জীবনের প্রশান্তি হালাল উপার্জনে : হালাল উপার্জন ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনকে সমৃদ্ধ করে। উপার্জন স্বল্প হলেও তা শান্তি ও সাফল্য বয়ে আনে। বিপরীতে অবৈধ উপার্জন জীবন ও সম্পদের বরকত কমিয়ে দেয়। ব্যক্তি ও পারিবারিক সংকটের পাশাপাশি সমাজ ও রাষ্ট্রে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এ জন্যই আল্লাহ তাআলা ইসলামের বিভিন্ন বিধানের পাশাপাশি বৈধ উপার্জনের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। এমনকি নবীদের মাধ্যমেও তিনি প্রত্যেক জাতিকে হালাল উপার্জনের উৎসাহ দিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিজ হাতে উপার্জিত খাদ্যের চেয়ে উত্তম খাদ্য কখনো কেউ খায় না। আল্লাহর নবী দাউদ (আ.) নিজ হাতে উপার্জন করে খেতেন। (বুখারি, হাদিস : ২০৭২)
প্রিয় নবী (সা.)-এর জীবিকা নির্বাহ : আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) অন্যের ওপর নির্ভরশীল হওয়া পছন্দ করতেন না; বরং নিজ হস্তের উপার্জনই তিনি বেশি পছন্দ করতেন। তাই তো প্রিয় নবী (সা.) বাল্যকাল থেকেই বকরি চরানো এবং যৌবনকালে ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করেন। সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা এমন কোনো নবী প্রেরণ করেননি, যিনি বকরি চরাননি। তখন সাহাবিরা বলেন, আপনিও? তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি কয়েক কিরাতের (মুদ্রা) বিনিময়ে মক্কাবাসীদের ছাগল চরাতাম।’ (বুখারি, হাদিস : ২২৬২)
কাঠের আসবাব দিয়ে নুহ (আ.)-এর উপার্জন : নুহ (আ.) আল্লাহর প্রেরিত প্রথম রাসুল। আদম (আ.)-এর আগমনের এক হাজার বছর পর তাঁর আগমন হয়। সর্বপ্রথম আল্লাহ তাআলা তাঁকেই শরিয়ত দান করেন। সম্মানিত এই নবীও আল্লাহর বার্তা পৌঁছানোর দায়িত্বের পাশাপাশি নিজ হাতে উপার্জন করে সংসার চালিয়েছেন। তিনি কাঠ দিয়ে সৃজনশীল আসবাব তৈরির কলাকৌশল জানতেন।
আল্লাহ তাআলা যে জাতির কাছে তাঁকে প্রেরণ করেছিলেন তারা ছিল পৃথিবীতে প্রথম শিরক ও মূর্তিপূজার প্রচলনকারী। বারবার সতর্ক করার পরেও তারা যখন একত্ববাদের পথে ফিরছিল না, তখন আল্লাহ নুহ (আ.)-কে কাঠের তৈরি নৌকা বানানোর নির্দেশ দেন। পবিত্র কোরআনে তার নৌকা বানানোর চিত্র এভাবে তুলে ধরা হয়েছে, ‘আর আপনি আমার সম্মুখে আমারই নির্দেশ মোতাবেক একটি নৌকা তৈরি করুন এবং পাপিষ্ঠদের ব্যাপারে আমাকে কোনো কথা বলবেন না। অবশ্যই তারা ডুবে মরবে। (আর নির্দেশ পাওয়ার পর) তিনি নৌকা তৈরি করতে লাগলেন...। (সুরা হুদ, আয়াত : ৩৭-৩৮)
ইবরাহিম (আ.)-এর কাবা গৃহ নির্মাণ : ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর বন্ধু ও তাঁর প্রিয় রাসুল। তিনিও রিসালাতের দায়িত্বের পাশাপাশি নিজ হাতে উপার্জন করেছেন। নির্মাণকাজে তিনি ছিলেন বেশ দক্ষ। নুহ (আ.)-এর যুগে যখন মহাপ্লাবনে কাবাগৃহ ধ্বংস হয়ে যায়, তখন আল্লাহ তাআলা ইবরাহিম (আ.)-কে তাঁর পুত্র ইসমাঈল (আ.)-কে সঙ্গে নিয়ে কাবাগৃহ পুনর্নির্মাণের নির্দেশ দেন। নির্মাণকাজ শুরু হলে ইসমাঈল (আ.) পাথর নিয়ে আসতেন এবং ইবরাহিম (আ.) নির্মাণকাজ সম্পন্ন করতেন। এক পর্যায়ে কাবার দেয়াল যখন উঁচু হয়ে গেল, তখন আল্লাহর কুদরতি ‘লিফট’ পাথর ‘মাকামে ইবরাহিমে’র মাধ্যমে তিনি নির্মাণকাজ সম্পন্ন করেন।
এ মর্মে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘স্মরণ করো, যখন ইবরাহিম ও ইসমাঈল কাবাগৃহের ভিত্তি স্থাপন করছিল। তারা দোয়া করেছিল, পরওয়ারদেগার, আমাদের থেকে কবুল করো। নিশ্চয়ই তুমি শ্রবণকারী, সর্বজ্ঞ।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১২৭)
লোহা থেকে দাউদ (আ.)-এর জীবিকা নির্বাহ : দাউদ (আ.) ছিলেন তৎকালীন সময়ের রাজা এবং আল্লাহর মনোনীত নবী ও রাসুল। তাঁর ক্ষমতায় বিশাল রাজত্ব ও প্রচুর সম্পত্তি থাকার পরেও তিনি নিজ হাতে উপার্জিত বস্তু ভোগ করতে বেশি পছন্দ করতেন। এ জন্যই আল্লাহ তাআলা তাঁকে লোহা দিয়ে বর্ম ও অস্ত্রশস্ত্র তৈরি করার কৌশল শিক্ষা দেন। শক্ত ও কঠিন লোহা স্পর্শ করলে তা নরম হয়ে যেত। যুদ্ধাস্ত্র, লৌহ বর্ম ও দেহবস্ত্র প্রস্তুত করা ছিল তাঁর পেশা। এগুলো বিক্রি করে তিনি জীবিকা নির্বাহ করতেন। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহর নবী দাউদ (আ.) নিজের হাতের উপার্জন থেকেই খেতেন। (বুখারি, হাদিস : ২০৭৩)।
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে হালাল রিজিকের অন্বেষণ করার তাওফিক দিন।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন