সামান্য বিস্কুট খাওয়ায় যোনিপথসহ নানা যায়গায় আঘাত করে নির্যাতন

সামান্য বিস্কুট খাওয়ায় যোনিপথসহ নানা যায়গায় আঘাত করে নির্যাতন

পৃথিবীতে খুদার জ্বালা থাকে ছোট বা বড় সবার। কিন্তু ছোটদের থাকে একটু বেশি কেননা তারা সহ্য করতে পারেনা। এবার এমনি ঘটনা ঘটেছে রাজধানী ঢাকায়। শুধু অনুমতি না নিয়ে সামান্য একটু বিস্কুট খাওয়ার অপরাধে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে সুইটির নামের ১২ বছর বয়সী এক গৃহপরিচারিকার ওপর।

নির্যাতিত ওই শিশু গৃহপরিচারিকা সুইটির শরীরে অসংখ্য নির্যাতনের চিহ্ন দেখে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোষ্ট করেন পাশের ফ্লাটের প্রতিবেশী। মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায় সে পোষ্টটি। পরে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর-৯৯৯ এ ফোন করে ডাকা হয় পুলিশ। নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত স্বামী মো: তান‌ভির আহসান এবং স্ত্রী এড‌ভো‌কেট না‌হিদকে গ্রেপ্তার করা হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শাহাবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মওদুত হাওলাদার।

মধ্যযুগীয় বর্বরতা কায়দায় শিশুটির ওপর চালানো হতো নির্যাতন। পুরো শরীর জুড়ে অসংখ্য নির্যাতনের চিহ্ন কোমলমতি শিশুটির। গৃহকর্মীর কাজে গিয়ে এভাবেই দিনের পর দিন নির্মম নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে তাকে। গতকাল সকালে সামান্য বিস্কুট খাওয়ার কারণে তাকে অমানবিকভাবে মেরেছে।

সংসারে অভাব-অনটনের কারণে সুইটিকে কাজের জন্য কিশোরগঞ্জের মিঠামইন থেকে ঢাকায় পাঠিয়েছিলেন মা-বাবা। ৯ মাস ধরে কাজ করছেন অ্যাডভোকেট নাহিদ জাহান আঁখি ও তানভীর সিদ্দিকী পাভেল দম্পতির বাসায়। এ দম্পতি একটু সমস্যা হলেই কখনো বেত্রাঘাত, কখনো গরম খুন্তির ছ্যাঁকা আবার কখনোবা রুটি বেলার বেলুন দিয়ে যোনিপথে মধ্যযুগীয় কায়দায় বর্বরতা চালাতো শিশুটির ওপর।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী সুইটি বলেন, আমাকে প্রতিনিয়ত তারা মারধর করতেন। কাজে কোনো সমস্যা হলেই গরম খুন্তি দিয়ে ছ্যাঁকা দিতো। মাঝে মাঝে কাটা জায়গায় মরিচের গুড়ো দিয়ে দিতো। আমাকে ৩ দিন ধরে বাথরুমে আটকে রেখে মারধর করছে তারা। কান্নাকাটি করলে আরও বেশি মারতো।

পুলিশ জানায়, শিশুটির শরীরে নির্যাতনের স্পষ্ট আলামত থাকলে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করেছেন নির্যাতনকারী দম্পতি। তারা বলেন, শিশুটিকে কোনো নির্যাতন করা হয়নি। দেয়াল টপকে বাসা থেকে পালানোর সময় পড়ে আঘাত পেয়েছে। আমরা তাকে কখনোই মারধর করিনি। জানিনা কার প্ররোচনায় এমন অভিযোগ করছে।

শিশুটিকে নির্যাতনের এ ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসে শাহাবাগ থানার সামনে জড়ো হন সেগুনবাগিচা এলাকাবাসী। জানান, দীর্ঘদিন ধরেই শিশুটিকে বাসায় আটকে রেখে চলছিল পাশবিক নির্যাতন। শিশুটিকে রুটি বেলার বেলুন দিয়ে প্রহার করা হতো। সেই বেলুন দিয়েই যোনিপথে মধ্যযুগীয় কায়দায় করা হতো নির্যাতন।

গেলো রাতে নির্যাতনের নির্মমতা সইতে না পেরে পালিয়ে আশ্রয় নেন পাশের ফ্লাটে। পরে ওই প্রতিবেশী ট্রিপল নাইনে কল দিয়ে বিষয়টি জানালে শাহবাগ থানা পুলিশ গিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে। শাহবাগ থানার ওসি বলেন, আমরা ট্রিপল নাইনে কল পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে সুইটিকে উদ্ধার করি।

নির্যাতনকারী দম্পতিকে আটক করা হয়েছে। ঘটনা পর্যালোচনা করে আমরা প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

সুইটিকে নির্যাতনের ঘটনায় আগেও একবার পুলিশে খবর দিয়েছিল এলাকাবাসী। সতর্ক করা হয়েছিল পুলিশের পক্ষ থেকে। তাই এবার কঠিন শাস্তির দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password