহত রাখে।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন