নির্যাতনের শিকার শিশুটির পড়ালেখা অব্যাহত রাখার নির্দেশ হাইকোর্টে

নির্যাতনের শিকার শিশুটির পড়ালেখা অব্যাহত রাখার নির্দেশ হাইকোর্টে

মাদ্রাসাসহ দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সংবিধান ও প্রচলিত আইন মেনে চলতে সংশ্লিস্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। চট্টগ্রামের হাটহাজারীর একটি মাদ্রাসায় আট বছরের এক শিশু ছাত্রকে বেধড়ক মারধরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ আদেশ দিলেন আদালত। এদিকে নির্যাতনের শিকার ওই শিশু ছাত্রের পড়ালেখা যাতে ব্যাহত না হয় সেদিকে নজর রাখতে চট্টগ্রামের স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শিশুটি ও তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের হাইকোর্ট বেঞ্চ রবিবার স্ব-প্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন। আট বছর বয়সী ছাত্রকে বেধড়ক মারধরের ঘটনায় পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার আদালতের নজরে আনার পর আদেশ দেন।

হাইকোর্ট গত ১১ মার্চ এক আদেশে সংশ্লিস্ট শিক্ষক মাওলানা ইয়াহিয়া ইসলামের বিরুদ্ধে আইনানুগভাবে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, নির্যাতনের শিকার শিশুর পরিবারকে কোনো চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল কীনা, শিশুটিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে কীনা, শিশুটির পরিবারকে নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে কীনা-এসব বিষয় জানতে চান। রবিবারের মধ্যে তা জানাতে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক(ডিসি), পুলিশ সুপার(এসপি) ও হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেওয়া হয়। এ আদেশে গতকাল নির্ধারিত দিনে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক, এসপিসহ সংশ্লিস্টরা হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্যাতনের শিকার শিশুটির পিতা-মাতা অত্যন্ত ধর্মভীরু হওয়ায় তারা তার সন্তানের শিক্ষক এবং কোরআনের হাফেজের বিরুদ্ধে মামলা করতে রাজি হননি। পরে পুলিশ বাদি হয়ে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেয় ও মামলা করা হয়। এরপর তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার করে ওই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, শিশু শিক্ষার্থীকে মারধরের ভিডিও ভাইরালের পর ওই শিক্ষককে মাদ্রাসা থেকেও বহিস্কার করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে সর্তক করা হয়েছে যেন ভবিষ্যতে আর কোনো শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনা না ঘটে। এছাড়া শিশুটির গ্রামের বাড়িতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শিশুটিকে চিকিৎসাও দেওয়া হয়েছে। এই প্রতিবেদন দেখার পর আদালত স্থানীয় প্রশাসনকে শিশুটির পড়ালেখা ও নিরাপত্তার বিষয়ে উল্লেখিত নির্দেশনা দেন।

চট্টগ্রামের হাটহাজারী সদরের মারকাযুল ইসলামিক একাডেমি নামের হাফেজি মাদ্রাসায় গত ৯ মার্চ আট বছর বয়সী এক ছাত্রকে বেধড়ক মারধর করেন মাওলানা ইয়াহিয়া ইসলাম। এই মারধরের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর ওইদিনই মাওলানা ইয়াহিয়া ইসলামকে মাদ্রাসা থেকে বহিস্কার করা হয়। কিন্তু ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করতে শিশুটির পিতা-মাতা রাজি না হওয়ায় পরদিন ১০ মার্চ পুলিশ বাদী হয়ে হাটহাজারী থানায় মামলা করে। ওইদিনই (১০ মার্চ) সন্ধ্যায় গ্রামের বাড়ি রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা থেকে ওই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়। এর পরদিন ১১ মার্চ ওই শিক্ষককে চট্টগ্রাম আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password