স্বপ্ন বাড়ি যাচ্ছে তবে ভিন্ন আঙ্গিকে

স্বপ্ন বাড়ি যাচ্ছে তবে ভিন্ন আঙ্গিকে

মোবাইল নেটওয়ার্ক কোম্পানি গ্রামীন ফোনের বহুল প্রচলিত একটা বিজ্ঞাপন আছে “স্বপ্ন বাড়ি যাবে আমার” গানটা যেন অধিকাংশ বাঙ্গালির সাথে মিলে যায়। আমাদের দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ জীবিকা নির্বাহের জন্য নিজের পরিবার রেখে গ্রাম থেকে শহরে আসে। রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকা, যেটাকে আমরা মেগাসিটি বলি, তার জনসংখ্যা এখন ১ কোটি ৭০ লাখ। তার প্রায় ৮০ ভাগ মানুষ জীবিকা নির্বাহের জন্য ঢাকা এসেছে।

পরিবারের সবার মুখে হাসি ফুটাবার জন্য নিজে কষ্ট করে একা থাকে কিংবা পরিবার নিয়ে নিজের ভিটে বাড়ি ফেলে ঢাকায় কষ্ট করে গাদাগাদি করে থাকে একটু সুখের আশায়। তারা সবাই অধীর অপেক্ষায় থাকে কবে ঈদ আসবে কারণ ঈদ আসলেই পাওয়া যাবে লম্বা ছটি আর সেই সুযোগে যাওয়া যাবে বাড়িতে। সারাবছর অক্লান্ত পরিশ্রম করার পর যখন ঈদে তারা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয় তখন তাদের চোখে মুখে ফুটে উঠে একবুক স্বপ্ন। সবাইকে আবার কাছে পাবার স্বপ্ন, সবার সাথে একসাথে ঈদ করার স্বপ্ন। ঈদের ছুটি হবার পর কারও যেন আর দেরি সহ্য হয়না। কখন বাড়ি ফিরবে? কখন সবাইকে একনজর দেখবে? যখন তারা ঈদ করার জন্য বাড়ি পৌছায় তখন যেন তাদের সারা বছরের ক্লান্তি নিমিষেই দূর হয়ে যায়। সারা বছর পরিবার পরিজনের কাছ থেকে দূরে থাকার কষ্ট দূর হয়ে যায়। বছর ঘুরে আমাদের মাঝে আবার এসেছে ঈদ। নানান স্বপ্ন বুকে নিয়ে আবারও বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে অনেকেই তবে ভিন্ন আঙ্গিকে।

সারা পৃথিবীকেই করোনাভাইরাস তার ভয়ংকর থাবায় গ্রাস করেছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউতো আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত লন্ড ভন্ড প্রায়। বাদ যায়নি আমাদের বাংলাদেশও। করোনার কারণে এখনও আমাদের দেশে লকডাউন কার্যকর রয়েছে। করোনার প্রকোপ ঠেকাতে দূর পাল্লার গনপরিবহন বন্ধ। করোনা বিস্তার রোধে সরকার থেকে আহ্বান করা হয়েছে যার যার কর্মস্থলের জায়গায় থেকে ঈদ পালন করার জন্য। কিন্ত মানুষজনকে কিছুতেই ঠেকানো যাচ্ছেনা। ছুটি হবার সাথে সাথেই তারা বাড়ি ফেরার জন্য ছুটে চলেছেন। দৌলতদিয়া, শিমুলিয়া, মাওয়া ঘাটে মানুষের উপচে পরা ভিড়। মাইক্রোবাস, সিএনজি, অটো রিক্সা, পিকআপ ভাড়া করে রওনা দিয়েছেন। নদীপথের লোকজনকে দেখা যাচ্ছে জীবনের বাজি রেখে বিশাল নদীপথ পাড়ি দেয়ার জন্য ট্রলারে উঠে পরেছেন। কেউ আবার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে বাড়ির পথে রওনা দিয়েছেন। এর মধ্যে দুর্ঘটনার কবলে পরছেন অনেকে। আজও শিমুলিয়া ঘাট থেকে ছেড়ে আসা ফেরি শাহ-পরান বাংলাবাজার ঘাটের পৌঁছানোর আগ মুহূর্তে যাত্রীদের চাপে ও হিটস্ট্রোকে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

করোনার ভয়, জীবনের ঝুকি কিছুই যেন তাদের থামাতে পারছেনা। করোনাকালীন বিধি নিষেধের তোয়াক্কা না করে মানূষ যেভাবে দল বেধে গ্রামের দিকে ছুটছেন যা আমাদের দেশের সবার জন্য অনেক বড় অশনিসংকেত। অনেকেই বুঝতে পারছেন না এর ফলে তারা নিজেদের সাথে সাথে পরিবারের সবার জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলছেন।

সারা বছর এত কষ্ট করে কি লাভ? যদি আমার নিজের জন্য পরিবারের বাকী সবাই মৃত্যু ঝুকিতে পড়ে। প্রশ্ন কিন্ত থেকেই যাচ্ছে? করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে হলে নিজ থেকে সর্ব্বোচ্চ সচেতন থাকতে হবে। যদি এভাবে আমরা করোনাকে অবহেলা করতে থাকি তাহলে আমাদের সবার জন্য অপেক্ষা করছে ভয়াবহ বিপদ।

মন্তব্যসমূহ (০)


Lost Password