রঘুনাথপুর, ১৬ মার্চ - হাসপাতালের কাজের ফাঁকে সুন্দর সুন্দর জায়গায় ঘুরে বেড়ানো, নামী হোটেল ও রেস্টুরেন্টে দামি খাবার খাওয়ার শখ ছিল পাপিয়ার। তার জন্য সে প্রায়ই ‘বয়ফ্রেন্ডে’ বদল করত। ‘বয়ফ্রেন্ড’ বদল করাটা যেন তার নেশায় পরিণত হয়ে গিয়েছিল। বিয়ের পরেও পাপিয়া তেমনই জীবন যাপন করতে চেয়েছিল। কিন্তু, স্বামী চিন্ময় মণ্ডল তাকে বাধা দেন। আর তাই বিয়ের কয়েক মাস পরই পথের কাঁটা সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে সে। স্ত্রীর অবৈধ সম্পর্কে বাধা দেওয়ায় খুন হতে হয় শিক্ষক চিন্ময় মণ্ডলকে। পুলিসের তদন্তে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। এবিষয়ে মহকুমা পুলিস আধিকারিক দুর্বার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ধৃতকে জেরা চলছে। বেশ কিছু তথ্য পাওয়া গিয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ২৩ নভেম্বর ক্রীড়া প্রতিযোগিতার জন্য মাঠের কাজ সেরে রঘুনাথপুরের প্রাথমিক শিক্ষক চিন্ময় মণ্ডল বাড়ি ফিরছিলেন। ফেরার সময় বাড়ির কাছেই বারিকবাঁধ এলাকার সামনে চিন্ময়বাবুকে গুলি করা হয়। তাঁকে খুন করার জন্যই ওইদিন দুষ্কৃতীরা এসেছিল। কারণ, খুনের জায়গা থেকে পুলিস চিন্ময়ের টাকা ভর্তি মানি ব্যাগ, স্কুটি, মোবাইল ফোন উদ্ধার করেছিল। ওই সব জিনিস উদ্ধারের পর পুলিস নিশ্চিত হয় ছিনতাইয়ের জন্য নয়, তাঁকে খুনেরই পরিকল্পনা ছিল দুষ্কৃতীদের। তারপরই পুলিস তদন্তে নামে। এক দুষ্কৃতীকে গ্রেপ্তারও করে পুলিস। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত্যু নিশ্চিত করতে গান শ্যুটারকে কাজে লাগানো হয়েছিল। ওই ঘটনার পর প্রায় ১৪ মাস পর চিন্ময়বাবুর স্ত্রী পাপিয়াকে পুলিস গ্রেপ্তার করে। স্ত্রীর অবৈধ সম্পর্কের বিষয়টি জেনে যাওয়ায় তাঁকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
পাপিয়াকে জেরা করে পুলিস জানতে পারে, ওইদিন চিন্ময়বাবু মাঠ থেকে বাড়ি আসার সময় পাপিয়া তাঁকে একাধিকবার ফোন করেছিল। চিন্ময়বাবু কোন গাড়িতে, কখন, কোথায় আসছে তার যাবতীয় আপডেট সে শ্যুটারদের কাছে মুহূর্তের মধ্যে পৌঁছে দিচ্ছিল। চিন্ময় যেন তাড়াতাড়ি একাই বাড়ি চলে আসে পাপিয়া তেমনটাই জানিয়েছিল। তারপর সব কিছুই হয় পাপিয়ার পরিকল্পনা মতো।
জানা গিয়েছে, ওই দিন একটি ছোট গাড়িতে করে দু’জন শ্যুটার এসেছিল। শ্যুটাররা চিন্ময়ের মৃত্যু নিশ্চিত করতে একাধিক গুলি করে এবং মৃত্যু নিশ্চিত জেনেই ওই দিন এলাকা ছেড়েছিল। তবে রঘুনাথপুরের শিক্ষক খুনের পিছনে পাপিয়া ছাড়াও আরও বেশ কয়েকজন রয়েছে বলে পুলিসি তদন্তে উঠে এসেছে। পুলিস জানতে পেরেছে, ঘটনার পিছনে একটি বড় চক্রের যোগ রয়েছে। খুনের সঙ্গে জড়িত চক্রের সেই ব্যক্তিরা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দিক দিয়ে ক্ষমতাবান। তাই পাপিয়াকে রাজসাক্ষী করে চক্রের শিকড় উপড়ে ফেলতে পুলিসের একটি বিশেষ তদন্ত কমিটি কাজ করছে। পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম থেকেই পাপিয়ার উপর পুলিসের সন্দেহ হয়। কিন্তু, প্রমাণের অভাবে পুলিস তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
জানা গিয়েছে, পাপিয়া পুরুলিয়া শহর থেকে নার্সের ট্রেনিং করে। ট্রেনিংয়ের সময় কখনও সে পুরুলিয়ায় আবার কখনও রঘুনাথপুরে থাকত। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাপিয়ার এক বান্ধবী বলেন, কাজ করতে গিয়ে স্বামী মারা যাওয়ার সামান্য চিন্তার ছাপ পাপিয়ার মধ্যে দেখতে পাইনি। ওর ফোন সব সময় ব্যস্ত থাকত। বিভিন্ন সময় অসামাজিক কাজে লিপ্ত ছেলেদের সঙ্গে ও ঘুরে বেড়াত। আমাদের সঙ্গে তেমন মেলামেশা করত না। অসামাজিক ছেলেদের সঙ্গে মেলামেশা ওর জীবনে কাল ডেকে এনেছে।
চিন্ময়ের মা মমতা মণ্ডল বলেন, সম্বন্ধ করেই ছেলের বিয়ে দিয়েছিলাম। তখন জানতাম না বউমার চরিত্র। পরে বউমার কম্পিউটার ও ফোন থেকে একাধিক ছেলের সঙ্গে সম্পর্কের ছবি পাই। কিছুজনের কাছে কলরেকর্ডিং পেয়েছিলাম। মেয়েটা পরিবারটিকে শেষ করে দিল।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন