পরকীয়ায় বাধা জীবন দিতে হলো কিশোরীকে

পরকীয়ায় বাধা জীবন দিতে হলো কিশোরীকে

ফরিদপুরের মধুখালীতে মায়ের পরকীয়ায় বাধা দেয়ায় কেয়া আক্তার (১২) নামে এক কিশোরীকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। সে মধুখালী মহিলা মাদরাসায় পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াশোনা করত।সোমবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুরে পৌর এলাকার চরমহিষাপুর গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে ওই ছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই ছাত্রীর মা তাকে খুন করে লাশ ঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখেন।

জানা গেছে, চরমহিষাপুর গ্রামের বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী আবুল কালাম আজাদের স্ত্রী বেগমের (৩৫) সঙ্গে মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার রিপন নামে এক যুবকের পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মায়ের পরকীয়ার বিষয়টি বড় মেয়ে কেয়া জানতে পারে। এ নিয়ে মা-মেয়ের মধ্যে মাঝে মধ্যেই বাকবিতণ্ডা হতো।

এর এক পর্যায়ে রোববার (২৭ ডিসেম্বর) দিবাগত রাতে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বাইরে যাওয়ার সময় আজাদ ঘরের আড়ার সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় মেয়েকে ঝুলে থাকতে দেখেন। তখন সবাইকে ডেকে কেয়ার মরদেহ নিচে নামান তিনি। পরে পুলিশ আজ সকালে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

স্থানীয় বাসিন্দা মাসুদ হোসেন বলেন, ‘মা বেগমের পরকীয়া প্রেম নিয়ে মেয়ে কেয়ার সঙ্গে কয়েকদিন ধরে ঝগড়া চলছিল। তারই জেরে কেয়াকে হত্যা করা হয়েছে। মেয়েটিকে হত্যা করে এখন আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।’তিনি আরও বলেন, ‘একই ঘরের মধ্যে তারা থাকতো। গলায় ফাঁস দেয়ার সময় শব্দ তো কানে আসার কথা। কেউই টের পেল না। ওই মেয়েটির বাবা কানে শোনে না, কথাও বলতে পারে না। ওর মা কেয়াকে মেরে ফেলেছে। ওর বাবা কিছুই বুঝতে পারেনি।’

কেয়া আক্তারের মা বেগম জানান, একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে রিপন নামের ওই যুবকের সঙ্গে তার পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিষয়টি মেয়ে কেয়া আক্তার জানতো। এ নিয়ে মেয়ের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হতো।তবে তার দাবি, কেয়া আত্মহত্যা করেছে, তবে কি কারণে করেছে সেটা তিনি বলতে পারছেন না।

এদিকে, নিহত কেয়ার ছোটবোন প্রিয়া (১০) বলে, ‘শিবচরের রিপনের সঙ্গে মা মোবাইলে কথা বলতো। রিপন আমাদের বাড়িতে কয়েকবার বেড়াতেও এসেছে। রিপনের পরিচয় জানতে চাইলে মা বলতো, তার মামা শ্বশুর হয়। আমার বোনকে মেরে ফেলেছে ওরা।’

এ বিষয়ে মধুখালী পৌরসভার মেয়র খন্দকার মোরশেদ রহমান লিমন বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। স্থানীয়দের কাছে জানতে পারি, মায়ের পরকীয়ার কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে। তবে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলেই মূল রহস্য উদঘাটন হবে।’তিনি আরও বলেন, ‘ওই ছাত্রীর বাবা কথা বলতে পারে না, এমনকি কিছু শুনতেও পারে না। তাই তার কাছ থেকে কিছুই জানতে পারিনি। স্থানীয়দের কাছ থেকেই শুনেছি মাত্র।’

মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ওই ছাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় ইউডি মামলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলেই মূল রহস্য জানা যাবে।’তিনি আরও বলেন, ‘ওই ছাত্রীর মায়ের সঙ্গে এক যুবকের পরকীয়ার বিষয়টি শুনেছি, মেয়েটির মৃত্যুর সঙ্গে বিষয়টি জড়িত কি-না তা তদন্ত করা হচ্ছে। তাছাড়া ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলেই নিশ্চিত হওয়া যাবে আত্মহত্যা নাকি হত্যা করা হয়েছে।’

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password