দরিদ্র কাদির মোল্লা থেকে শিল্পপতি কাদির মোল্লা হয়ে ওঠার গল্প

দরিদ্র কাদির মোল্লা থেকে শিল্পপতি কাদির মোল্লা হয়ে ওঠার গল্প
MostPlay

কেউ চিত্ত নিয়ে পৃথিবীতে আসে, বিত্ত থাকে না। আবার কেউ বিত্ত নিয়ে জন্ম নিলেও, চিত্ত থাকে না। ক্ষমতা-মমতার এই সমতা স্রষ্টার অবদান। যিনি চিত্ত -বিত্ত দুটোই গড়েছেন তিনি জনাব আব্দুল কাদির মোল্লা। যার হৃদয়ে রয়েছে মমতা আর হাতে রয়েছে ক্ষমতা। জনাব আব্দুল কাদির মোল্লা নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলার পাঁচকান্দী গ্রামে ১৯৬১ সালের ৮ই আগষ্ট জন্মগ্রহণ করেন।

পিতা আব্দুল মজিদ মোল্লা আর মাতা নূরজাহান বেগম। ১৯৭৪ সালে ৮ম শ্রেণীতে থাকা অবস্থায় বাবার মৃত্যু হয়। দ্রারিদ্রতার কষাঘাতেও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত চালিয়ে যান লেখাপড়া। মাত্র ৩৬০ টাকার জন্য দেওয়া হয়নি এইচএসসি পরীক্ষা। জীবনকে পরিবর্তনের আশায় শূন্য হাতে উঠে পরেন ঢাকা গামী বাসে কিন্তু ভাড়া না থাকায় বাসের হেল্পার নামিয়ে দেন নরসিংদীর ইটাখলা বাসস্ট্যান্ডে। এই নামানোটাই তাঁর নতুন জীবনের শুরু।

ইটাখলায় দাঁড়িয়ে থাকা ময়মসিংহ থেকে আসা দিনমুজুরদের সাথে কামলা খাটেন অন্যের জমিতে। তারপর চাকরীর জন্য ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে উঠে পরেন ভুল ট্রেনে, এই ভুল ট্রেনই জীবনের মোড় গুড়িয়ে দেয়। নিয়ে যায় নারায়ণগঞ্জের মদনগঞ্জে। চায়ের দোকানে পত্রিকায় দেখতে পান কারিগরি শিক্ষার বিজ্ঞাপন। স্টাইফেন নিয়ে ভর্তি হন বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব মেরিন টেকনোলজিতে। জাইগীর থেকে ডিপ্লোমা শেষ করেন। নিজেকে তৈরী করতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে তাঁর। জীবন সংগ্রামের শুরুর দিকে কারিগরি শিক্ষা নিয়ে পাড়ি জমান সিঙ্গাপুর।

পাঁচবছর পর দেশে ফিরে এসে চাকুরী করেন তিতাস গ্যাস কোম্পানিতে। এর পর প্রতিষ্ঠা করেন থার্মেক্স গ্রুপ। যা আজ দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। মানবতার মূর্ত প্রতীক, শিক্ষানুরাগী, দানবীর থার্মেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব আব্দুল কাদির মোল্লা নরসিংদীকে বাংলাদেশের ৬৪ জেলার মধ্যে আদর্শিক জেলা, নৈতিক জেলা, শিক্ষানগরী হিসেবে পরিচিত করার লক্ষ্যে “মানুষ মানুষের জন্য, সেবাই আমাদের অঙ্গীকার” এই মিশন এবং ভিশন নিয়ে গড়ে তোলেন পিতার নামে মজিদ মোল্লা ফাউন্ডেশন। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হতে আয়ের লভ্যাংশের ২৫% ব্যায় করেন মানবকল্যাণে। দক্ষ মানব সম্পদ গড়ার ভিশন নিয়ে ১৯৯৫ সালে নিজ গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেন পাঁচকান্দি ডিগ্রী কলেজ।

২০০৬ সালে নরসিংদী শহরে প্রতিষ্ঠা করেন নিজের নামে আব্দুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজ যা শুরু থেকেই বাজিমাত। পরপর তিনবার দেশের মধ্যে ২য় স্থান। এর ধারাবাহিকতায় প্রতিষ্ঠা করেন স্ত্রীর নামে এনকেএম হাই স্কুল এন্ড হোমস ও আব্দুল কাদির মোল্লা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল। এই প্রতিষ্ঠান চারটি মজিদ মোল্লা ফাউন্ডেশন কর্তৃক সরাসরিভাবে পরিচালিত। এছাড়াও নরসিংদী জেলার ১৫১ টি স্কুল, ৫৭টি কলেজে অবকাঠামো নির্মাণ করেছেন। অনেক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসাতেও অবকাঠামো নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। ৮৫ টা এতিমখানা উনার অনুদানে পরিচালিত হয়ে আসছে।

৩১৫টা স্কুলে মজিদ মোল্লা ফাউন্ডেশন এর এফডিআর রয়েছে, যা থেকে খন্ডকালীন শিক্ষকদের বেতনসহ উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে ব্যয় করা হয়। যার অর্থায়নে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এর ১ম ছাত্রহল (নির্মাণাধীন), ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, জগন্নাথসহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে থার্মেক্স গ্রুপের দেয়া বাস আছে। শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মসজিদ নির্মাণ কাজ চলছে। সম্প্রতি এফডিসিতেও মসজিদ নির্মাণ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ৫ টি দেয়ার ঘোষণা দেন। কিশোরগঞ্জে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ মেডিকেল কলেজে ছাত্রাবাস নির্মাণ ও বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব মেরিন টেকনোলজিতে মসজিদ নির্মাণ উদ্ভোদন করেন। নরসিংদীর জেলায় গড়ে তোলেন অসংখ্য মসজিদ। এর মধ্যে অন্যতম বেলাব বাজার জামে মসজিদ। এতে ১২,০০০ মানুষ একসাথে নামাজ পড়তে পারেন। প্রচারবিমুখ কাজে বিশ্বাসী জনাব আব্দুল কাদির মোল্লা। ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১৮ ঘন্টাই কাজ করেন তিনি।

প্রতি সপ্তাহে শনিবার দিন তিনি চিকিৎসা সেবা, কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা-মাতাকে সহায়তা, বেকার যুবকদের অল্প পুঁজি দিয়ে ব্যবসায় সহায়তা, রিকশা-ভ্যান দিয়ে সহায়তা, বিধবা নারীদের সেলাই মেশিন, আবাসন ব্যবস্থা, টিউবওয়েল ইত্যাদি দিয়ে সহায়তা করে থাকেন। উল্লেখ্য যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞানে পড়ুয়া সাবেক ছাত্রীর ব্রোনম্যারো ক্যান্সার হলে তিনি তার চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। মেয়েটি সুস্থ হয়ে এখন সহকারী ভূমি কমিশনার। শুধু তাই নয় ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত তাঁর ১ম কলেজ “পাঁচকান্দী ডিগ্রি কলেজ” কে ভালবাসেন নিজের সন্তানের মতই। আল্লাহও নিরাশ করেননি তাঁকে।

এই কলেজের সাবেক শিক্ষার্থীরা নিয়োজিত আছেন বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে। এছাড়াও বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, ডাক্তার, মেরিন ইঞ্জিনিয়ারসহ কর কমিশনের উচ্চ পর্যায়ে নিয়োজিত আছেন এ কলেজের সাবেক শিক্ষার্থীরা এবং দেশের নামকরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে অধ্যয়নরত আছেন এ কলেজের মেধাবী শিক্ষার্থীরা। এ সকল ছাত্র-ছাত্রীদের সাফল্যের কথা মনে করে চোখের কোনে যখন অশ্রু ছল ছল করে তখনই তিনি তাঁর জীবনের সার্থকতা খুঁজে পান বহুলাংশে।

বিশিষ্ট সাংবাদিক ড.আবদুল হাই সিদ্দীকী বলেন-“একজন মানুষ যখন সত্যিকারের মানুষ হন, তখন তিনি একটি গ্রাম, উপজেলা বা জেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেন না। আমাদের আব্দুল কাদির মোল্লা তেমনি একজন সত্যিকারের মানুষ। সিটি কলেজের অধ্যক্ষ ড. মশিউর রহমান মৃধা বলেন-“১০০ জন শ্রেষ্ঠ বাঙালির মধ্যে আব্দুল কাদির মোল্লা অন্যতম”। সম্প্রতি এক শিক্ষাবিদের গবেষণায় তা বের হয়ে এসেছে। সৈয়দপুর আনোয়ার আলী মিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি, জনাব মুস্তাফিজুর রহমান বসু বলেন-“আমরা দানবীর হাজী মুহাম্মাদ মুহসিন কে দেখি নি, আরথি সাহাকে পাইনি। কিন্তু আমাদের নরসিংদীতে পেয়েছি দানবীর জনাব আব্দুল কাদির মোল্লাকে।”

মানব কল্যাণই যার ধর্ম, মানুষকে সাহায্য সহযোগীতা করতে না পারলে যার সারা রাত ঘুম হয়না, তিনি শুধু নরসিংদী কিংবা বাংলাদেশে নয় হয়তো একদিন ভারতীয় উপমহাদেশ ছাড়িয়ে বিস্তৃত হবে সারা বিশ্বে। সীমানা ছাড়িয়ে হবে তাঁর অবস্থান। এখন হাজী মোহাম্মদ মুহসিনের উদাহরন দেয়া হয়, এমন একটা সময় আসবে যখন জনাব আব্দুল কাদির মোল্লার উদাহরণ দেয়া হবে ভারতীয় উপমহাদেশসহ সারা বিশ্বে। বর্তমানে কর্মবীর আব্দুল কাদির মোল্লা নরসিংদীতে মেডিকেল কলেজ, কারিগরি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। মানবসেবায় অসামান্য অবদান রাখায় “মাদার তেরেসাঁ অ্যাওয়ার্ড -২০১৮” পেয়েছেন। দেশসেরা করদাতা -২০১৫ নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁকে কর বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে। (সংগৃহীত)

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password