ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। এ ছাড়া তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী জাতীয় স্মৃতিসৌধে পৌঁছান। স্মৃতিসৌধে লোটে শেরিংকে স্বাগত জানান মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরিফ আহমেদ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল শাহীনুল হক, ঢাকার পুলিশ সুপারিনটেনডেন্ট মো. মারুফ হোসেন সরদার।
পরে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে। বিউগলে বাজে করুণ সুর।
লোটে শেরিং স্মৃতিসৌধে পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন। তিনি পরিদর্শন বইয়ে লেখেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী বাংলাদেশের সাহসী সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো আমার জন্য সম্মানের বিষয়। তাঁদের এই ত্যাগ বাংলাদেশের ইতিহাসের পাতায় সমুজ্জ্বল থাকুক।’
স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে একটি লটকন ফল গাছের চারা রোপণ করেন লোটে শেরিং।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আজ সকালে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকায় আসেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী।
ভুটানের প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী উড়োজাহাজটি সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমানবন্দরে ভুটানের প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানান।
বিমানবন্দরে লোটে শেরিংকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। রাষ্ট্রীয় অতিথিকে স্বাগত জানাতে ২১ বার গান স্যালুট দেওয়া হয়। দেওয়া হয় গার্ড অব অনার।
বিমানবন্দর থেকে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যান। স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর তিনি ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে যান। সেখানে তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির জনক ও সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। পরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন। সেখানে রাখা পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন
পরে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বিমসটেক সেক্রেটারি জেনারেলের বাসভবনে সেক্রেটারি জেনারেল ও ডিরেক্টরদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন আজ বিকেলে লোটে শেরিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। সন্ধ্যায় ভুটানের প্রধানমন্ত্রী একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভোজসভার আয়োজন করবেন।
আগামীকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে লোটে শেরিংয়ের সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে। সেখানে একান্ত ও দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে।
কাল ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ভিনসেন্ট চাং ও শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারির ডা. মো. মামুন খানের সঙ্গে পৃথকভাবে ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে।
কাল বিকেলে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
কাল বিকেল ৫টার দিকে লোটে শেরিং সম্মানিত অতিথি হিসেবে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে আয়োজিত ‘মুজিব চিরন্তন’ অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। সেখানে তাঁকে অভ্যর্থনা জানাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেবেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উদ্যাপনে ১৭ মার্চ থেকে ১০ দিনব্যাপী বিশেষ অনুষ্ঠানমালা শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্য নির্দেশনা মেনে ২৬ মার্চ পর্যন্ত এই অনুষ্ঠান চলবে। অনুষ্ঠানের মূল থিম ‘মুজিব চিরন্তন’। তবে বিভিন্ন দিনের অনুষ্ঠানের পৃথক থিম থাকছে।
‘মুজিব চিরন্তন’ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে প্রথম বিশ্বনেতা হিসেবে ১৭ মার্চ ঢাকায় আসেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ। দ্বিতীয় বিশ্বনেতা হিসেবে ১৯ মার্চ ঢাকায় আসেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপক্ষে। তৃতীয় বিশ্বনেতা হিসেবে ২২ মার্চ আসেন নেপালের প্রেসিডেন্ট বিদ্যা দেবী ভান্ডারি। আজ এলেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং। আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২৬ মার্চ ঢাকায় আসবেন।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন