করোনা রোগীকে ফুল দিয়ে বরণ করে নিচ্ছেন চিকিৎসক

করোনা রোগীকে ফুল দিয়ে বরণ করে নিচ্ছেন চিকিৎসক
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে সংক্রমিত হচ্ছেন চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থকর্মীরা। চিকিৎসকদের ভূমিকা নিয়ে প্রতিদিনই চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। এরই মধ্যে করোনা আক্রান্ত রোগীদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হচ্ছে রংপুরের ‘ডেডিকেটেড করোনা আইসোলেশন হাসপাতালে।’করেনায় আক্রান্ত কোনো নতুন রোগী ওই হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যাওয়া মাত্রই তার কাছে একটি চিঠি ও ফুল নিয়ে হাজির হন স্বাস্থ্যকর্মীরা। রোগীদের মানসিকভাবে শক্তি জোগানোর উদ্দেশ্যেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালটির বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক ডা. এস.এম নুরুন নবী স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে লেখা থাকে, ‘প্রিয় (রোগীর নাম) : আসসালামু আলাইকুম। কোভিড-১৯ রোগী হিসেবে আপনার আগমনে ডেডিকেটেড করোনা আইসোলেশন হাসপাতাল, রংপুর এর সকল স্বাস্থ্যকর্মীর পক্ষ থেকে আপনাকে স্বাগত জানাই। আমরা আপনার সেবায় নিয়োজিত থাকব। আপনার দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।’ যা আছে সেই হাসপাতালে : হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় রংপুরে ডেডিকেটেড করোনা আইসোলেশন হাসপাতালের উদ্বোধন করা হয়েছে গত ১৯ এপ্রিল। নগরীর সদর হাসপাতাল সংলগ্ন উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা নবনির্মিত শিশু হাসপাতালকেই করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে উদ্বোধন করেন বিভাগীয় কমিশনার কেএম তারিকুল ইসলাম। রংপুর বিভাগের করোনা রোগীদের চিকিৎসায় ১০০ শয্যা বিশিষ্ট এই ডেডিকেটেড করোনা আইসোলেশন হাসপাতালে রয়েছে নানা সুযোগ-সুবিধা। এ হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত সংকটাপন্ন রোগীর চিকিৎসায় ১০ শয্যার আইসিইউ সাপোর্টের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। হাসপাতালটিতে পুরুষ রোগীদের জন্য ৬০ শয্যা ও নারী রোগীদের জন্য ৩০ শয্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বয়স্কদের জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। এ ছাড়াও, রংপুর বিভাগে করোনা আক্রান্ত রোগীদের নমুনা পরীক্ষার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পিসিআর যন্ত্র স্থাপন করা হয়েছে। এতে করে দ্রুত সময়ের মধ্যে নমুনা পরীক্ষার ফলাফল পাওয়ায় করোনা রোগীদের দ্রুততার সঙ্গে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ‘বাগানের ফুল শেষ হলে, কাগজের ফুল দেব' : ফুল দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এস.এম নুরুন নবী বিডিটাইপকে বলেন,‘এটা আমার একদম ব্যক্তিগত উদ্যোগে করা। আমি একজন সিনিয়র শিশু বিশেষজ্ঞ। কিন্তু করোনা রোগীর চিকিৎসা করতে এ সময় তাদের পাশে থাকতে আমি নিজের ইচ্ছায় এখানে এসেছি। বর্তমান এই করোনা পরিস্থিতিতে মানুষ বিবেকবোধ হারিয়ে ফেলছে। করোনা হলে মাকে ফেলে পালাচ্ছে সন্তান, করোনা রোগীর আাত্মীয়-স্বজনরা কেউ কাছে আসতে চাচ্ছে না। এমনকি মৃত্যুর পরে লাশের দাফনও করতে রাজি হচ্ছে না অনেকে।’ তিনি বলেন, ‘চারপাশের মানুষের এমন আচরণ দেখে করোনা আক্রান্ত রোগীর মানসিক অবস্থাও বেশ ভেঙে পড়ে। তাই এসব রোগীকে মানসিকভাবে শক্ত করতেই আমার এমন উদ্যোগ। যাতে কোনো রোগীই নিজেকে অসহায় না ভাবেন।’ওই চিকিৎসক বলেন, ‘কোনো নতুন রোগী আসলেই তাকে আমার স্বাক্ষরিত একটি চিঠি এবং হাতে ফুল দেওয়া হয়। এই ফুলগুলো কিন্তু হাসপাতালের বাগানেরই ফুল। বাজারের ফুলের দোকান বন্ধ তাই ফুল কেনার সুযোগ নেই। যদি বাগানের ফুল শেষ হয়ে যায় তবে কাগজের ফুল বা হাতে আঁকা ফুল দিয়ে হলেও এই পদ্ধতি আমি চালু রাখবোই।’ দেশের এই করোনা পরিস্থিতিতে সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করে যাওয়ারও অনুরোধ করেন এই চিকিৎসক।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password