স্বাস্থ্যবিধি মেনে আগামী সোমবার (২৬ এপ্রিল) থেকে দেশের সব দোকান ও শপিংমল খুলে দেয়া হতে পারে বলে আশা করছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলালউদ্দিন। মঙ্গলবার (২০ এপ্রিল) সন্ধ্যার পর তিনি কাছে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।কীসের ভিত্তিতে দোকান ও শপিংমল খুলে দেয়ার আশা করছেন জানতে চাইলে হেলালউদ্দিন বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেছি। প্রধানমন্ত্রী আমাদের কথা শুনেছেন।
তিনি বলেন, গতবছর আমরা পহেলা বৈশাখ ও রোজায় ব্যবসা করতে পারিনি। আমাদের লাখ লাখ ব্যবসায়ী লোকসানের মুখে পড়েছেন। এবার রোজার ব্যবসা করতে না পারলে লক্ষাধিক ব্যবসায়ী পথে বসবেন। তাই আমরা আশাকরছি জনদরদী প্রধানমন্ত্রী আমাদের দাবি সুবিবেচনা করবেন।
প্রধানমন্ত্রী আপনাদের কোনো আশ্বাস দিয়েছেন? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, না। প্রধানমন্ত্রী আমাদের কথা শুনেছেন। আমরা যেহেতু প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে পেরেছি, তাই আশাকরি তিনি আমাদের দাবি বিবেচনা করবেন। এর আগেও প্রধানমন্ত্রী আমাদের অনেক দাবি মেনে নিয়েছেন।তিনি আরও বলেন, আমাদের দাবি মেনে সোমবার থেকে দোকান ও শপিংমল খুলে দেয়া হলে আমরা শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে ব্যবসা করব।
এর আগে গত ১৮ এপ্রিল রাজধানীর নিউমার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি ২২ এপ্রিল থেকে দোকান ও শপিংমল খুলে দেয়ার দাবি জানায়।
ওই সংবাদ সম্মেলনে হেলালউদ্দিন বলেন, গত একবছর প্রাণঘাতী মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ২০২০ সালের ১৮ মার্চ যখন বাংলাদেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে তখন আমরা দোকান মালিকরা স্বেচ্ছায় ২৫ মার্চ থেকে সবকিছু বন্ধ করে দেই। সরকার পরদিন ২৬ মার্চ থেকে সবকিছু বন্ধ ঘোষণা করে। তখন থেকে এদেশের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জীবনে চরম ব্যবসায়িক মন্দা ও আর্থিক অনিশ্চয়তা নেমে আসে।
তিনি বলেন, ‘গত বছরের ৫ মে’র পর আমাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে সীমিত পরিসরে দোকানপাট ও মার্কেট খুলে দেয়ার পর ব্যবসা-বাণিজ্যে কিছুটা গতি আসে। এরপর আবার সংক্রমণ বাড়তে থাকায় গত ৭ থেকে ১৩ এপ্রিল বিধিনিষেধ এবং ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার।’
একই সংবাদ সম্মেলনে নিউমার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহিন বলেন, ‘জীবন আর জীবিকার মধ্যে জীবন প্রায়োরিটিতে এসে গেছে। লকডাউনের উদ্দেশ্য জনঘনত্ব কমানো কিন্তু বর্তমানে কী দেখা যাচ্ছে? লকডাউন শুরুর আগে শুনেছিলাম সর্বাত্মক লকডাউন, এর সংজ্ঞা আসলে কী? সারাদেশে আমরা যারা দোকানদার তারাই শতভাগ লকডাউন পালন করেছি। আরা সীমিত সুবিধা ও অমুক-তমুকের আড়ালে অনেকের ব্যবসা ভালো চলছে। শুধু দোকানদাররা বঞ্চিত হচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘অবশ্যই জীবন আগে কিন্তু বর্তমানের মতো যদি সবাইকে এভাবে সীমিত আকারের নামে সুযোগ দেয়া হয় তাহলে লকডাউন সফল হবে না। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদেরও সুযোগ দেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।চাঁদনীচক মার্কেটের সভাপতি নিজামউদ্দিন বলেন, ‘করোনার সংক্রমণরোধে সরকারের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার যে নির্দেশনা রয়েছে তা সম্পূর্ণরূপে প্রতিপালন করার শর্তেও সীমিত সময়ের জন্য মার্কেট খুলে দেয়া হোক।’
আরেকজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘ব্যাংক, বীমা, শেয়ারবাজার, কাঁচাবাজার, উড়োজাহাজ সবই চলছে। গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি খোলা ও নির্মাণকাজ চলছে। এতকিছু খোলা থাকলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা কেন দোকানপাট খোলা রাখতে পারব না?’ লম্বা সময় ধরে দোকানপাট খোলা রাখলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নির্বিঘ্নে বেচাকেনা করা যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশ বস্ত্র মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের একজন পরিচালক বলেন, ‘রমজানের ঈদকে সামনে রেখে যে বস্ত্র তৈরি হয়েছে তা ঈদের পরে মূল্য এক-চতুর্থাংশও থাকবে না। আরেকজন ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। আমরা বাঁচতে চাই। মার্কেট ও দোকানপাট খুলে না দিলে দুর্ভিক্ষে মালিক ও কর্মচারীরা মারা যাবে। বছরের আটটি মাস রমজানে বেচাকেনার জন্য আমরা অপেক্ষায় থাকি।’
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন