বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে শান্তিরক্ষীদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের স্বীকৃতি স্বরপ একসেট স্মারক ডাকটিকেট অবমুক্ত করল জাতিসংঘ। শনিবার জাতিসংঘের পোস্টাল অ্যডমিনিষ্ট্রেশন ও জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের যৌথ উদ্যোগে ‘জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের আন্তর্জাতিক দিবস ২০২০ (শান্তিরক্ষী দিবস)’ উপলক্ষে এই ডাকটিকিট অবমুক্ত করা হয়।
স্মারক ডাকটিকিটের ফলিওতে রয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা, মুজিব বর্ষের লোগো এবং জাতির পিতার প্রতিকৃতিসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের ছবি। আরও রয়েছে জাতিসংঘের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নিয়োজিত বাংলাদেশের দুইজন নারী হেলিকপ্টার পাইলটের আইকনিক প্রতিকৃতি।
এই স্মারক ডাকটিকিট জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের বছরব্যাপী উদ্যোগেরই অংশবিশেষ। এটি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের সুদীর্ঘ ও গৌরবময় অংশগ্রহণেরও স্বীকৃতি যার শেকড় প্রোথিত রয়েছে ১৯৭৪ সালে সাধারণ পরিষদে জাতির পিতা প্রদত্ত ভাষণের কালজয়ী ঘোষণা -“মানবজাতির অস্তিত্ব রক্ষার জন্য শান্তি একান্ত দরকার”-এর মধ্যে এবং “সকলের সাথে বন্ধুত্ব কারো সাথে বৈরিতা নয়” –এই নীতি-আদর্শে।
জাতিসংঘ সদর দপ্তরে দিনটি উদযাপনের অংশ হিসেবে হেলমেটের অধীনে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন তাঁদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেজ। যে সকল শান্তিরক্ষী বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য নিবেদিতভাবে দায়িত্বপালন করে যাচ্ছেন তাঁদের প্রতিও বিনম্র শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন জাতিসংঘ মহাসচিব। পরবর্তীতে একটি ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জাতিসংঘ মহাসচিব ২০১৯ সালে কর্তব্যরত অবস্থায় জীবন উৎসর্গোকারী ৮৩ জন শান্তিরক্ষীকে মরোণোত্তর দ্যাগ হ্যামারশোল্ড মেডেলে ভূষিত করেন যার মধ্যে বাংলাদেশের দু’জন আত্মোৎসর্গকারী শান্তিরক্ষী রয়েছেন। তাঁরা হলেন- কনস্টেবল মোহাম্মদ ওমর ফারুক এবং সৈনিক আাতিকুল ইসলাম।
এই স্মরণ ও পদক প্রদানের ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মাঝে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমাসহ সদস্য রাষ্ট্রসমূহের স্থায়ী প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটিতে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধির একটি বার্তাও প্রদর্শন করা হয়।
এ প্রসঙ্গে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা বলেন, “এটি জাতির পিতার দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং শান্তির মতবাদের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিন্ম্র ও যথোপযুক্ত শ্রদ্ধাঞ্জলী; যে শান্তির মতবাদের ভিত্তির উপর গড়ে উঠেছে আমাদের পররাষ্ট্রনীতি। এটি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে আমাদের প্রতিশ্রুতি এবং আমাদের বীর ও নিঃস্বার্থ শান্তিরক্ষীদের প্রতি যথোপযুক্ত সম্মানেরও নিদর্শন”।
উল্লেখ্য জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয় ১৯৮৮ সালে। শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশসমূহের মধ্যে অন্যতম দেশ বাংলাদেশের ১ লাখ ৭০ হাজার ২২১ জন শান্তিরক্ষী ৪২টি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে এ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে ৯টি মিশনে ৬৫৪৩ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী কর্মরত রয়েছেন।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন