বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর জন্য সবচেয়ে উপযোগী যুদ্ধবিমান

বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর জন্য সবচেয়ে উপযোগী যুদ্ধবিমান

যদি বলা হয় বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান ও অর্থনীতির কথা বিবেচনা করে সবচেয়ে আদর্শ যুদ্ধবিমান কোনটি। তাহলে অনেকটা এগিয়ে থাকবে এফ-১৮ ব্লক থ্রি যুদ্ধবিমান। আর কেন এগিয়ে থাকবে তা ধাপে ধাপে বিশ্লেষণ করা যাক। এফ-১৮ হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি একটি চতুর্থ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান যা মূলত মার্কিন নৌবাহিনী ব্যবহার করে থাকে। দুই ইঞ্জিন বিশিষ্ট এই যুদ্ধবিমানটি বিশ্বে মাত্র কয়েকটি দেশ ব্যবহার করলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ব শাসনের অন্যতম অস্ত্র এটি। এর সক্ষমতা বিচার করতে গেলে প্রথমে এর এয়্যারফ্রেমের কথা বলতে হয়।

এয়্যারফ্রেম: F-18 হর্নেট থেকে সুপার হর্নেট অনেকটা ভিন্ন । এটি আগের ভার্সন থেকে ২০% বড় এবং ৪০% বেশি ফুয়েল নিয়ে উড়তে পারে। এয়ার ইনলেটে পরিবর্তন আনা হয়েছে যাতে রাডার ক্রশ সেকশন কমে।মূলত শত্রু রাডার ওয়েভ থেকে ইঞ্জিন ব্লেড লুকোনোর জন্য এই কৌশল। কারণ ইঞ্জিন ব্লেড কম্পোজিট ম্যাটেরিয়াল ইউজ করেনা। সুপার হর্নেটের এয়ারফ্রেমের লাইফটাইমও বৃদ্ধি পেয়েছে। ৬০০০ থেকে বেড়ে এর লাইফটাইম হয়েছে কমপক্ষে ১০০০০ ঘন্টা। সেই হিসেবে প্রতি বছর ৩০০ ঘন্টা উড়লে মোটামুটি ৩৩ বছর সার্ভিস দিবে। আর কনফর্মাল ফুয়েল ট্যাংক ব্যবহারের ফলে বাড়তি ওয়েল ট্যাংক ছাড়াই বেশিক্ষণ উড়তে পারবে। কম্পোজিট ম্যাটেরিয়াল পাশাপাশি কিছু স্টেল্থি সেইপ থাকায় এর RCS .1-1 SQM. সুতরাং আধুনিক যুদ্ধবিমানগুলো একটি ৮০-৯০ কিমি এর আগে ডিটেক্ট করতে পারবেনা। এই এয়ারফ্রেমের আরেকটি বিশেষত্ব হলো এটার খুব কম মেইনটেনেন্স এর দরকার পরে। যেহেতু এটি ক্যারিয়ার থেকে অপারেট করা হয় তাই আপনি চাইবেন না এটি যুদ্ধ করে এসে দীর্ঘক্ষণ ক্যারিয়ারে পরে থাকুক। একটা এয়ারক্রাফ্ট ক্যারিয়ারে লিমিটেড ইঞ্জিনিয়ার এবং লিমিটেড যুদ্ধবিমান থাকে। তাই দীর্ঘদিন সমুদ্রে থেকে যুদ্ধ করার জন্য এমন যুদ্ধবিমান দরকার যার কম মেইনটেনেন্স দরকার পরে। সেই কথা মাথায় রেখে এই যুদ্ধবিমানটি ডিজাইন করা হয়েছে।

রাডার: এই যুদ্ধবিমানটিতে ব্যবহার করা হয়েছে AN/APG-79 AESA RADAR. এটি রাফালে/ টাইফুনের চেয়েও শক্তিশালী রাডার।‌এর রেঞ্জ ১৫০ কিমি ১ স্কয়ার মিটার টার্গেটের জন্য। অর্থাৎ যে যুদ্ধবিমানের রাডার ক্রশ সেকশন ১ স্কয়ার মিটার সেটিকে এই রাডার ১৫০ কিমি দূরে থেকে শনাক্ত করতে পারবে। এটিকে শক্তিশালী রাডার বলার কারণ হচ্ছে এফ-১৬ ব্লক ৭০, রাফালে,টাইফুন যুদ্ধবিমানের রাডার ১ স্কয়ার মিটারের টার্গেট মোটামুটি ৮০-১০০ কিমি দূর থেকে শনাক্ত করতে পারে। তাই এখানে এফ-১৮ অনেকটা এগিয়ে। এই রাডারটি একসাথে ২০ টি টার্গেট ট্র্যাকিং করতে পারে এবং ৬ টি টার্গেট এঙ্গেজ করতে পারে। সুতরাং বিভিআর কম্বাটে ভালো এডভান্টেজ দিবে এই রাডার। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এটি একটি মাল্টিমোড রাডার। এয়ার সার্চ এর পাশাপাশি গ্রাউন্ড সার্চিং করতে পারে। গ্রাউন্ড মোডে এটি ৩০০ কিমি দূর থেকে টার্গেট শনাক্ত করতে পারে। সমুদ্রে নজরদারির জন্য খুব ভালো সুবিধা দিবে এই রাডার।

IRST SENSOR: এই যুদ্ধবিমানে সর্বশেষ সংস্করণ হচ্ছে IRST SENSOR. মার্কিন চতুর্থ প্রজন্মের যুদ্ধবিমানে IRST সেন্সর ব্যবহার করা হয়না। এই সেন্সরটিও খুব শক্তিশালী। ১০০ কিমি দূর থেকে টার্গেট শনাক্ত করতে সক্ষম। অন্যান্য যুদ্ধবিমানের IRST SENSOR এর রেঞ্জ মোটামুটি ৭০-৮০ কিমি। IRST সেন্সরের মূল সুবিধা হচ্ছে যে সকল যুদ্ধবিমানের RCS খুব কম। যেমন স্টীল্থ যুদ্ধবিমান। এই সেন্সর সেগুলোকে মোটামুটি ১০০ কিমি দূর থেকে শনাক্ত করতে সক্ষম। আর এটি যেহেতু পেসিভ সিস্টেম তাই রাডার বন্ধ করে খুব গোপনে শত্রুর উপর নজরদারি করতে সক্ষম।

ইঞ্জিন: ইঞ্জিন হিসেবে এতে ব্যবহার করা হয়েছে GE-F414. যার সর্বোচ্চ থ্রাস্ট 98KN. এর মাধ্যমে এই যুদ্ধবিমান ১.৮ মাক গতিতে চলতে সক্ষম। অনেকেই মনে করে মাক ২ হলে ভালো। কিন্তু আসল কথা হচ্ছে যুদ্ধবিমান নরমালি ১.২ মাক গতিতে ফ্লাই করে। বিশেষ প্রয়োজনে ১.৫ মাক ক্রশ করে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে এই ইঞ্জিনটি এতই রিলায়েবল যে ভারত, দক্ষিণ কোরিয়াসহ কয়েকটি দেশ তাদের ভবিষ্যৎ যুদ্ধবিমানের জন্য এটি সিলেক্ট করেছে। আর এর আপগ্রেডেড ভার্সনের থ্রাস্ট হবে ১১৬ নিউটন। এর ফলে ২ ইঞ্জিন মিলিয়ে ২৩২ নিউটন থ্রাস্ট হবে। এই ইঞ্জিনটি ফুয়েল এফিসিয়েন্ট। ১ ঘন্টায় মোটামুটি ৫০০ গ্যালন জ্বালানি পুড়ে। সেই হিসেবে ২ ইঞ্জিন ১০০০ গ্যালন জ্বালানি পুড়বে। তো মোটামুটি ৩০০০ মার্কিন ডলারের জ্বালানি পুড়বে প্রতি ঘন্টায়। এর সার্ভিস লাইফ রাশিয়ান ইঞ্জিনের দ্বিগুণের চেয়েও বেশি। আরেকটি বিষয় হচ্ছে ইঞ্জিন যত শক্তিশালী হবে যুদ্ধবিমানের রাডার, জ্যামার, সেন্সর ততটা কার্যকর হবে।

অস্ত্র: অস্ত্র হিসেবে এতে আমেরিকার তৈরি প্রায় সকল ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করা যায়। মোট ৮০০০ কেজি পেলোড বহন করতে সক্ষম এই যুদ্ধবিমান। বেশিরভাগ যুদ্ধবিমানের পেলোড ৮-১০ হাজার কেজি বলা হলেও এক্সটার্নাল ফুয়েল ট্যাংক নিলে ৫-৬ হাজার কেজির বেশি অস্ত্র বহন করতে পারেনা। যেহেতু এই যুদ্ধবিমানে CFT( conformal fuel tank) আছে,তাই এতে আলাদা করে ট্যাংক এর দরকার নাই। এটি পুরো ৮০০০ কেজি অস্ত্র বহন করতে পারবে। এরপর সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ হচ্ছে স্টীল্থ পড। এই পডের ভেতরে চারটি মিসাইল বহন করা যায়। ফলে রাডার ক্রশ সেকশন বৃদ্ধি না করেই অনেকটা স্টীল্থ যুদ্ধবিমানের মতো কাজ করবে। মিসাইল বহন করলে যুদ্ধবিমানের ড্র্যাগ বৃদ্ধি পায় এবং ম্যানুভারেবালিটি কমে যায় সেই সমস্যাও হবেনা এই স্টেল্থি পড ব্যবহার করলে।

ইলেকট্রনিক্স: আধুনিক যুদ্ধবিমানে যে যে ইলেকট্রনিক্স সেন্সর, কম্পিউটিং সিস্টেম থাকা দরকার। এই যুদ্ধবিমানে অনেকগুলো মিসাইল এপ্রোচ ওয়ার্নিং সেন্সর, লেজার ওয়ার্নিং সেন্সর আছে যার মাধ্যমে এটি শত্রুর রাডার গাইডেড অথবা ইনফ্রারেড গাইডেড মিসাইল শনাক্ত করে সিগন্যাল দিতে পারবে এবং পাশাপাশি প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে। যেমন ফ্লেয়ার,চ্যাফ, ডিকয়।

এছাড়াও এতে BAE এর তৈরি ইনবিল্ট জ্যামিং সিস্টেম রয়েছে। আরেকটি উল্লেখযোগ্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এফএ-১৮ সুপার হর্নেট এর একটি ভার্সন হচ্ছে f-18G( growler). এটি ওয়েপন্স এর বদলে বিভিন্ন ধরনের শক্তিশালী জ্যামার নিয়ে উড়ে। সহজে বলতে গেলে এটি একটি ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার বিমান। যার কাজ হবে শত্রুর রাডার, মিসাইলকে জ্যাম করা অথবা ফাঁকি দেওয়া। বিভিন্ন মিশনে সাধারণ যুদ্ধবিমানকে সুরক্ষা দিতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সবশেষ ফলাফলে এফ-১৮ এর যে এডভান্টেজ থাকবে সেগুলো হচ্ছে। ১: রাফালে, ইএফটি এর তূলনায় শক্তিশালী রাডার যার মাধ্যমে বিডিআর সুবিধা পাওয়া যাবে। ২: এন্টিশীপ মিসাইল। এর হারপুন মিসাইল সমুদ্র নিরাপত্তায় ভালো সুবিধা দিবে। ৩: দুই ইঞ্জিনের যুদ্ধবিমান হিসেবে এর মেইনটেনেন্স ব্যয় তূলনামূলক কম। ৪: কনফর্মাল ফুয়েল ট্যাংক থাকায় বেশি রেঞ্জ ও বেশি অস্ত্র বহন করা যাবে। ৫: স্টেল্থি ওয়েপন পড। কনফর্মাল ফুয়েল ট্যাংক এ জ্বালানি নেওয়ার ফলে আলাদা ট্যাংক এর দরকার নাই তাই রাডার ক্রশ সেকশন কম। তারপর যদি আবার স্টেল্থি পডে চারটি বিভিআর মিসাইল বহন করা হয় তাহলে এর RCS -1M√. শত্রু রাডার তখন ১০০ কিমি এর আগে ডিটেক্ট করতে পারবেনা। ৬: GROWLER । মিশন পরিচালনায় গ্রোওলার এর সাপোর্ট অনেক বেশি এডভান্টেজ দিবে।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password