কাঁদতে কাঁদতে ছেলে হত্যার বিচার চাইলেন মা

কাঁদতে কাঁদতে ছেলে হত্যার বিচার চাইলেন মা

সিলেটের আখালিয়ায় রায়হান আহমদের মৃত্যুর প্রতিবাদে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের আখালিয়া এলাকায় মানববন্ধন ও টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন স্থানীয়রা। এ সময় কাঁদতে কাঁদতে এসে রাস্তায় বসে পড়েন রায়হানের মা। তিনি ছেলে হত্যার বিচার চেয়ে চিৎকার করে বিচার দাবি করেন।সোমবার (১২ অক্টোবর) বিকাল ৩টার দিকে এ বিক্ষোভের সময় তার সঙ্গে ছিলেন নিহত রায়হানের পরিবারের অন্যান্য সদস্য ও স্বজন।

রায়হানের মা আহাজারি করে বলেন, আমার ছেলে ছিনতাইকারী বা অপরাধী নয়। তাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়ে বিনা দোষে রাতভর নির্যাতন করে হত্যা করেছে। পুলিশ মানুষের রক্ষক, কিন্তু সেই পুলিশই আজ আমার ছেলেকে হত্যা করলো। ঘুষের টাকার জন্য পুলিশ আমার ছেলেকে হত্যা করেছে। রায়হানের দুই মাস ২১ দিনের একটি মাত্র কন্যা সন্তান রয়েছে। সে বড় হলে তাকে আমি কী সান্ত্বনা দিবো, আর আমি কীভাবে এটি সহ্য করবো?

ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত এ মানববন্ধনে বিক্ষোভকারীরা আল্টিমেটাম দিয়ে বলেন, ৭২ ঘণ্টার ভেতরে রায়হানের হত্যাকারীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তা না হলে কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি দেয়া হবে।মানববন্ধনে কয়েক শতাধিক লোক উপস্থিত হয়ে রায়হান ‘হত্যা’র প্রতিবাদ করেন এবং ‘হত্যাকারীদের’ বিচার চান। এসময় বিক্ষোভকারীরা পুলিশবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন এবং বিভিন্ন স্লোগান সংবলিত প্লে-কার্ড হাতে নিয়ে মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে রায়হানের মৃত্যুর প্রতিবাদ করেন।

এর আগে রোববার (১১ অক্টোবর) ভোরে রায়হান উদ্দিন (৩৩) মারা যান। তিনি নগরের নগরের আখালিয়া এলাকার বাসিন্দা। পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ছিনতাইকালে গণপিটুনিতে মারা গেছেন রায়হান। তবে নিহতের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, পুলিশ ধরে নিয়ে নির্যাতন করে রায়হানকে হত্যা করেছে।

পরে এ ব্যাপারে রোববার রাত আড়াইটার দিকে রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার বাদী হয়ে স্বামীর মৃত্যুর ঘটনায় একটি হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় কোনো আসামির নাম উল্লেখ না করে আসামিদের অজ্ঞাত রাখা হয়েছে।মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, কে বা কারা রায়হানকে পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে হত্যা করেছেন। এজাহারে রায়হান বন্দরবাজার ফাঁড়ি থেকে যে মুঠোফোন নম্বর দিয়ে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন, সেই নম্বরটিও উল্লেখ করা হয়েছে।

এজাহারে উল্লেখ করা হয়, “প্রতিদিনের মতো গত শনিবার (১০ অক্টোবর) বিকাল ৩টার দিকে তার স্বামী রায়হান আহমদ নিজ কর্মস্থল নগরীর স্টেডিয়াম মার্কেটস্থ ডা. গোলাম কিবরিয়া ও ডা. শান্তা রাণীর চেম্বারে যান। পরদিন (১১ অক্টোবর) ভোর ৪টা ৩৩ মিনিটে ০১৭৮৩৫৬১১১১ মোবাইল নাম্বার থেকে শাশুড়ি (রায়হানের মা সালমা বেগম)-এর ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বার (০১৭৮৭৫৭০৯৪৯)-এ কল দিলে সেটি রিসিভ করেন রায়হানের চাচা হাবিবুল্লাহ।

এসময় রায়হান আর্তনাদ করে বলেন, তিনি বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে আছেন। তাকে বাঁচাতে দ্রুত টাকা নিয়ে বন্দর ফাঁড়িতে যেতে বলেন রায়হান। এ কথা শুনে রায়হানের চাচা ভোর সাড়ে ৫টার দিকে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে রায়হান কোথায় জানতে চাইলে দায়িত্বরত একজন পুলিশ বলেন, সে ঘুমিয়ে গেছে। আর যে পুলিশ রায়হানকে ধরে নিয়ে এসেছেন তিনিও চলে গেছেন। এসময় হাবিবুল্লাহকে ১০ হাজার টাকা নিয়ে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ফাঁড়িতে আসার কথা বলেন ওই পুলিশ।

পুলিশের কথামতো হাবিুল্লাহ আবারও সকাল পৌনে ১০ টার দিকে ফাঁড়িতে গেলে দায়িত্বরত পুলিশ জানান, রায়হান অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে রায়হানের চাচা ওসমানী হাসপাতালে গিয়ে জরুরি বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, রায়হানকে সকাল ৬ টা ৪০ মিনিটে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং সকাল ৭ টা ৫০ মিনিটে তিনি মারা যান। এসময় হাবিবুল্লাহ পরিবারের অন্যান্য সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনকে খবর দিলে তারা গিয়ে ওসমানীর মর্গে রায়হানের ক্ষত-বিক্ষত লাশ দেখতে পান।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন, “আমার স্বামীকে কে বা কারা বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে গিয়ে পুলিশি হেফাজতে রেখে হাত-পায়ে আঘাত করে এবং হাতের নখ উপড়ে ফেলে। পুলিশ ফাঁড়িতে রাতভর নির্যাতনের ফলে আমার স্বামী মৃত্যুবরণ করেন।”

প্রসঙ্গত, গতকাল রোববার ভোরে রায়হান উদ্দিন (৩৩) নামে সিলেট নগরের আখালিয়ার এক যুবক নিহত হন। পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ছিনতাইয়ের দায়ে নগরের কাষ্টঘর এলাকায় গণপিটুনিতে নিহত হন রায়হান। এদিকে রায়হানের পরিবারের অভিযোগ পুলিশের নির্যাতনে খুন হয়েছেন রায়হান।

রায়হানের পরিবারের সূত্রে জানা যায়, নগরের মিরের ময়দান এলাকায় শাহজালাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এক চিকিৎসকের সহকারি হিসেবে কাজ করতেন রায়হান। তিনি নগরের নগরের আখালিয়া এলাকার নেহারিপাড়ার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে বাসিন্দা।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password