অসহায় পরিবারের বাসায় তালা দিল বাড়িওয়ালা

অসহায় পরিবারের বাসায় তালা দিল বাড়িওয়ালা
MostPlay

রাজধানীর মিরপুরে মহামারী করোনায় কর্মহীন হয়ে পড়ে বাসা ভাড়া পরিশোধ করতে ব্যর্থ অসহায় এক ভাড়াটিয়া পরিবারের বাসায় তালিয়ে ঝুলিয়ে দেয় এক বাড়িওয়ালা। পরে পুলিশের সহায়তায় বাড়ির মালিককে ডেকে তালা খুলে ওই ভাড়াটিয়া পরিবারকে বাসায় তুলে দেয়া হয়েছে।

২৯ জুন (সোমবার) বিকেলে ডিএমপির শাহ্ আলী থানাধীন মিরপুর-১ নম্বর সেকশনের উত্তর বিশিলের ১০ নম্বর রোডস্থ মোমিন দেওয়ানের ৪৬/ক নম্বর বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগী নৌবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা মোঃ আজিজুল ইসলামের ছেলে মোঃ আশফাকুল ইসলাম জানান, আমার বাবা নৌবাহিনীর সাবেক একজন কর্মকর্তা। বর্তমানে ক্ষুদ্র একজন পরিবহন ব্যবসায়ী। শারীরিকভাবে অসুস্থ বাবাই আমাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি। আমি একটি কলেজে ইন্টারমিডিয়েট পড়ি এবং আমার ছোট বোন স্থানীয় শাহ আলী গার্লস স্কুলের নবম শ্রেনীর একজন ছাত্রী।

আমরা গত দশ মাস আগে উপরেল্লিখিত বাড়িতে মাসিক ১৬,৫০০ টাকা ভাড়া চুক্তিতে ভাড়াটিয়া হিসেবে উঠি। বিগত মাসগুলোতে আমরা বাসা ভাড়ার সকল টাকা রীতিমতো পরিশোধ করলেও হঠাৎ আমার বাবা স্ট্রোক করে অসুস্থ হয়ে পড়লে মা বোনকে নিয়ে আমরা খুবই বিপাকে পড়ে যাই। ইতোমধ্যে দেশে মহামারী করোনা ভাইরাসের থাবায় আমরা আরো বিপর্যস্ত হয়ে পড়লে গত সাত মাসের বাসা ভাড়া বকেয়া পড়ে যায়।

বিভিন্ন সংস্থার উপহার দেওয়া ত্রাণসামগ্রীর বদৌলতে পরিবারের সকলে দুবেলা খেয়ে না খেয়ে মানবেতর দিনপাত করছি। তদুপরিও বকেয়া বাসা ভাড়া পরিশোধের উদ্দেশ্যে জমি বিক্রি করতে গত সপ্তাহে আমরা গ্রামের বাড়িতে যাই। কিন্ত এই মহাদূর্যোগের সময়ে কেউ জমি কিনতে রাজী না হলে স্বচ্ছল আত্মীয়-স্বজনদের নিকট হতে খুবই কষ্টে ২০ হাজার টাকা যোগাড় করে আজ ২৯ জুন সোমবার ভোরে ঢাকাতে পৌছে বাসার দরজায় অন্য তালা ঝুলানো দেখতে পেয়ে আমার মা খুবই হতাশ ও আতংকিত হয়ে পড়েন।

বাড়ির কেয়ারটেকার আমাদেরকে জানায়, বাড়িওয়ালা আমাদের বাসার তালা ভেঙ্গে বাসার ভেতরে ঢুকে কি কি রয়েছে তা পর্যবেক্ষণ করে নতুন তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। আপনারা বাসা ভাড়া বাবদ সমস্ত বকেয়া টাকা পরিশোধ না করলে আপনাদেরকে বাসায় ঢুকতে দেয়া হবে না। এমতাবস্থায় দুপুর পর্যন্ত আমার মা বাড়িওয়ালা মমিন দেওয়ানের হাতে পায়ে ধরলেও তিনি পুরো টাকা পরিশোধ না করলে কোনরকমে আমাদেরকে বাসায় ঢুকতে দেবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। আমি আমার মা ও বোনকে নিয়ে বিকেল পর্যন্ত না খেয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে অবশেষে পুলিশের দারস্থ হই।

এ প্রসঙ্গে বাড়িওয়ালা মোমিন দেওয়ান বলেন, তারা আগামী মাসের ভেতরে আমার সকল বকেয়া টাকা পরিশোধ করে আমার বাসা ছেড়ে না দিলে তাদের আসবাবপত্র আমি আটকে রেখে তাদরকে বাসা থেকে বের করেই দেবো। কেও আমাকে ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। কারন এটা আমার বাড়ি। আমার সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত। যদি এঘটনায় অন্য কারো জ্বলে তাহলে তার পকেট থেকে আমাকে এই টাকা পরিশোধ করুক। তা না হলে এবিষয়ে কারো নাক গলানোর প্রয়োজন নেই।

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে শাহ্ আলী থানার এস.আই মহিদুল ইসলাম জানান, এমন হৃদয়বিদারক অভিযোগ পেয়ে আমি সঙ্গীয় ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে গেলে বাসাটি তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পাই। বাড়িওয়ালা মোমিন দেওয়ানকে ডেকে বিষয়টি সমাধান করতে অনুরোধ করলো তিনি সমস্ত বকেয়া টাকা পরিশোধ না করলে তাদেরকে বাসায় ঢুকতে দেবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। পরে স্থানীয় সম্মানিত কিছু ব্যাক্তিবর্গের সহায়তায় তালা খুলে প্রতিমাসে বাসা ভাড়ার সাথে সাথে অতিরিক্ত পাঁচ হাজার টাকা করে বকেয়া টাকা পরিশোধ করবেন শর্তে ভুক্তভোগীদেরকে বাসায় তুলে দিতে সক্ষম হই।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password