রোজা না আসতেই চড়া খেজুরের দাম

রোজা না আসতেই চড়া খেজুরের দাম
MostPlay

রোজা না আসতেই চড়া খেজুরের দাম। গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে রাজধানীর দোকানগুলোয়। স্বস্তি নেই অন্যান্য বিদেশি ফলেও। ব্যবসায়ীদের যুক্তি, সবশেষ বাজেটে বিদেশি ফল আমদানিতে কর বেড়েছে। যার প্রভাব পড়ছে খুচরা পর্যায়ে। অন্যদিকে ক্রেতাদের প্রশ্ন- কিছু কর বাড়লে দাম দ্বিগুণ হয় কিভাবে?

আগামী ১২ মার্চ পবিত্র রমজান মাস শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা রমজান মাসজুড়ে সিয়াম সাধনা করেন। দিনভর রোজা রাখার পর সন্ধ্যায় ইফতারের অন্যতম অনুষঙ্গ হচ্ছে খেজুর। খেজুর ছাড়া এখন আর ইফতারের কথা ভাবা যায় না। প্রায় সব রোজাদার খেজুর দিয়ে শুরু করেন ইফতার। রোজা শুরুর এখনও ৩০দিন বাকি। অথচ এরই মধ্যে ইফতারের অন্যতম অনুষঙ্গ খেজুরের দাম ঊর্ধ্বমুখী।

খেজুরের দামে উর্ধ্বমুখী এই প্রবণতার কারণ খুঁজতে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম থেকে মতিঝিল পর্যন্ত বেশ কয়জন খুচরা ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, মূলত আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা খেজুরের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে রমজানে খেজুরের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। ফলে প্রতি বছরই এই সময়টায় খেজুরের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে খুচরা ব্যবসায়ীদের কিছু করার থাকে না।

তবে আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, খেজুরে শুল্কহার বৃদ্ধিসহ আরও কিছু কারণে দাম বেড়েছে। টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি, এলসি খোলার ক্ষেত্রে বিভিন্ন জটিলতা এর অন্যতম। বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার আগে প্রতি টন খেজুরের শুল্কায়ন মূল্য ছিল ৫০০ থেকে ১ হাজার ডলার। আর বাজেট ঘোষণার পর এখন হয়েছে টন প্রতি ১ হাজার থেকে ২ হাজার ৭৫০ ডলার।

আবার এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আমদানি শুল্ক। এ ছাড়াও রয়েছে ভ্যাট, অগ্রিম আয়কর। এসব খাতে আগে কোনো ধরনের রাজস্ব দিতে হতো না। এখন দিতে হচ্ছে। ফলে সবমিলিয়ে এর প্রভাব পড়েছে খেজুর আমদানিতে।

একাধিক আমদানিকারক জানান, শুল্ক না কমালে রোজার মাসে খেজুরের দাম আরও বাড়তে পারে। গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভা বৈঠকে কয়েকটি পণ্যের ওপর শুল্ক কমাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে নির্দেশনা দেন। এরই প্রেক্ষিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কাজ শুরু করেছে বলে জানা গেছে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল এ ব্যাপারে একটি সার্কুলার জারি করেছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে বছরে খেজুরের চাহিদা প্রায় ৯০ হাজার টন। এর মধ্যে শুধু রমজান মাসে চাহিদা প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টন। দেশে বর্তমানে চাহিদার তুলনায় খেজুরের মজুদ অনেক বেশি। এরপরও কেন দাম বাড়ছে, এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সরাসরি কিছু বলা না হলেও সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, এ নিয়ে কাজ করা হচ্ছে, আশা করছি দাম কমবে। সংশ্লিষ্ট আরেকটি সূত্র জানায়, গত বছরের তুলনায় চলতি বছর খেজুর আমদানি হয়েছে কয়েকগুণ বেশি।

আর বিশ্ববাজারে পরিবহন ব্যয়ও অনেকটা কমেছে। এরপরও খেজুরের অতিরিক্ত দাম নিয়ে খুচরা ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটকে দুষছেন। বাজার ঘুরে এবং খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতি কেজি খেজুরের সর্বনিম্ন মূল্য ২০০ টাকা। আর সর্বোচ্চ মূল্য ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা। খেজুরের মান অনুযায়ী দামের এই তারতম্য। তবে গত বছর রমজানের তুলনায় বর্তমানে অনেক ধরনের খেজুরের দাম বেড়েছে।

এর মধ্যে রয়েছে-দাবাস, জাহিদি, বরই, গালা খেজুর। রাজধানীর যে দোকানগুলোয় খেজুর বিক্রি হয়, এর মধ্যে সবচেয়ে কম দামে বিক্রি হচ্ছে গালা ও বাংলা খেজুর। প্রতি কেজি ২০০ টাকা। জাহিদি খেজুর বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা। আবার মানভেদে এই খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা।

বরই খেজুরের দামও মানভেদে প্রতি কেজি ৪৪০ টাকা থেকে ৫৪০ টাকা। খেজুর ব্যবসায়ীদের তথ্য মতে, অভিজাত শ্রেণির মানুষের পছন্দ সৌদি আরবের মেডজুল খেজুর। পাশাপাশি মাবরুম, আজওয়া, মরিয়ম খেজুরও পছন্দ করে এই শ্রেণি। মানভেদে এসব খেজুরের দাম ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা কেজি। ভালো জাতের মরিয়ম খেজুর বিক্রি হচ্ছে কেজি ৯০০ টাকা থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা। সুফরি খেজুর বিক্রি হচ্ছে কেজি ৭৫০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা।

কালমি খেজুর বিক্রি হচ্ছে কেজি ৭০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা। পুষ্টিবিদদের তথ্যানুযায়ী, খেজুর একটি বিস্ময়কর ফল। পুষ্টিগুণে এই ফলে রয়েছে নানা ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। খেজুর হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে। ভিটামিন বি থেকে শুরু করে ভিটামিন কে, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, জিঙ্কসহ পুষ্টির ভান্ডার হচ্ছে খেজুর।

ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ডলার সংকটে হয়তো খেজুরের দাম বাড়তে পারে। তাই বলে এত বেশি বাড়ার কথা নয়। খেজুরও সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছে, ব্যক্তিগতভাবে আমি এটা বিশ্বাস  করতে চাই না। হতে পারে রমজান কেন্দ্র করে কেউ কেউ অতি মুনাফার চেষ্টা করছে। তারপরও বলব, প্রধানমন্ত্রী যেখানে নিজে বেশ কয়েকটি পণ্যের শুল্ক কমানোর নির্দেশনা দিয়েছেন, আমি মনে করি, শুল্ক কমালে খেজুরের দামও কমে আসবে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password