আজ ২৩ জুন, আওয়ামী লীগের ইতিহাসে আজ স্মরণীয় একটি দিন। দলটির ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর পুর্ণতার মধ্য দিয়ে ৭৩তম জন্মদিন আজ। ১৯৪৯ সালের ২৩ ও ২৪ জুন ঢাকার কেএম দাস লেনের ‘রোজ গার্ডেনে’ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর অনুসারী মুসলিম লীগের প্রগতিশীল কর্মীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ নামে পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী দলের আত্মপ্রকাশ ঘটে আজকের আওয়ামী লীগের। যেটি বাংলাদেশের বৃহত্তম-প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে আজ।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে দলটি ধর্মনিরপেক্ষ-অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি, শোষণমুক্ত সমাজ নির্মাণের লড়াই-সংগ্রাম করে যাচ্ছে। একটি আদর্শ- উন্নত সমৃদ্ধ আধুনিক, প্রগতিশীল সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা বিনির্মাণে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দর্শনের ভিত্তি রচনা করেছে আওয়ামী লীগ। স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সরকার গঠন করে ১৯৭১ সালে। ৭৫-এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যার পর আওয়ামী লীগে নেমে আসে দুর্যোগ। দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়ে বৃহত্তম এই সংগঠনটি।

১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে দেশে ফিরে দল গঠনের কাজে মনোনিবেশ করেন। মাঠেঘাটে ঘুরে বেড়ান। তিনি আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলেন পুনরায়। সংগঠনটির প্রথম কমিটিতে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সভাপতি ও শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক এবং জেলে থাকা অবস্থায় যুগ্ম-সম্পাদক নির্বাচিত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

প্রতিষ্ঠার পর ‘মুসলিম’ শব্দটি নিয়ে দলের অভ্যন্তরে আপত্তিৎ ছিলো। তাই ১৯৫৫ সালের কাউন্সিলে অসাম্প্রদায়িক নীতি গ্রহণের মাধ্যমে সংগঠনটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’। মুক্তি সংগ্রামের সময়ে পূর্ব পাকিস্তান শব্দ দুইটি বাদ পড়ে যায়। বাংলাদেশে স্বাধীনতা ঘোষণা করার পর থেকে প্রবাসী সরকারের সব কাগজপত্রে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নাম ব্যবহার শুরু হয়। নির্বাচনি প্রতীক নৌকা হয় ১৯৭০ সালের নির্বাচন থেকে।

দেশের অন্যতম প্রাচীন এ সংগঠনটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে এদেশের গণমানুষের সংগঠনে পরিণত হয়। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও আওয়ামী লীগের ইতিহাস একসূত্রে গাঁথা। দিবসটির উৎযাপন উপলক্ষে প্রতিবছর দলটির পক্ষ থেকে নানান কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়ে থাকে। করোনাভাইরাসের প্রাদূর্ভাবের কারনে এবারের সকল কর্মসূচি স্বাস্থ্যবিধি মেনে সংক্ষিপ্তভাবে পালন করা হবে।

দলটির দফতর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বুধবার সূর্যোদয়ের সময়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও দেশব্যাপী আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। সকাল ৯টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বর ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হবে। বিকাল ৪ টায় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি ভার্চুয়ালি উপস্থিত থাকবেন বলে দলটির পক্ষ তেকে জানানো হয়।

এছাড়াও গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের একটি প্রতিনিধি দল শ্রদ্ধা জানাবেন বলে জানানো হয়েছে। সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান এই অনুষ্ঠানে নেতৃত্ব দেবেন।