কাটা মাথাটি কেন ২০০ বছর ধরে সংরক্ষিত?

কাটা মাথাটি কেন ২০০ বছর ধরে সংরক্ষিত?

শত শত বছর ধরে কাচের জারে শান্ত চোখে চেয়ে থাকা একটি কাটা মাথা সংরক্ষিত আছে। চোখের দৃষ্টি শান্ত এবং উদ্বেগহীন। মনে হচ্ছে আপনার দিকে তাকিয়ে আছে নিষ্পাপ একখানি মুখ। তবে এই নিষ্পাপ মুখের মানুষটি ছিলেন খুবই ভয়ংকর। তার নির্মমতাই তাকে পৃথিবীর কাছে নিদর্শন হিসেবে পরিচিত করিয়েছে।

পৃথিবীর ইতিহাসে অসংখ্য সিরিয়াল কিলারের ভয়ংকর গল্প নিশ্চয়ই শুনেছেন। অনেকের কথা হয়তো পড়েছেন। কিন্তু এই সিরিয়াল কিলারের নির্মমতার গল্প আপনার মনে ভয় ধরিয়ে দেবে। ১৮২ বছর পরেও তার কথা উঠলে মানুষ ভয় পেয়ে যায়। যখনই তার কথা বলা হয় তখনই আতঙ্ক ছড়ায়। টাকা রোজগারের লোভে নিষ্ঠুরতরা সব সীমা অতিক্রম করেছিলেন তিনি। অবশেষে তাকে ফাঁসি দেওয়া হয়, তবে তার মাথা এখনো সংরক্ষণ করা আছে।

এই কাটা মাথাটি পর্তুগালের সিরিয়াল কিলার ডিয়োগো আলভেস। ১৮১৯ সালে স্পেনের গ্যালিসিয়া শহরে একটি দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পরিবার খুব দরিদ্র হওয়ায় পড়াশোনা করতে পারেননি তিনি। কাজের সন্ধানে অনেক দিন ঘুরে অবশেষে পর্তুগালের লিসবন সিটিতে এসে পৌঁছান তিনি। কিন্তু সেখানেও কাজ জোটেনি তার। অর্থের জন্য শেষমেষ অপরাধ জগতে পা বাড়ান ডিয়াগো। শস্য ও সবজি বিক্রি করে বাড়ি যাওয়া কৃষকদের লুটপাট শুরু করেন। একটি সেতু ঘিরে তার ঘাঁটি তৈরি হয়।

সেই জায়গাটাকে তিনি অপরাধের ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নেন। সেখান দিয়ে যাতায়াতকারীদের টার্গেট করতে শুরু করেন। ডিয়োগো পরে এতটাই হিংস্র হয়ে ওঠে যে লুটপাটের পর সে মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যা শুরু করেন। হত্যার পর ২১৩ ফিট উঁচু সেতু থেকে মৃতদেহ পানিতে ফেলে দিতেন।

১৮৩৬ থেকে ১৮৩৯ সাল পর্যন্ত সে প্রায় ৭০ জনকে হত্যা করেছিলেন ডিয়োগো। প্রতিবারই পুলিশ খুনের ঘটনাগুলোকে আত্মহত্যার মামলা বলে বন্ধ করে দিত। পুলিশ মনে করত, আর্থিক অনটনের কারণে কৃষকরা আত্মহত্যা করছে। তবে ব্রিজের নিচে পাওয়া কয়েকজনের মৃতদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশের টনক নড়ে। তাদের গায়ে গভীর আঘাতের চিহ্ন ছিল। এরপরই সন্দেহ হয় পুলিশের। কারণ এমন গভীর চিহ্ন অস্ত্র দিয়ে হামলার পরই হতে পারে।

পুলিশ তদন্ত শুরু করলে কয়েকদিনের মধ্যেই নিশ্চিত হয়ে যায়, কৃষকদের হত্যার পরই সেতু থেকে নিচে ফেলে দেওয়া হয়েছে। খুনির খোঁজে পুলিশ হন্যে হয়ে ঘুরতে থাকে। পুলিশ খোঁজ শুরু করে সেই খুনির। এদিকে ডিয়োগো মাটির নিচে ডেরা করে গা ঢাকা দেয়। কিছুদিন লুটপাট বন্ধ করে সে নিজের দল গঠন করেন।

সেই দলের অধিকাংশই ছিল দরিদ্র পরিবারের সন্তান। এবার শহরে বসবাস করা ধনী পরিবারগুলোকে টার্গেট করতে শুরু করে ডিয়োগো। প্রথমে রেইকি করা হত, তারপর লুটপাট করে মানুষ খুন করে পালিয়ে যেতেন তারা। এরপর পুলিশের ওপর চাপ বেড়ে যায়। এদিকে সে তার দলবল নিয়ে একজন বিখ্যাত ডাক্তারের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে চারজনকে হত্যা করে।

সেই খুনের পরই পুলিশ রাস্তা আটকে তাকে আটক করে। ডিয়োগো নিজের অপরাধ স্বীকার করে নেন। ডিয়োগো জানান, সে কতজনকে হত্যা করেছে সেটা তার মনেই নেই। ১৮৪১ সালে ডিয়োগোকে তার অপকর্মের জন্য ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল। সেই সময়ে ফ্রেনোলজি অধ্যয়নের প্রচলন ছিল। তখন মানুষের মন অধ্যয়ন করা হত। বিশেষজ্ঞরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তারা ডিয়োগোর মন অধ্যয়ন করবেন।

অপরাধীরা কীভাবে চিন্তা করেন তা খুঁজে বের করা হবে। সেই কারণে ফাঁসির পর ডিয়োগোর মাথা কেটে লিসবন বিশ্ববিদ্যালয়ে সংরক্ষণ করা হয়। তার মস্তিষ্ক নিয়ে গবেষণা হয়েছে কি না তা নিশ্চিত করে অবশ্য বলা যায় না। তবে এত বছর পরও বিশ্ববিদ্যালয়ে তার মাথা একইভাবে রাখা রয়েছে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password