বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তা: একটি সমাজতাত্ত্বিক অধ্যয়ন
বাবুল চন্দ্র সূত্রধর
বর্তমান বিশ্বে একদিকে চলছে অস্ত্রের অশুভ ঝনঝনানি, বাণিজ্যের অসুস্থ ও অপরিণামদর্শী প্রতিযোগিতা এবং সর্বোপরি যেনতেনভাবে ক্ষমতা প্রদর্শনের মাধ্যমে প্রভাব প্রতিষ্ঠা করার যুদ্ধ। অপরদিকে চলছে ক্ষুধার্ত মানুষের হাহাকার, সন্তানের মুখে খাবার দিতে না পারার লজ্জা ও মানবেতর জীবন যাপনে বাধ্য হওয়ার অপরাধবোধ। অস্ত্রে, বাণিজ্যে কিংবা ক্ষমতা প্রদর্শনে শব্দ আছে, আওয়াজ আছে, কান্নায় শব্দের জোর সেভাবে উত্থিত হয় না, লজ্জা ও অপরাধবোধ এই শব্দকে আরোও দুর্বল করে ফেলে। শব্দ বা আওয়াজ নিয়ে আলোচনা হয়, নিতান্ত দায়ে না পড়লে নি:শব্দ বিষয় নিয়ে কেউ কথা বলতে চায় না।
কথাগুলো বলতে হচ্ছে বিশ্ব খাদ্য দিবসের কথা স্মরণ করে। মানুষের মৌল অধিকারের মধ্যে খাদ্যের স্থান অনন্য।
প্রথমেই খাদ্য নিরাপত্তা বলতে আমরা কি বুঝব তা দেখে নিই। ১৯৯৬ সনে বিশ্ব খাদ্য সম্মেলনে খাদ্য নিরাপত্তার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ”যখন সকল মানুষের, সর্বদা, পর্যাপ্ত, নিরাপদ এবং পুষ্টিকর খাবারের ভৌত ও অর্থনৈতিক প্রবেশগম্যতা থাকে যা তাদের খাদ্যের তালিকাগত চাহিদা এবং একটি সক্রিয় ও সুস্থ জীবনের জন্য খাদ্য পছন্দ পূরণ করে।” ২০১৫ সন থেকে খাদ্য নিরাপত্তার ধারণাটি মূলত খাদ্যের গুণমান এবং পুষ্টির চেয়ে খাদ্য ক্যালোরির ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে। আবার ১৯৭৪ সনে খাদ্যের সরবরাহের ওপর অধিক জোর দেওয়া হয়েছিল খাদ্য নিরাপত্তার সংজ্ঞায়।
এর বিপরীত অবস্থাটি হল খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা। খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার অনেক কারণ রয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে ধরা হয় খাদ্যের উচ্চ মূল্য এবং যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সরবরাহে ব্যাঘাত। এছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তন, পানির অভাব, ভূমির অবক্ষয়, কৃষি রোগ, মহামারী এবং রোগের প্রাদুর্ভাব রয়েছে, যা খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার দিকে পরিচালিত করতে পারে। খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার প্রভাবের মধ্যে রয়েছে ক্ষুধা এবং এমনকি দুর্ভিক্ষ। দীর্ঘস্থায়ী খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা ক্ষুধা এবং দুর্ভিক্ষের উচ্চ মাত্রার ঝুঁকিতে পরিণত হয়। শৈশবে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষুধা এবং অপুষ্টি শিশুদের বৃদ্ধি ব্যাহত করতে পারে।
সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করে সকল মানুষের জন্য বাসযোগ্য একটি শান্তিময় বিশ্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০১৫ সন থেকে জাতিসংঘের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে চলছে। ১৭টি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে জাতিসংঘ সারা বিশ্বে বিভিন্ন জাতিকে এগুলো বাস্তবায়নের জন্য নির্দেশনা প্রদান করেছে। এই লক্ষ্যমাত্রাসমূহের দ্বিতীয়টি খাদ্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত, যার শিরোনাম, ‘ক্ষুধার অবসান, খাদ্য নিরাপত্তা ও উন্নত পুষ্টিমান অর্জন এবং টেকসই কৃষির প্রসার’। এই লক্ষ্যটির ভেতরে রয়েছে, ২০৩০ সনের মধ্যে সকল মানুষের ক্ষুধার অবসান ঘটানো, যেখানে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে বসবাসকারী, দরিদ্র, নারী ও শিশুদের অগ্রাািধকার দেওয়ার নির্দেশনা এবং সেই লক্ষ্যে খাদ্যের উৎপাদন ও কৃষিব্যবস্থাকে টেকসই করে তোলা।
বাংলাদেশ চলমান টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নে স্বাক্ষরকারী দেশসমূহের অন্যতম। এর আগে জাতিসংঘের উদ্যোগেই পরিচালিত হয়েছিল সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি)। এমডিজি’তে বাংলাদেশের অর্জন প্রশংসনীয় হলেও এসডিজিতে সে ধারাবাহিকতা বজায় থাকে নি। আমরা এখন দেখব এসডিজি, বিশেষত খাদ্য ও ক্ষুধা নিরসনে বাংলাদেশের অবস্থান কিরূপ। একই সাথে উন্নত বিশ্বের দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, স্বল্প আয়ের দেশ বলে পরিচিত আফ্রিকার কিছু দেশ ও গোটা বিশ্বে ক্ষুধা ও খাদ্য পরিস্থিতি কি অবস্থায় রয়েছে।
বাংলাদেশ
গত বছরের অক্টোবর মাসে গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স (জিএইচআই) ক্ষুধা ও খাদ্যের বিবেচনায় বাংলাদেশ সহ ১২৭টি দেশের অবস্থান তুলে ধরে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। অপুষ্টির মাত্রা, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের উচ্চতা অনুযায়ী কম ওজন, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের বয়স অনুযায়ী কম উচ্চতা এবং শিশুমৃত্যুর হার- এই চারটি মানদণ্ডের নিরীখে সংস্থাটি দেশগুলোর অবস্থান নির্ণয় করে থাকে। ১২৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের স্থান ৮৪তম। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ১১.৯% অপুষ্টির শিকার; এই কারণে ২.৯% শিশু জন্মের পাঁচ বছরের মধ্যেই মারা যায় এবং ২৩.৬% শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
২০২৪ সনে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন প্রতিবেদন অনুসারে এসডিজি’র লক্ষ্য অর্জনে ১৬৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৭তম। এর আগের বছর ১৬৬টি দেশের মধ্যে ১০১তম এবং ২০২২ সনে ১৬৩টি দেশের মধ্যে ১০৪তম। জাতিসংঘের ্এই প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে বাংলাদেশের পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট: বাংলাদেশের অর্জন ও চ্যালেঞ্জসমূহ’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এখানে বলা হয়েছে, এসডিজি অর্জনে মোট ১০০ স্কোরের মধ্যে বাংলাদেশের পেয়েছে ৬৪ দশমিক ৩৫। এসডিজি’তে যে ১৬৯টি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তার মধ্যে মাত্র ২৯.৭% লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সঠিক পথে এগোচ্ছে বাংলাদেশ। বাকিগুলোর অর্জনের পরিস্থিতি সন্তোষজনক নয়। তা ছাড়া, এসডিজি অর্জন ত্বরান্বিত করার জন্য সরকার বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে কর্মবণ্টন করে একটি এসডিজি ম্যাপিং করেছিল। কিন্তু সে দায়িত্বের প্রতিবেদন সকল বিভাগ থেকে নিয়মিত পাওয়া যাচ্ছে না। কাজেই অর্পিত দায়িত্ব পালনে একটি মন্ত্রণালয় কতটা এগিয়ে বা পিছিয়ে আছে, সে বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া কঠিন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
২০২৪ সালের আমেরিকার কৃষি বিভাগ (ইউএসডিএ)-র এক সমীক্ষা অনুসারে ২০১৬ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার প্রকোপ ছিল ১১.১%; বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ খাদ্য উৎপাদনকারী এই দেশটিতে প্রায় ছয়জনের মধ্যে একজন "খাদ্য নিরাপত্তাহীন", যার মধ্যে ১ কোটি ৭০ লক্ষ শিশু রয়েছে। জার্নাল অফ অ্যাপলাইড রিসার্চ অন চিলড্রেন-এর ২০১২ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে খাদ্য নিরাপত্তার হার জাতি, শ্রেণী এবং শিক্ষার উপর নির্ভর করে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। কিন্ডারগার্টেন এবং তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের মধ্যে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ছিল মাত্র ৫% শ্বেতাঙ্গ শিশু, যেখানে কৃষ্ণাঙ্গ শিশু ১২%এবং হিস্পানিক শিশু ১৫%।
আফ্রিকা
আফ্রিকা মহাদেশে ক্ষুধা পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। ২০২৩ সনে প্রায় ৩০ কোটি মানুষ পর্যাপ্ত পুষ্টি পান নি। ২০২৪ সনে এর পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০.৬ কোটি। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী (ডব্লিউএফপি) ্আফ্রিকার পাঁচটি দেশের পরিস্থিতিকে ‘বিপর্যয়ক ‘ বলে বর্ণনা করেছে; দেশগুলো হল, লেসোথো, মালাউয়ি, নামিবিয়া, জাম্বিয়া ও জিম্বাবুয়ে। এঙ্গোলা ও মোজাম্বিকের অবস্থাও তথৈবচ।
বিশ্ব
২০২৩ সালে বিশ্ব জনসংখ্যার ২৮.৯ শতাংশ (২.৩৩ বিলিয়ন মানুষ) মাঝারি বা তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিল, অর্থাৎ তাদের পর্যাপ্ত খাবারের নিয়মিত প্রবেশগম্যতা ছিল না। বছরের মাঝে মাঝে তাদের খাবার শেষ হয়ে গিয়েছিল এবং সবচেয়ে খারাপভাবে, তারা পুরো এক দিন বা তার বেশি সময় ধরে না খেয়ে ছিল। বিশ্বব্যাপী (ওশেনিয়া ব্যতীত সকল অঞ্চলে) পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার প্রকোপ বেশি। কোভিড-১৯ মহামারীর সময় এই লিঙ্গ-বৈষম্য আরও বিস্তৃত হয়েছিল, ২০২১ সনের এক হিসেব অনুসারে বিশ্বব্যাপী ৩২% নারী মাঝারি বা তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন হয়েছেন, যেখানে পুরুষদের মধ্যে এই হার ২৭.৬%।
জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, বিশ্বে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, অন্যদিকে ধনী দেশগুলো থেকে সাহায্যের পরিমাণ কমছে। জাতিসংঘ যে অর্থ সংগ্রহ করতে পারে তা ২০২৫ সনে ৩০৭ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে ১১৭ মিলিয়ন মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারবে না। ২০২৪ সনে, তারা তাদের কাঙ্ক্ষিত অর্থের মাত্র ৪৬% সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছিল। ২০২৩ সালেও প্রায় একই ঘটনা ঘটেছিল।
খাদ্য নিরাপত্তাকে নিছক পেটের ক্ষুধা নিবারণের মধ্যে সীমিত রাখার বিষয় নয়। এটি কোন দেশের রাষ্ট্রগত প্রবণতার এক বিরাট পরিচায়ক।
কোন দেশে খাদ্য নিরাপত্তা আছে, তার মানে-
• এখানে কোন সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয়, জেণ্ডার- কোন ধরনের বৈষম্য নেই
• সামাজিক গতিশীলতার মুক্ত অবস্থা এখানে সর্বদা বিরাজমান
• বিজ্ঞানসম্মত সামাজিক স্তরবিন্যাসের সক্রিয় উপস্থিতি এখানে নিশ্চিত করা হয়েছে
• রাজনীতি ও ইতিহাসের স্বাধীন ও স্বাভাবিক ধারাবাহিকতা রয়েছে
• সকল ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ব্যবস্থা রয়েছে
• যুক্তিপূর্ণ আয়-ব্যবধানের মাপকাঠি রয়েছে
• ব্যক্তিস্বার্থ, গোষ্ঠীস্বার্থ প্রভৃতির কোন স্থান এখানে নেই
• সামাজিক ন্যায়বিচার এখানে সুপ্রতিষ্ঠিত
বর্ণিত বিষয়গুলোর স্কেলেও পরিমাপ করা যেতে পারে। যে দেশ যত বেশী নম্বর পাবে, সে দেশের খাদ্য পরিস্থিতি তথা রাষ্ট্রীয় প্রবণতা ততটাই ইতিবাচক। প্রথমোক্ত চারটি প্রত্যয় নিয়ে একটু আলোচনা করা দরকার। কারণ এগুলো সরাসরি সামাজিক কাঠামোর সাথে যুক্ত ও শেষোক্ত চারটি মূলত প্রথম চারটির ওপর নির্ভরশীল। প্রথমত, সামাজিকতা, রাজনীতি, অর্থনীতি, ধর্ম ও জেণ্ডার- প্রতিটি নাগরিকের জীবন যাপনের মৌলিক দিক। জন্মগত, আদর্শগত, পেশাগত ও বিশ্বাসগত বহু ধরনের পরিচয়ের মানুষ নিয়ে সমাজ গঠিত হয়। এটি বিশ্বের সকল দেশেই এক বাস্তব পরিস্থিতি হিসেবে স্বীকৃত। নাগরিকের অধিকার সুনিশ্চিত করে বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন হল সকল গোষ্ঠীর মানবিক মর্যাদাকে সমান ও সমান্তরাল করে তোলা। দ্বিতীয়ত, যোগ্যতা ও আগ্রহের নিরীখে সকল নাগরিকের কর্মসংস্থানের বস্তুনিষ্ঠ পরিবেশ বিরাজমান থাকা যে কোন রাষ্ট্রের জন্য অত্যাবশ্যকীয় দায়িত্ব। তৃতীয়ত, রাষ্ট্রে বসবাসকারী সকল মানুষ কোন ধরনের মাপকাঠিতে স্তরায়িত রয়েছে, এর ওপর নির্ভর করে রাষ্ট্রের আসল চরিত্র। চতুর্থত, রাজনৈতিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা ও ইতিহাস প্রণয়নের ধারাকে স্বাধীন ও স্বাভাবিক অবস্থায় ক্রিয়াশীল রাখা জাতীয়তার ধারাকে সমুন্নত রাখে। দীর্ঘমেয়াদে এটি হয়ে ওঠে রাষ্ট্রের পরিচয়ের প্রতীক।
জাতিসংঘ ও এর সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো পতিত ও বঞ্চিত মানুষের ক্ষুধা নিবারণের দায়-দায়িত্ব নিয়ে নিরন্তরভাবে কাজ করছে এবং বিভিন্ন সময়ে তা বিশ্ববাসীকে অবহিত করছে। এটি নিশ্চয়ই তাদের কৃতিত্ব। কিন্তু এক্ষেত্রে আমার একটি জিজ্ঞাসা রয়েছে। ওপরে বর্ণিত সামাজিক কাঠামোগত প্রতিবন্ধকতার কোন চিত্র জাতিসংঘ কখনো অঙ্কন করেছে কিনা। অর্থাৎ, ক্ষুধার জালে আটকে পড়া দেশসমূহের সমাজ ব্যবস্থায় কি কি উপাদানের উপস্থিতির কারণে যুগ যুগ ধরে ক্ষুধার অবসান হচ্ছে না, এসব দেশে বহি:শক্তির কোন প্রভাব রয়েছে কিনা, এত ধরনের মানবিক সাহায্য-সহযোগিত্ াকেন তাদেরকে টেকসই কোন পন্থার উপায় স্থির করে দিতে পারছে না, দেশ বা জাতির ক্ষুধার ঐতিহাসিক ও আর্থ-সামাজিক পটভূমি কিরূপ- এসবের পরিচ্ছন্ন ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ব্যতীত ক্ষুধার অশুভ চক্র থেকে মানুষকে বের করে নিয়ে আসা সম্ভব নয়। শুধু খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি, যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন প্রভৃতি বাহ্যিক বিষয়কে কারণ হিসেবে দাঁড় করিয়ে সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে হয় না। এর জন্য সমাজ ব্যবস্থার গভীরে ঢুকতে হবে। ক্ষুৎপীড়িত সমাজের সাথে সাথে ক্ষুধা নিবারণের উদ্যোক্তাদের ভূমিকা বা প্রবণতা উপলব্ধি করতে হবে। মার্কিন যুক্তরষ্ট্র ও বিশ্বে ক্ষুধা পরিস্থিতির যে চিত্র আমরা পাই, তাতে আর্থিক প্রত্যয়ের চেয়ে আমরা মনো-সামাজিক প্রত্যয়েরই ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নিরীক্ষণ করি। ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব বিনির্মাণের জন্য এহেন গবেষণা জরুরী প্রয়োজন। (এই নিবন্ধে ব্যবহৃত পরিসংখ্যানগুলোর উৎস: ইত্তেফাক, প্রথম আলো, দেশ রূপান্তর, বাংলা ট্রিবিউিন ও অনলাইন উইকিপিডিয়া)।
বাবুল চন্দ্র সূত্রধর
মানবাধিকারকর্মী ও গবেষক
মোবাইল: ০১৭১২৬৪৯৬৪১
E-mail: [email protected]
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন