কক্সবাজার সীমান্তে আবারও বেড়েছে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ

কক্সবাজার সীমান্তে আবারও বেড়েছে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ

কক্সবাজার সীমান্তে আবারও বেড়েছে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রবেশ করেছে ২ শতাধিক। কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ির সীমান্ত দিয়ে আবারও বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে রোহিঙ্গা। মিয়ানমারের বন্দর শহর মংডুতে বিদ্রোহী ও জান্তা বাহিনীর লড়াই তীব্র হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সীমান্তের এপারে চলে আসছে রোহিঙ্গারা। গতকাল শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) ও এর আগের দিন শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুই দিনেই ৭০০-৮০০ রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটেছে।

এপারের দালালরা মোটা অঙ্কের বিনিময়ে সবচেয়ে বেশি রোহিঙ্গা নিয়ে আসছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অনেকটা গোপনে এবং বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে কিছু কিছু রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশের কথা স্বীকার করেছেন রোহিঙ্গা ক্যাম্প ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত সরকারের যুগ্ম সচিব ও কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) অফিসের অতিরিক্ত আরআরআরসি মো. শামছুদ্দৌজা নয়ন।

আজ রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকালে তিনি বলেন, ‘আগস্টের আন্দোলনের সময়টার সুযোগ নিয়ে অন্তত ৮ হাজার রোহিঙ্গা ঢুকে পড়েছে ক্যাম্পগুলোতে। এসব অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা কে কোন ক্যাম্পে রয়েছে, তার তালিকাও ইতিমধ্যে করা হয়েছে। তবে পরবর্তী সময়ে এ রকম বড় চালানের রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটেনি।

এদিকে সীমান্ত এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত শুক্রবার এবং গতকাল শনিবার সবচেয়ে বেশি রোহিঙ্গা ঢুকে পড়েছে। এ ছাড়া মিয়ানমারের মংডুর মনিপাড়া, সিকদারপাড়া ও আইরপাড়া এলাকায় অন্তত ৪০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক রোহিঙ্গা নেতা বলেন, নতুন করে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েই এপারের দালালরা রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ করাচ্ছে।

পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা এমনও জানান, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘাতের মধ্যে সীমান্তে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা বাংলাদেশে ঢুকে উখিয়া-টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে আশ্রয় নিচ্ছেন। মিয়ানমার থেকে গত শুক্রবার পালিয়ে ক্যাম্প-১-এ আশ্রয় নিয়েছেন মোহাম্মদ জাকের।

তিনি জানান, স্ত্রী-সন্তানসহ পাঁচজন সীমান্তে দুই দিন অপেক্ষার পর শুক্রবার কৌশলে পার হয়ে ক্যাম্পে এসেছেন। গতকাল শনিবার মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে ক্যাম্প-১-এর বি-ব্লকে আশ্রয় নিয়েছেন সাব্বির আহমেদ।

তিনি জানান, তার দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে টেকনাফের জাদিমুড়া সীমান্ত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন। জীবন রক্ষার জন্য তারা সপরিবারে পালিয়ে এসেছেন বলেও জানান এই রোহিঙ্গা। সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিরা জানান, রাখাইনের মংডু টাউনশিপের বিপরীতে (পশ্চিমে) চার কিলোমিটার প্রস্থের নাফ নদ পেরোলেই বাংলাদেশের টেকনাফ উপজেলা।

রাতের অন্ধকারে মংডু টাউনশিপের সুদাপাড়া, ফয়েজীপাড়া, সিকদারপাড়া ও নুরুল্লাপাড়া গ্রাম থেকে রোহিঙ্গারা নৌকা নিয়ে নাফ নদ অতিক্রম করে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে। বেশির ভাগ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকছে জাদিমোরা, দমদমিয়া, কেরুনতলি, বরইতলি, নাইট্যংপাড়া, জালিয়াপাড়া, নাজিরপাড়া, মৌলভীপাড়া, নয়াপাড়া, শাহপরীর দ্বীপ, জালিয়াপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, ঘোলারচর, খুরেরমুখ, আলীর ডেইল, মহেষখালীয়াপাড়া, লম্বরী, তুলাতলি, রাজারছড়া, বাহারছড়া সীমান্ত এবং উপকূল দিয়ে।

টেকনাফে আশ্রয়শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সহকারী পুলিশ সুপার মাইন উদ্দিন বলেন, ‘কিছুসংখ্যক রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে ঢুকে পড়েছে। তাদের নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। নতুন করে কোনো রোহিঙ্গা যেন ঢুকতে না পারে, সে ব্যাপারে আশ্রয়শিবিরে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আদনান চৌধুরী বলেন, ‘সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটছে। অনুপ্রবেশের সময় বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে নাফ নদ থেকে পুনরায় মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদ ও সীমান্তে টহল জোরদার করা হয়েছে।’

এদিকে উখিয়ার কয়েকটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হঠাৎ করে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। গত দুই দিনে দুই রোহিঙ্গা গ্রুপের গোলাগুলিতে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছে। রোহিঙ্গা নেতা আলী হোসেন বলেন, ‘বৃহস্পতিবার ক্যাম্প-১৮-তে দুই পক্ষের গোলাগুলিতে সাতজন আহত হন। এর আগের দিন ক্যাম্প-১৫-তে আহত হয়েছেন আরো আটজন।’

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password