তুরস্কের সমরাস্ত্র কতটা মানসম্মত ?

তুরস্কের সমরাস্ত্র কতটা মানসম্মত ?
MostPlay

গত দুই দশক ধরে তুরস্ক সামরিক প্রযুক্তিতে অনেকটাই আত্মনির্ভর হয়েছে। বিভিন্ন যুদ্ধে ব্যবহৃত হচ্ছে তুরস্কের তৈরি ড্রোন। রকেট, মিসাইল তৈরিতে যেমন এগিয়ে যাচ্ছে তেমনি যুদ্ধজাহাজ, যুদ্ধবিমান তৈরিতেও থেমে নেই। রয়েছে একাধিক প্রজেক্ট। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ তুরস্ক থেকে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র ক্রয় করছে। তবে একটা প্রশ্ন ঘুরেফিরে আসছে,সেটি হলো তুরস্কের প্রযুক্তি কতটা উন্নত ?

এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে বুঝতে হবে তুরস্কের প্রযুক্তি কাদের উপর নির্ভরশীল।‌ যেমন চীনের যুদ্ধবিমান, মিসাইল, যুদ্ধজাহাজ রাশিয়ান প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে তৈরি হচ্ছে। ভারতের বিভিন্ন অস্ত্র মোটামুটি রাশিয়া নির্ভর, তবে ইজরায়েলের সাথেও ভালো সমঝোতা রয়েছে। চীন শুধুমাত্র রাশিয়ার উপর নির্ভরশীল হয়েও ভারতের চেয়ে ভালো ও দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে কারণ চীনের অর্থনীতি ভালো অবস্থানে রয়েছে এবং তারা ভালো বিনিয়োগ করতে পারছে। আমেরিকা একটা ইঞ্জিন তৈরির জন্য ১০/২০ বিলিয়ন ডলার খরচ করে ফেলে।

এমন নয় যে আমেরিকা মানেই ভালো প্রযুক্তি। ব্যাপারটা এমন যে আমেরিকা মানেই বিশাল বিনিয়োগ, যার ফলস্বরূপ ভালো প্রযুক্তি। একটা যুদ্ধবিমান তৈরি করতে তারা ১ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করে ফেলে যতটুকু ব্যায় পুরো ইউরোপ মিলেও করতে পারেনা। এসব বলার কারণ হচ্ছে প্রযুক্তির উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বিনিয়োগ ও সম্পর্ক। এই দুটি সক্ষমতাই তুরস্কের রয়েছে। যদিও তাদের বিনিয়োগ সক্ষমতার চেয়ে সম্পরকগত যে সুবিধা সেটাই তাদের মূল পয়েন্ট।

তুরস্ক একটি ন্যাটোভুক্ত দেশ । অনেক আগে থেকেই তারা যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র ব্যবহার করে। যেমন তুরস্ক তাদের যুদ্ধজাহাজে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি সকল ধরনের আধুনিক অস্ত্র ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে। অন্যান্য দেশ চাইলেই কিন্তু সেসকল প্রযুক্তি ক্রয় করতে পারবেনা। তুরস্ক নিজ দেশে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান তৈরি করেছে। এখানে যে অভিজ্ঞতা তারা পেয়েছে সেটা কিন্তু তাদের নিজস্ব যুদ্ধবিমান তৈরিতে সাহস যুগিয়েছে। এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান তৈরিতেও অংশগ্রহণ তাদের প্রযুক্তির গুণগত মান সম্পর্কে নিশ্চয়তা প্রদান করে। মোটামুটি বুঝা যাচ্ছে তুরস্কের তৈরি অস্ত্র ইউরোপীয় অস্ত্রের সমমূল্য।

এখন যে বিষয়টি সামনে আসছে সেটি হলো তুরস্ক কি সয়ংসম্পূর্ণ ?  না তুরস্ক সয়ংসম্পূর্ণ নয় এমনকি ইউরোপের গুটি কয়েক দেশ বাদে কেউই সয়ংসম্পূর্ণ নয়। যেমন ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, জার্মান, ইতালি এর মতো বড় কিছু দেশ একটা যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন,রাডার, সেন্সর, মিসাইল সবকিছু নিজে নিজে তৈরি করতে পারে। যদিও তারা মিলেমিশে তৈরি করে। একজন ইঞ্জিন তৈরি করলে আরেকজন রাডার তৈরি করে।

এই কয়টি দেশ বাদে বাকি সবাই বিভিন্ন পার্টস তৈরি করে তবে পুরো প্যাকেজ তৈরির সক্ষমতা নাই, থাকলেও এতবড় ইনভেস্টমেন্ট কেউ একা করেনা। সুতরাং তুরস্ক রাতারাতি একটা ভালো ইঞ্জিন তৈরি করবে, ভালো রাডার তৈরি করবে সেটা আশা করা বোকামি। একবারে প্রথম থেকে শুরু করার সক্ষমতা বা বিনিয়োগের সামর্থ সকল দেশের নেই। এখন যা হয় তা হলো যেকোনো একটা ইঞ্জিন, রাডারের উপর ভিত্তি করে আপগ্রেড প্রোগ্রাম করা হয়। সবাই জানেন এলন মাস্ক যিনি স্পেস-এক্স এর প্রতিষ্ঠাতা। তার দরকার ছিল রকেট ইঞ্জিন।

যদি একটা রকেট ইঞ্জিন প্রথম থেকে তৈরি করতে যায় তাহলে বিলিয়ন ডলারের পাশাপাশি অনেক সময় দরকার। তিনি চলে গেলেন রাশিয়াতে। সেখান থেকে পরিত্যক্ত রকেট ইঞ্জিন কিনে আনলেন। এবং সেটার উপর গবেষণা করে ভালো রকেট তৈরি করলেন। আগেই বলেছিলাম আমেরিকা মানেই বিশাল বিনিয়োগ। রাশিয়ান পরিত্যক্ত রকেটে বিনিয়োগ করে এখন কতটা সফল স্পেস-এক্স। মূল কথা ছিল এখন সবাই রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং করে থাকে। তুরস্ক ভালো পজিশনে আছে‌ । তুরস্ক তাদের বেশিরভাগ মিসাইলেই ফ্রান্সের তৈরি রকেট ইঞ্জিন ব্যবহার করে।

তারা নিজেরা সেন্সর তৈরি করে। এভাবে তাদের বিভিন্ন ড্রোন এর বিভিন্ন অংশ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সংগৃহীত হয়। এটা অস্বাভাবিক নয়। আমেরিকাও তাদের ৮০% যুদ্ধবিমানে BAE এর তৈরি ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার সিস্টেম ব্যবহার করে যদিও এটি যুক্তরাজ্য ভিত্তিক একটি কোম্পানি। বিভিন্ন দেশ থেকে প্রযুক্তি সংগ্রহ করে ভালো মানের অস্ত্র তৈরি ভালো ব্যাপার, পাশাপাশি নিজেদের সক্ষমতা বৃদ্ধি দরকার। তুরস্কের জন্য সবকিছু ভালোমতোই চলিতেছিল।

কিন্তু রাশিয়া থেকে এস-৪০০ ক্রয়ের পর যুক্তরাষ্ট্রের সাথে অনেকটা ঝামেলা হয়েছে। তারা এফ-৩৫ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। যদিও তুরস্ক আমেরিকা থেকেই প্যাট্রিয়ট এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম কিনতে চেয়েছিল। আমেরিকা তখন বিক্রি করেনি। অবশেষে একটা বিষয় পরিষ্কার। তুরস্কের অস্ত্র ভালো মানের। এবং তুরস্কের জন্য উচিত হবে ইউরোপ, আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক ভালো রেখে নিজেদের সক্ষমতা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি করা। অন্যথায় বেশি সুলতান সাজতে গিয়ে একঘরে হয়ে গেলে বেকায়দায় পরতে হবে। এমনিতেই এফ-৩৫ থেকে বঞ্চিত হয়েছে ইতিমধ্যে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password